ছোট্ট দোকান, সরু গলি।
আঁকা-বাঁকা রাস্তা।
চা, কলা, পাউরুটিতে
সকালের নাস্তা।
ছোট জানালা, কাঠের চকি,
টিনের চালা, অন্ধকার ঘর।
এই ঘরেই বসত করে
তিনজন ব্যাচেলর।
উপরের কবিতা পড়েই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন ব্যাচেলরের লাইফস্টাইল। প্রায় দুই কোটি জনসংখ্যা নিয়ে আমাদের স্বপ্নের ঢাকা। আর এতগুলো মানুষের মধ্যে ব্যাচেলরের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তাই ঢাকা শহরকে অনেকে ব্যাচেলরের শহর বলেও চেনে।
ব্যাচেলররা সাধারণত কিছুটা অগোছালো হয়। কিন্তু আপনার অগোছালো ব্যাচেলর জীবনটাও সুন্দর আর সতেজ করে তুলতে পারেন খুব সহজেই। শুধু প্রয়োজন আপনার নিয়মিত কয়েকটি কাজের পরিবর্তন। তাহলেই দেখবেন সব ঠিকটাক। আপনার ঘরে এসে কেউ বুঝুতেই পারবে না এটা ব্যাচেলর না ফ্যামিলি বাসা। তবে পরিপাটি থাকতে সবসময় নিজের কাজকে গুছিয়ে রাখার চেষ্টা করা ভালো। মনে রাখবেন ব্যাচেলরদের কিছু বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে৷
বিশ্বাসযোগ্যতা
ব্যাচেলর থাকলে নানা রকম প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় তাই এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে হবে নিজেকে। সমাজের সব স্তরের মানুষই যেন আপনাকে বিশ্বাস করতে পারে সেভাবে নিজেকে প্রস্তুত করুন। কারণ আপনার কাজ নিয়ে সংশয় কিংবা সন্দেহ জাগে এমন পরিবেশ-পরিস্থিতি তৈরি করলে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
প্রস্তুতি
যারা পড়াশোনার কারণে কিংবা চাকরির জন্য ব্যাচেলর জীবনযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কিন্তু বুঝে উঠতে পারছেন না কত টাকা লাগতে পারে জীবনযাপনে। আবার পরিবেশেই বা কেমন হয়, কেমন করেই বা খুঁজে নেবেন প্রয়োজনীয় মেস কিংবা কর্মজীবী হোস্টেল৷ এতকিছু না ভেবে ভবিষ্যত কর্মপন্থায় এগিয়ে যেতে প্রস্তুতি নেন।
ব্যাচেলর বাসা
ব্যাচেলরের বাসা খোঁজাটাই সবচেয়ে কঠিন কাজ। সাধারণত বাড়িওয়ালারা ব্যাচেলরদের বাসা ভাড়া দিতে চান না। তবে ঢাকা শহরের বেশকিছু এলাকায় ব্যাচেলর বাসা পাওয়া যায়। যেমন- শান্তিনগর, মগবাজার, মালিবাগ, আজিমপুর, লক্ষ্মীবাজার, ওয়ারী, মোহাম্মদপুর, পান্থপথ, তেজগাঁও, কাঁঠালবাগান, আজিজ মার্কেট, কল্যাণপুর, মিরপুর, যাত্রাবাড়ি, বাসাবো, খিলগাঁও। এসব এলাকায় ঢুকার পথেই বিভিন্ন দেয়ালে অথবা মসজিদগুলোর পাশে দেখবেন সাঁটানো আছে টু-লেট। তা দেখে যোগাযোগ করলে পেয়ে যেতে পারেন আপনার কাক্সিক্ষত সিট, রুম অথবা বাসা৷ তবে একটা ব্যাপার খেয়াল রাখবেন- বাসা দেখার সময় অবশ্যই মার্জিত হয়ে যাবেন।
আসবাবপত্র
বাসাতো পেয়ে গেলেন। এবার তো তা গুছাতে হবে। আপনার রুমকে সুন্দরভাবে সাজাতে হলে প্রয়োজন হবে একটি খাট, ড্রেসিং টেবিল, আলনা আলমারি অথবা ওয়ারড্রব, চেয়ার-টেবিল। যার মধ্যে খাটের দাম ২ হাজার থেকে শুরু। ড্রেসিং টেবিল সাড়ে ৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার, আলনা ৫শ থেকে সাড়ে ৪ হাজার, আলমারি ৩ হাজার থেকে শুরু, ওয়ারড্রব সাড়ে ৪ হাজার থেকে শুরু, ভালো চেয়ার-টেবিল সেট এক হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকায় কিনতে পাবেন। আর এগুলো কিনতে পাবেন পান্থপথ, কারওয়ান বাজার, মিরপুর, শেওড়াপাড়া, সেগুনবাগিচা, সায়েদাবাদ, নিউমার্কেট, গুলশান, নতুনবাজার, নয়াবাজারসহ বিভিন্ন আসবাবপত্রের শোরুমে।
ঘর গোছানো
