চারপাশে এখন জ্বর, সর্দি,কাশি। সিজেনাল ফ্লু, করোনা, ডেঙ্গু নানা কারণে এই উপসর্গগুলোর উৎপত্তি।
১ জ্বর শুরু হওয়ার পরের বেলাতেই বা পরের দিনই জ্বর কেনো কমছে না, সেটা ভেবে অস্থির হওয়া যাবে না। দ্রুত জ্বর থেকে মুক্তি পেতে চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধ দ্বিগুণ পরিমাণে সেবন কিংবা একইসঙ্গে দুই ধরনের ওষুধ সেবন কোনো উপকারে আসবে না। বরং তা হতে পারে জ্বরের থেকেও বিপজ্জনক। বেশি ওষুধ খেলে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত কমে যাবে না। তবে এমনটা করলে শরীরের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে, বিশেষত, বৃক্কের।
২. একদিনে জ্বর কমিয়ে দেওয়ার কোনো মেডিসিন বা ম্যাজিক চিকিৎসকদের জানা নাই। ভাইরাস জ্বরে এন্টিবায়োটিক কোনো কাজে লাগে না। যদি না কোনো ইনফেকশনের সোর্স পাওয়া যায় যা অনেক সময় প্রকাশ পেতে তিনদিনও লেগে যায়। ভাইরাল জ্বরের সময়কাল ৩ থেকে ৫ দিন। ভাইরাল জ্বর মানে কম মাত্রার এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। টানা ১০২/১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট আসতে পারে এবং কমলেও তা ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইটএর নিচে নাও নামতে পারে।
৩. জ্বরের লক্ষণগত কিছু পার্থক্য জেনে রাখি। সর্দি জ্বর এবং ফ্লু’য়ের মধ্যে তফাৎ রয়েছে। ফ্লু হলে উপসর্গগুলোর মাত্রা তীব্র হয়, যা রোগীকে ঘায়েল করে দিতে পারে। সর্দি লাগলে নাক দিয়ে পানি পড়া, সাইনাসের ওপর চাপ পড়া, বুকে কফ জমা ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা হয়। তবে রোগী একেবারে ঘায়েল হয়ে বিছানায় পড়ে যায় না।
৪. শিশুদের ক্ষেত্রে,জ্বর হলে অরুচি এর প্রাথমিক কোনো চিকিৎসা নাই। সবার মতো আপনাকেও বুঝিয়ে শুনিয়ে অল্প অল্প করে পানি, তরল জাউ, স্যুপ, শরবত বা বাচ্চা যেটা খেতে চায় (এমন কিছু দেবেন না যা আবার বমি, পাতলা পায়খানা ঘটায়) তাই খাওয়াবেন। প্রসাব যেন অন্তত ৪ বার হয়। মুখে একদমই খেতে না পারলে, প্রসাব কমে গেলে, বমি বন্ধ না হলে বা খিচুনি হলে বাচ্চাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবেন।
৫. হালকা জ্বরে ( ১০০ থেকে ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট) গা মুছে দেবেন, মুখে ওষুধ খাওয়াবেন। একবার ওষুধ খাওয়ানোর পর আবার সিরাপ দিতে অন্তত ৪/৬ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। আর সাপোসিটারি দিতে হলে কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে।
৬. বেশি জ্বরে (১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের ওপরে গেলে) তাড়াতাড়ি জ্বর কমানোর প্রয়োজন হলে সাপোজিটার ব্যবহার করতে পারেন (যদিও এটা বাচ্চাদের জন্য অস্বস্তিকর), এতে জ্বর সাময়িকভাবে হয়তো ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের নিচে নামতে পারে তবে পুরোপুরি জ্বর চলে যাওয়ার সম্ভাবনা কমই প্রথম তিনদিনে। একটা সাপোসিটারি দেওয়ার আট ঘণ্টার মধ্যে আরেকটা সাপোসিটারি দিতে পারবেন না। তবে ৪/৬ ঘণ্টা পর সিরাপ দিতে পারেন।
৭. জ্বরের ওষুধ খাওয়ানোর চেয়ে শরীরের যত্ন নিন, ভেজা গামছা বা সুতি কাপড় দিয়ে গা মুছে দিন, গরম ও নরম খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করুন, সবচেয়ে বড় কথা বাচ্চাকে বিশ্রাম নিতে দিন। ভালো ঘুমাতে দিন, ঘুমের মধ্যে জ্বর থাকলেও তাকে ঘুম ভাঙিয়ে জ্বরের ওষুধ খাওয়ানোর দরকার নেই। এটা বড়দের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
৮. থার্মোমিটার দিয়ে মেপে জ্বর ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা বেশি পেলেই জ্বরের ওষুধ খাওয়াবেন। গায়ে হাত দিয়ে গরম লাগা, জ্বর ৯৮, ৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট; জ্বরের আগে শীত শীতভাব, অস্থির করা জ্বরের ওষুধ খাওয়ানোর কোনো কারণ হতে পারে না।
৯. বাচ্চাদের এসিডিটি কম হয়, তাই একদম সম্ভব না হলে, খালিপেটে জ্বরের ওষুধ দিতে পারবেন। বড়দের ক্ষেত্রে অবশ্যই গ্যাসের ওষুধ সহযোগে খাবেন।
১০. জ্বর হলে বাচ্চা এক আধটু বমি হতে পারে, কিছু জ্বরের ওষুধেও বাচ্চাদের বমি হয়। এসব ক্ষেত্রে বমির ওষুধ লাগে না, প্রয়োজনে জ্বরের ওষুধ পাল্টান। ওষুধ খাওয়ার ১০/১৫ মিনিটের মধ্যে বমি করলে ১৫/২০ মিনিট পর আবার ওষুধ টুকু খাওয়াতে হবে। সন্দেহ হলেই আশ-পাশে বিশেষজ্ঞ দেখিয়ে টেস্ট করে নেবেন। সাবধানে থাকুন ও সুস্থ থাকুন।
ডা. শেখ সাদিয়া মনোয়ারা উষা, মেডিক্যাল অফিসার, খুলনা সিভিল সার্জন কার্যালয়
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২২
এএটি