ঢাকা: শারীরিক স্বাস্থ্য এবং মানসিক স্বাস্থ্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এটা নিঃসন্দেহে প্রমাণিত যে দুশ্চিন্তা থেকে শরীরের বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি।
মানসিক সমস্যা মানুষের খাওয়া-দাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম, ঘুম, নিরাপদ যৌনাভ্যাস এমনকি চিকিৎসা গ্রহণকেও প্রভাবিত করে। আর এতে ঝুঁকি বাড়ে শারীরিক রোগের।
শুধু তাই নয় মানসিক অ-স্বাস্থ্য বেকারত্ব, পরিবার ভেঙে যাওয়া, দারিদ্র, মাদক সেবন ও এসবের সঙ্গে জড়িত অপরাধের মূল কারণ। খারাপ মানসিক স্বাস্থ্য রোগ প্রতিরোধেও ব্যাঘাত ঘটায়।
অবসাদগ্রস্ত রোগীরা অন্য অবসাদহীন রোগীদের তুলনায় বেশি ভোগেন। তাই দীর্ঘকালীন রোগ, যেমন ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হৃদরোগ ইত্যাদি অবসাদগ্রস্ততার ঝুঁকি বাড়ায়।
মানসিক স্বাস্থ্যের প্রসঙ্গে অবধারিতভাবে চলে আসে মাদকাসক্তির কথা। মাদকাসক্তি একদিকে ধ্বংস করছে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে, তৈরি করছে নানাবিধ মানসিক ও সামাজিক সমস্যা। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে পরিবারের সদস্যদের রয়েছে নানা লুকোছাপা, চিকিৎসা নিয়ে আছে নানা সীমাদ্ধতা। তাই আমাদের মেধাবী ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মাদকের করালগ্রাস থেকে বাঁচাতে মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে আরও বেশি নজর দিতে হবে।
মানসিক স্বাস্থ্যের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ শিশু মানসিক স্বাস্থ্য। জন্মের সময় অসাবধানতা, অপুষ্টি, শৈশবের নানা রোগের সংক্রমণ, মাথায় আঘাত এবং জন্মগত নানা ত্রুটি এবং শিশুর প্রতি পরিবারের সদস্যদের যথোপযুক্ত আচরণ না করার কারণে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে। এই শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে নানা বিভ্রান্তির পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন সংস্থার উদ্দেশ্য প্রণোদিত প্রচারণা। সাধারণ অসহায় মানুষের আবেগকে পুঁজি করে শিশু মানসিক স্বাস্থ্যকে স্বাস্থ্য সেবাখাত থেকে আলাদা রাখার অংশ হিসেবে শিশুর বিভিন্ন মানসিক সমস্যাকে দেখানো হচ্ছে যে সেটা কোনও রোগ নয়। এভাবে প্রকৃত চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তি নানাভাবে বিঘিœত হচ্ছে। এই অবস্থা দূর করার জন্য প্রয়োজন জনসচেতনতা এবং সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণ। কেবলমাত্র প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যায় মানসিক স্বাস্থ্যকে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে সেটি অর্জন করা সম্ভব।
অনেকে মনে করেন, মানসিক দুর্বলতা ফেরানো যায় না। আবার অনেকে মনে করেন, মানসিক দুর্বলতার চিকিৎসার জন্য যেসব ওষুধ দেওয়া হয় তার অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে, যাতে মানুষ নেশাগ্রস্ত হয়ে যায়। আবার কেউ মনে করেন এসব ওষুধে সমস্যা দূর নয়, শুধু ঘুম বাড়ায়। আর তাই রোগীকে আরও বিপদের দিকে ঠেলে দেয়। অনেকের ধারণা মানসিক চিকিৎসা করাতে গেলে লোকে পাগল ভাবতে পারে।
অন্যদিকে, আচরণগত সমস্যার কারণে রোগী নিয়ে অনেক অভিভাবকরা প্রথমে আসেন হেলথ সেন্টারে। কিন্তু সেখানে সমস্যা শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। বেশিরভাগ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ না থাকায় এমনটি ঘটে থাকে। এটি ক্লিনিক্যাল বাধা। দৈহিক স্বাস্থ্য সেবাদানকারী এবং মানসিক স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যেও সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। দেহ-মন যদিও একসূত্রে গাঁথা, মনকে আলাদা করে রাখার কারণে এমনটি ঘটছে। এটি হচ্ছে আর্গানাইজেশনাল বাধা। নীতি নির্ধারণী এবং অর্থনৈতিক বাধাও রয়েছে প্রকটভাবে। এসব বাধা দূর করে মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার আর কোনও বিকল্প উপায় নেই। এই অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসার ব্যয়ভার কমে যাবে, সহজে সেবা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত হবে। সর্বোপরি রোগীদের মানবাধিকার রক্ষা করা সম্ভব হবে। অন্যথায় অমানবিক পরিস্থিতির শিকার হতেই থাকবে মানসিক রোগীরা।
মানসিক অসুস্থতার সঙ্গে জড়িত সামাজিক ও আর্থিক মূল্য মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিকরণ এবং মানসিক রোগের নিবারণ ও চিকিৎসার সম্ভাবনার দিকে লক্ষ্য বিস্তার করে। এইভাবে মনসিক স্বাস্থ্য ব্যবহারের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং শারীরিক স্বাস্থ্য ও জীবনমানের ভিত্তি।
আজ ১০ অক্টোবর, বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। মানসিক রোগ বলতে কিন্তু পাগলামো বোঝায় না। শরীরের আর দশটা রোগের মত মানসিক সমস্যার চিকিৎসাও প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১১