আজ থেকে ছয় বছর আগে পিউ প্রথমবারের মত মা হয়ে হাসপাতাল ছেড়ে বাসায় ফিরেছে। সে তার মা হওয়ার বিহবলতায় রাত জেগে সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
কি অপার্থিব মায়া ! ছেলেটা যখন পিউ এর দিকে চোখ মেলে তাকায় তখন পিউ আস্তে আস্তে বলতে থাকে- বাবা সোনা তুই কি বুঝতে পারছিস আমি তোর মা? পিউ এর বিশ্বাস ছেলেটা এই ব্যাপারটা বুঝতে পারছে না। তাকে বুঝানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে পিউ। ছেলেটা চোখ পিট পিট করে তাকায়। যেন সেও চিন্তায় পড়ে গেছে ! পরদিন সকালে ছেলেকে পাশে শুইয়ে রেখে চা নাস্তা খেতে খেতে খবরের কাগজ পড়ছে পিউ। হঠাৎ করে তার দৃষ্টি একটি ছবির দিকে আটকে যায়।
ছবিটি দেখে চোখ দিয়ে টপ টপ করে গড়ে পড়তে থাকে পানি। সে তার সন্তানের দিকে তাকিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে। ছবির বাচ্চাটাও কারো সন্তান। দূর্ভাগা বাবা মা হয়ত এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে তাকে একা ফেলে রেখে অনাহারে আগেই মারা গেছে। ছেলেটিও অনাহারে হাড্ডিসার কঙ্কাল। পিউ এর চোখের সামনে ভেসে উঠল তার সন্তানের মুখ, অনাহারে মলিন, কেউ তার দিকে তাকাচ্ছে না, মুখে খাবার তুলে দেওয়ার মত আশে পাশে আপন কেউ নাই, ছেলেটা মা মা বলে ডাকছে, কিন্তু অন্য কেউ তো তার মা না। পিউ সমানে চোখ মুছছে। এটা দেখে ওর শাশুড়ি জিজ্ঞাসা করেছিল- কি হয়েছে মা ? খুব কি ব্যথা হচ্ছে ? পিউ মাথা নেড়ে না বলেছিল। কি করে বলবে সে কি প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করছে সমস্ত অস্তিত্বময়। তার সামনের হাড্ডিসার কঙ্কাল শিশুটি তো আর কেউ নয় এ তো তার সন্তান-রংধনু!
কত খাবার আমরা কতভাবে নষ্ট করি। আর সারাবিশ্বে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ খাদ্যাভাবে মারা যায়। আমাদের দায়িত্বশীল আচরণে বেঁচে যেতে পারে কারও সন্তান, কারও আপনজন। আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মানূষের এই সীমাহীন কষ্ট লাঘব করি। অনাহারী মানুষের মুখে খাদ্য তুলে দেই। আমার আপনার সন্তান থাকুক দুধভাতে।
শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে, কোরবানির প্রকৃত অর্থ যেন সুপ্রতিষ্ঠিত হয় আমাদের সমাজে।