ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

লাইফস্টাইল

ফিরে এলো ‘খোলাজালি’

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০২২
ফিরে এলো ‘খোলাজালি’ সবার কাছেই বেশ পছন্দের নোয়াখালীর ঐতিহ্যবাহী খোলাজালি পিঠা। ছবি: বাংলানিউজ

ফেনী: গাছের পাতা বেয়ে টিনের চালে কুয়াশা পড়ার টপ টপ শব্দ, ঝিঁঝি পোকার ডাক। হালকা শীতে কাঁথা মুড়িয়ে এলিয়ে পড়ে শরীর, এক হয় দু’চোখের পাতা।

শেষ রাতে শীত আরো খানিক ঝেঁকে বসলে ঘুমটাও খানিক গাঢ় হয়।

সকালে ঘুম ভাঙ্গে রান্না ঘর থেকে ভেসে আসা আহ্বানে ‘পিঠা খেতে এসো’। চোখ মুছতে মুছতে চুলার পাশে গিয়ে দেখা হলো মাটির খোলায় খোলাজা (খোলাজালি) পিঠা। হেমন্তের শেষে শীতের আগমনে এমন আবহ গ্রামে।



ধানে এসেছে সোনালি আভা, শীত সমাগত। গ্রামে এখন সকালের নাস্তা দারুণ স্বাদের মুখরোচক খোলাজালি পিঠা আর মাংসের ঝোল। ক’দিন পরেই আসবে খেজুরের রস।  
ক্যারোলা খাবার দোসার মতো হলেও ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর অঞ্চলের খোলাজালি পিঠার রয়েছে নিজস্বতা।

দেখতে সুন্দর দারুণ স্বাদের এই পিঠা দেশের অন্য অঞ্চলে তেমনটা দেখাও মিলে না। এই পিঠা তৈরিতে রয়েছে আলাদা মুন্সীয়ানা। যা এ অঞ্চলের নারীরাই পারেন- অন্যরা তেমনটা অভ্যস্ত না।  

শীতের সকালে খোলাজা পিঠার সঙ্গে মাংসের ঝোল কিংবা খেজুর গাছের রস ভাবলেই জিভে জল এসে যায়। মাটির খোলায় জালি জালি হয় এই পিঠা- এ কারণেই নাকি এমন নাম।

ছাগলনাইয়ার শুভপুর গ্রামের গৃহিণী রাশেদা আক্তার কণা জানান, আগে মাটির চুলায় মাটির খোলাতেই এই পিঠা বানানো হতো। এখন অনেকে গ্যাসের চুলাতেও বানান। তবে মাটির চুলায় এ পিঠা বানাতে দারুণ হয়।  

এ গৃহিণী জানান, ঢেঁকিতে তৈরি করা চালের গুঁড়ির সঙ্গে গ্রামের গৃহস্থ বাড়িতে পোষা হাঁসের ডিম অথবা মুরগির ডিম দিয়ে এ পিঠা তৈরি করতে হয়। মুরগির ডিমের চেয়ে হাঁসের ডিম দিয়ে এই পিঠা বেশি ভালো হয়।  

এই পিঠা বানাতে প্রথমে চালের গুড়া ও পানি এবং পরিমাণ মতো লবণ মিশিয়ে পাতলা করে মিশ্রণ তৈরি কর নিতে হয়। মিশ্রণটি একটু পাতলা বা তরল করে তৈরি করতে হয় যেন খুব সহজে গড়িয়ে যায়। এরপর প্রয়োজন মতো ডিম ফেটে তা মিশিয়ে নিতে হয়। তবে মিশ্রণটি যেন পাতলা থাকে তা খেয়াল করতে হবে।


 
এবার মাটির চুলায় মাটির খোলা (এক ধরনের পাত্র) গরম করতে হবে। খোলার ওপর একটু তেল মাখিয়ে নিতে হবে। না মাখালেও হয়। এরপর সেই মিশ্রণটি খোলায় একটু ঢেলে চারদিক পুরু করে ছড়িয়ে দিতে হবে। একটি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। চুলার আগুনের তাপে কিছুক্ষণ পর তা শুকিয়ে এলে খুন্তি দিয়ে উঠিয়ে ফেললেই পিঠা তৈরি হয়ে গেল।  
 
খোলাজা পিঠা গরম গরম পরিবেশন করার মজাই আলাদা। এই পিঠা দেখতে রুটির মতো; তবে এর উপরিভাগে অনেক ছোট ছোট ছিদ্র বা জালি থাকে। এ কারণেই হয়তো এ পিঠার নাম খোলাজালি।  


 
গৃহিণীরা জানান, ডিম যদি একটু বেশি করে দেওয়া হয় তাহলে পিঠা পাতলা ও নরম হয়। খেতেও স্বাদ হয়। আর যদি ডিম না দিয়ে পাতলা না করে মোটা করে বানাতে চান তখন তা হয়ে যাবে চিতই। এটি খেতেও মন্দ নয়। খেজুরের রস কিংবা মাংসের ঝোলে খোলাজালির সমগোত্রীয় এ পিঠাটি খেতেও দারুণ হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০২২
এসএইচডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।