বাসা সাজাতে শুধু আসবাবপত্র হলেই তো আর হবে না। এগুলোর জন্য প্রয়োজন আরো বেশ কিছু উপকরণ। যেমন বিছানায় ঘুমানোর জন্য চাই তোষক, জাজিম, লেপ, বালিশ, কাঁথা, বেড কভার, মশারি ইত্যাদি৷ বিছানার চাদর দেড়শ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামে আপনি কিনতে পারবেন। বালিশ জোড়াপ্রতি ২শ থেকে ৮শ, তোষক সাড়ে ৩শ থেকে ২ হাজার, লেপ ৪শ থেকে ১২শ, জাজিম ২ হাজার থেকে ৫ হাজার, মশারি দেড়শ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। আর এগুলো কিনতে আপনাকে যেতে হবে নিউমার্কেট, ফকিরাপুল, শান্তিনগর, ইসলামপুর, সদরঘাট, গুলিস্তানসহ ঢাকা শহরের বেশকিছু মার্কেটে।
মানিয়ে নেওয়া
ব্যাচেলর মানেই এক অন্যরকম জীবন। অপরিচিতদের সঙ্গে একই ঘরে এমনকি একই বিছানায় ঘুমাতে হবে আপনাকে। বিভিন্ন জেলার নানা রকম মানসিকতার মানুষ ব্যাচেলর বাসাগুলোতে একসঙ্গে বসবাস করে। এই ব্যাচেলর লাইফে সবার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা না থাকলে মহাবিপদে পড়তে হয়। তাই নিজেকে সেভাবেই প্রস্তুত করতে হবে।
বাজার
বাড়িতে কখনো বাজার করেননি, তাতে কি? ব্যাচেলর থাকতে হলে আপনাকে নিয়মিত বাজার করতেই হবে। সাধারণত ব্যাচেলর বাসাগুলোতে একেকজনের উপর পর্যায়ক্রমে বাজারের দায়িত্ব থাকে। দেখে নিন আপনার বাজারের সময়টা কখন। বাজার করার সময় অবশ্যই সবাইকে জিজ্ঞেস করুন কার কী পছন্দ। তাদের পছন্দ অনুসারে বাজার করলে দেখবেন সব ঠিক। আর বাজারে গিয়ে যাই কিনুন না কেন, একটু দামাদামি করে কিনবেন। কারণ দোকানিরা নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম চেয়ে থাকে।
ম্যানেজারি
প্রত্যেক মাসে বর্ডারদের মধ্য থেকে একজন ম্যানেজার হওয়ার জন্য মনোনীত হয়। এই প্রক্রিয়াটা অনেকটা সাইক্লিং আকারে হয়ে থাকে। পালাক্রমে সবাইকেই এ দায়িত্ব পালন করতে হয়। কে কত টাকার বাজার করলো, কার কত মিল হলো এই হলো ম্যানেজারের প্রধান কাজ। এছাড়া কে কোনদিন বাজার করবে, কি বাজার করবে, প্রতিদিনের হিসাব রাখাও ম্যানেজারের কাজ। আর মাস শেষে একখানা ফিনানসিয়াল স্টেটমেন্ট তৈরি করা ম্যানেজারের সবশেষ কাজ।
কাপড় ধোয়া
সাধারণত ব্যাচেলররা নিজেদের কাপড় নিজেরাই ধুয়ে থাকেন। কাপড় ময়লা হলে দেরি না করে তাড়াতাড়ি ধোয়ার চেষ্টা করুন। ময়লা বা দাগ বেশি সময় থাকলে সেগুলো দূর করতে আরও বেশি কষ্ট ও সময় লাগবে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ মনকে সতেজ রাখে। তাই ব্যাচেলরদের ঘরও পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন। সাধারণত ব্যাচেলরদের ঘরগুলো অপরিষ্কার থাকে। আর এর মূল কারণ অলসতা। ঘর নোংরা থাকলে, ঘরের পরিবেশ যেমন নষ্ট হয়, তেমনি অপরের জন্যও অস্বস্তিকর। অথচ যে সময়ে আপনি লুঙ্গি ও শার্টটি খুলে টেবিলে ও চেয়ারে রেখেছেন, সেই সময়ের মধ্যেই তা আলনায় ভাজ করে রাখতে পারেন অবলিলায়। দেখবেন রুমের পরিবেশটা একটু সচেতনতায় অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। আসলে জিনিসপত্র যত্রতত্র না রেখে যথাস্থানে রাখলেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবে আপনার ঘর।
রান্না
ব্যাচেলরদের আরেকটি গুন থাকা খুবই জরুরি। আর তা হচ্ছে রান্নার ঠেকা কাজ চালিয়ে নেওয়া। রান্নার লোক দুই এক বেলা না এলেও বেশি সমস্যা হবে না, যদি নিজেই সহজ কিছু খাবার তৈরিতে পরদর্শী হতে পারেন।
নির্মল আড্ডাস্থল
শতকষ্টের পর সারাদিনের কাজকর্ম শেষ করে বাসায় ফেরার পর ব্যাচেলরদের চলে নির্মল আড্ডা। যা ব্যাচেলর জীবনের প্রধান খোরাক। আবার এ আড্ডা থেকেই বেরিয়ে আসে সৃজনশীল কাজ। চলে বর্তমান রাজনীতি নিয়ে তুমুল বিতর্ক, প্রেম নিয়ে মিষ্টি মধুর কথাবার্তা, কখনো উদ্দেশ্যহীনভাবেই অপ্রাসঙ্গিক আড্ডা। যা থেকে আনন্দের সঙ্গে সময় কাটানোর পাশাপাশি অনেক নতুন বিষয়ও উঠে আসে। অনেকেই পেয়ে যান ব্যক্তিগত নানা সমস্যা সমাধানের উপায়। সব মিলিয়ে ব্যাচেলরদের আড্ডা যেন নির্মল আনন্দের মিলনমেলা।