ঢাকা: আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানা রকম ঘটনা ঘটে। নানা কারণেই আমাদের মনে বিষাদ, রাগ, দুঃখের কালো মেঘ আসতে পারে।
পরিকল্পনা করতে ও সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা
জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয় ও পরিকল্পনা করতে হয়। অনেক সময় আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হয়।
আবেগগত সমস্যা:
মনে তীব্র আবেগ জমে থাকলে তা আমাদের দৈনন্দিন কাজে অসুবিধার সৃষ্টি করতে পারে। কারো কারো ছোটখাট বিষয়গুলোতে তীব্র দুশ্চিন্তা কাজ করে, কারো কারো বেশির ভাগ সময় মন খারাপ থাকে, অনেক সময় একই চিন্তা বা একই কাজ বাধ্যতামূলকভাবে বার বার করতে হয়।
রাগ মোকাবিলা:
রাগ একটি স্বাভাবিক আবেগ হলেও অনেক ক্ষেত্রে রাগ অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়, দৈনন্দিন ও পেশাগত কাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।
শারীরিক সমস্যা:
বিভিন্ন গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, অনেক শারীরিক লক্ষণের জন্য মানসিক কারণ দায়ী। প্রায়ই দেখা যায় বিষন্নতায় আক্রান্ত ব্যক্তি ডাক্তারের কাছে গেছে শুধু শারীরিক সমস্যা যেমন- মাথাব্যথা, ঘুম, ব্যথা, দুর্বলতা ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে।
ক্রনিক স্বাস্থ্য-সমস্যা:
ডায়বেটিকসের মতো ক্রনিক স্বাস্থ্য সমস্যা মানুষের মধ্যে অনেক স্ট্রেস তৈরি করে।
মানসিক চাপ মোকাবিলা:
সাধারণত মানসিক চাপগুলো আমরা নিজেরাই মোকাবিলা করতে পারি। কিন্তু এরপরও কিছু ক্ষেত্রে চাপ মোকাবিলা করতে অসুবিধা বোধ করি কিংবা এমনভাবে মোকাবিলা করি তাতে হিতে বিপরীত হয়ে যায়।
পেশা গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত:
আমাদের দেশে দেখা যায় বাবা-মায়েরা ছেলেমেয়েদের ওপর নিজেদের পছন্দমতো পেশা চাপিয়ে দেন। কিন্তু ছেলে/মেয়ের কোনো পেশাতে আগ্রহ বা কোনো পেশা গ্রহণ করলে তার ভালো করা সম্ভাবনা আছে তা জেনে পেশা গ্রহণ করলে সফলতা অর্জনের সম্ভাবনা অনেক বেশি।
মানসিকভাবে আঘাত বা দুর্ঘটনা:
কোনো দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হলে বা দেখলে বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। দৃশ্যগুলো বার বার মনে আসা, ওই সব জায়গা এড়িয়ে চলা, মনে পড়লে তীব্রভাবে কষ্ট লাগা প্রভৃতি ক্ষেত্রে সাইকোথেরাপি অত্যন্ত কার্যকর।
মনোযৌন সমস্যা:
যথাযথ যৌনশিক্ষা না থাকায় বিভিন্ন ধরনের ভুল ধারণা থাকায় তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বিভিন্ন যৌন সমস্যা ও অসন্তুষ্টি সৃষ্টি হয়। যৌন সমস্যার বেশির ভাগই শারীরিক নয়, বরং মানসিক কারণজনিত সমস্যা।
দাম্পত্য ও পারিবারিক সম্পর্ক সমস্যা:
জীবনের পরিক্রমায় নানা কারণে দাম্পত্য ও পারিবারিক সম্পর্কে কিছুটা ভাটা পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে কাউন্সেলিং নিতে হবে।
বিয়োগান্তক ঘটনা:
হঠাৎ করে কেউ মারা গেলে আমাদের তীব্র কষ্টের অনুভূতির সৃষ্টি হয়, যা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু দীর্ঘদিন তা থাকলে ও কাজকর্ম ব্যাহত হলে কাউন্সেলিং নেওয়াটা খুবই জরুরি।
আত্মহত্যার চিন্তা:
আত্মহত্যার চিন্তা এলে বা কেউ আত্মহত্যা করার কথা প্রকাশ করলে তা খুবই গুরুত্বসহকারে নেওয়া উচিত। তাৎক্ষণিকভাবে কোনো একটি প্রতিষ্ঠানে (যেমন : জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট) নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
মাদকাসক্তি:
মাদকাসক্তি থেকে বের হয়ে আসার জন্য কাউন্সেলিং জরুরি।
ঘুমের সমস্যা:
কোনো শারীরিক কারণ ছাড়াই ঘুমের সমস্যা হলে কাউন্সেলিং খুবই কার্যকর।
মানসিক অসুস্থতা:
যেকোনো ধরনের মানসিক অসুস্থতায় ওষুধের পাশাপাশি সাইকোথেরাপি নিলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়।
জীবনকে সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করে এগিয়ে নিয়ে যেতেই প্রয়োজন কাউন্সেলিং বা সাইকোথেরাপি। তবে, মনে রাখা দরকার এটা কোনো ম্যাজিক নয়, বরং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি।
[লেখক: তানজিল আহম্মেদ তুষার, চবির মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক]
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০২২
এএটি