জামদানি আমাদের আভিজাত্যর একটি অংশ। বাঙালি নারীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে জামদানি।
সবার কাছে একটি জামদানি রাখার যে ইচ্ছে তার মূল অন্তরায় থাকে এর যত্ন। জামদানি মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে সুতি এবং হাফসিল্ক তাই যত্ন না নিলে খুব সহজেই নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কীভাবে নেবেন প্রিয় শাড়িটির যত্ন:
শাড়িতে ফলস লাগানো
জামদানি শাড়ি কেনার পরেই এর পাড়ে ফলস লাগিয়ে নিতে হবে। এতে করে পাড় ভাঁজ হবেনা, ফেটে যাবেনা এবং কুচি গুলোও সুন্দর থাকবে। অনেক সময় দেখা যায় এক্সক্লুসিভ শাড়ির আঁচলেও অনেকে নেটের ফলস লাগিয়ে থাকে, এতে করে শাড়ি নষ্ট হওয়ার প্রবনতা কম থাকে।
শাড়ির সঠিক ভাঁজ
জামদানি তুলে রাখার সময় ভাঁজটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অন্য শাড়ি চার ভাঁজ করে মাঝখানে একটা ভাঁজ দিয়ে আরেক ভাঁজে ভেঙে রেখে দেই, কিন্তু জামদানি কখনও এভাবে রাখা যাবে না। এমন কি মাঝখানে ভেঙে হ্যাংগারে ঝুলিয়ে রাখাও ঠিক না। যেহেতু জামদানি হাতে বুনন তাই বুননের একটা সুতা এদিক সেদিক হলেই শাড়ি ফেঁসে যেতে পারে। জামদানি ভাঁজে আলাদা নিয়ম আছে, প্রথমে দুই ভাঁজ দিতে হবে নরমাল শাড়ির মতোই। এরপর একটা পাতালি ভাঁজ দিতে হবে। তারপর মাঝখানে ভেঙে একটা ভাঁজ দিয়ে হ্যাংগারে ঝুলিয়ে রাখতে হবে অথবা দুইপাশ থেকে ছোট ছোট ভাঁজ দিয়ে একটা আরেকটার ভেতরে দিয়ে দিতে হবে। জামদানি কখনও অন্য শাড়ির নিচে রাখা যাবে না। আলমারিতে তুলে রাখার সময় সাদা কাগজের প্যাকেটে রেখে দিলে শাড়িতে ফাংগাস পরে না। এর জন্যই মার্কেটে শাড়ির দোকান গুলোতে সাধা প্যাকেটের ভেতর শাড়ি রেখে দেন, যেন ফাংগাস পরে নষ্ট হয়ে না যায়। মাঝে মাঝে এই ভাঁজ পরিবর্তন করে রাখতে হবে, কারণ বেশি দিন এক ভাঁজে থাকলে শাড়ি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
পানি থেকে দূরে রাখতে হবে
জামদানিকে সব সময় পানি থেকে দূরে রাখতে হবে। আমরা যেভাবে সচারাচর পানি দিয়ে কাপড় ধুয়ে থাকি জামদানির ক্ষেত্রে এটা করা যাবেনা। কারণ জামদানি তৈরির সময় যে মাড় ব্যবহার করা হয় সেখানে যদি পানি লাগে তাহলে সুতাটা ছড়িয়ে যায়, এতে করে জামদানি শাড়ির ক্ষতি হয়।
রোদে শুকানো
মাঝে মাঝে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে, এতে করে শাড়ি ভালো থাকবে। তবে মনে রাখতে হবে রোদ থেকে এনেই আলমারিতে তুলে রাখা যাবেনা। মাঝে মাঝে তুলে রাখা জামদানি রোদে দিতে হবে এবং সময় সময় তা উল্টিয়ে দিতে হবে, যেন দুই দিকে সমান রোদ লাগে। বৃষ্টি পানি পরলেও ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিতে হব।
কাঁটা ওয়াশ
অনেকে মনে করেন জামদানিতে ড্রাই ওয়াশ করলে ভালো, এটা ভুল কারণ ড্রাই ওয়াশের পর যে শাড়ি আয়রন করা হয় এতে জামদানির শাড়ি নষ্ট হয়ে যায় । জামদানি যদি নষ্ট হয়ে যায় বা ফ্যাকাশে হয়ে যায়, তাহলে কাঁটা ওয়াশে দিতে হবে এবং যারা জামদানি তৈরি করে তাদের কাছেই কাঁটা ওয়াশের জন্য দিতে হবে। অন্য কারো কাছে দিলে হবে না, কাঁটা ওয়াশ একমাত্র যারা জামদানি তৈরি করে তারাই করতে পারেন। প্রয়োজন হলে তারাই রিপু করে ঠিক করে দেবেন।
সব সময় ব্যবহার করতে হবে
শখের জামদানি যখন কোনো অনুষ্ঠান হবে তখনই পরা হয়, কিন্তু জামদানি যত বেশি পরা হবে তত ভালো থাকবে। তাই মাঝে মাঝে জামদানি পরতে হবে। তাহলে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে।
নতুন করে রং করে নেওয়া
অনেক সময় দেখা যায় জামদানি বেশি ব্যবহারের ফলে রং নষ্ট হয়ে যায়। জামদানিতে কোনো রকম লিকুইড কিছু পরে দাগ লাগলে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে টেলকম পেউডার ছড়িয়ে, রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। রং নষ্ট হওয়া এবং দাগ লাগার জন্য জামদানিতে নতুন ডিপ কালারের রং করে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে এক কালার শাড়ি গুলোতেই রং করলে ভালো হয়। কারণ মাল্টিকালারের শাড়িতে রং করা যায় না।
সঠিক যত্নের মাধ্যমেই প্রতিটি শখের জামদানি স্মৃতিময় হয়ে থাকুক সবার মাঝে।
লেখা: কাকলী তালুকদার
স্বত্বাধিকারী: Kakoly's Attire
বাংলাদেশ সময়: ১১০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০২০
এসআইএস