বাঙালির ঐতিহ্যের সঙ্গে নানা ধরনের কাপড়ে তৈরি পোশাক মিশে রয়েছে। খাদী, তাঁত, জামদানি মসলিনের মতো আরও একটি কাপড় রয়েছে যার নাম "খেশ"।
বাঙালি হিসেবে আমরা সব সময় আমাদের ঐতিহ্যকে নিজের মধ্যে লালন করতে গর্ববোধ করি। খেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় যে বিষয় তা হলো, খেশের সঙ্গে মিশে রয়েছে কবি গুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম।
" বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে" তার উদ্যোগের ফলেই শিল্পীর হাতের ছোঁয়ায় খেশে নান্দনিক সব ডিজাইন ফুঁটে ওঠে। বীরভূম জেলার তাঁতিদের মতে, তাদের পুর্বপুরুষদের খেশের কাজের হাতেখড়ি হয়েছিল শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে, শিল্প সদনে, বিশ শতকের প্রাথমিক পর্যায়ে।
রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর খেশের সঙ্গে সরাসরি কতটুকু জড়িয়ে আছেন, এতে একেকজনের একেক মতামত থাকলেও তার অবদান সব সময় রয়ে যাবে। কারণ খেশ শুধু সৌন্দর্য বা ঐতিহ্যর দিক থেকেই নয় পুরাতন কাপড় দিয়ে এরকম সুনিপুণ কাজের ফলেই আজকে অনেক তাঁতি খেশ কাপড় তৈরি করে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করছেন।
পুরাতন কাপড় দিয়ে খেশ তৈরি হয় বলে এই শাড়ি পরতেও আরাম। খেশ দিয়ে শুধু শাড়িই নয় ব্যাগ, চাদর, পর্দা ইত্যাদি তৈরি হয়ে থাকে। একটি সিঙ্গেল বেডের চাদরের জন্য ছয়টি কাপড় লাগে আর ডাবল বেডের জন্য ১২টি। খেশ শাড়িগুলো এক রঙের হয়ে থাকে। খেশের মূল বৈশিষ্ট্য হলো পুরাতন কাপড় ছাড়া এটা তৈরি করা যাবেনা। প্রতিদিন একজন তাঁতি মাত্র দু’টি শাড়ি বুনতে পারেন।
বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায় খেশ শাড়ি তৈরি হয়ে থাকে। তাঁতিরা তাদের কাজের মাধ্যমে নান্দনিক সব ডিজাইন ফুঁটিয়ে তুলছেন শাড়িতে। পুরাতন কাপড়ের এমন কার্যকরী ব্যবহার প্রশংসার দাবিদার। অনেকই আছেন যাদের খেশ শাড়ি সম্পর্কে ধারণা নেই। কিন্তু আমাদের দেশের ভৌগোলিক দিক যদি চিন্তা করি খেশ শাড়ি পরিধানে আমরা সাচ্ছন্দ্য বোধ করবো কারণ পুরাতন সুতি কাপড় দিয়ে খেশ শাড়ি তৈরি হয়ে থাকে এবং দেখতেও অনেক সুন্দর। খেশ দিয়ে শুধু যে শাড়ি তৈরি হয় তা কিন্তু না খেশের কুর্তি, থ্রিপিস, ব্যাগ, চাদর, বেডশিট ইত্যাদি তৈরি করা যায়।
খেশের প্রচারের ফলে তাঁতিদের দিন ফিরে আসবে এবং তারা আগ্রহ নিয়ে তাদের কাজে নৈপুণ্য ফুঁটিয়ে তুলবেন। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা তাঁতিদের ধরে রাখতে হলে এবং বাঙালির ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে হলে খেশের প্রচার বৃদ্ধি অবশ্যই প্রয়োজন। নয়তো এক সময় আমরা এই ঐতিহ্যকে হারিয়ে ফেলবো। খেশ বাঙালির গর্ব এবং একজন বাঙালি হিসেবে আমি আরও বেশি গর্বিতবোধ করি কারন আমার উদ্যোগ খেশ নিয়ে। দেশি পণ্যের একজন উদ্যোক্তা হিসেবে এক বছর পরে আমি আমার খেশ পণ্য সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে চাই। আগামী এক বছর পর খেশ নিয়ে অনেক ধরনের ফিউশন আসবে যেন তরুণ প্রজন্মের কাছে তা গ্রহণ যোগ্যতা পায় এবং আমি চাই এক বছর পর আমার খেশ পণ্য দেশের ৬৪ জেলায় পৌঁছে যাবে।
বর্তমান বিশ্বে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি সবচেয়ে বড় কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে। ই-কমার্সের মাধ্যমে খুব সহজে একজন ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা তার পণ্য সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে পারছেন। তাই যেকোনো পণ্য প্রচারে ই-কমার্সের ভূমিকা অপরিসীম। যারা অনলাইনে ফেসবুক ভিত্তিক পেজ খুলে ই-কমার্সের মাধ্যমে নিজেদের বিজনেস করছেন তারা তাদের উদ্যোগকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছেন এবং তাদের পণ্যের প্রচারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যারা খেশ নিয়ে অনলাইন ভিত্তিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তাদেরকে খেশ পণ্য সম্পর্কে নিজের পেজ এবং ওয়েবসাইটে লিখালিখি করতে হবে এতে করে খেশ পণ্য সম্পর্কে সবাই জানতে পারবে এবং আরও অনেকে জানতে আগ্রহী হবে। ই-কমার্সের মাধ্যমে দেশের ৬৪ জেলায় যদি খেশ পণ্যর ক্রেতা তৈরি হয় তাহলে এর চাহিদা বৃদ্ধি যেমনি বৃদ্ধি পাবে প্রচারও বৃদ্ধি পাবে।
খেশ আমাদের ঐতিহ্য এবং খেশ পণ্যের দাম হাতের নাগালে থাকাতে এর কদর দিন দিন বেড়েই চলেছে। আশা করি আগামী দিনে ই-কমার্সের মাধ্যমে খেশ পণ্য দেশের বাহিরেও সাড়া ফেলবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হব এবং সেই সঙ্গে দেশীয় ঐতিহ্য হিসেবে দেশের বাহিরেও আমরা খেশ নিয়ে গৌরব অর্জন করতে পারবো।
লেখা: নিগার ফাতেমা
স্বত্বাধিকারী: Ariya's Collection
বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২০
এসআইএস