ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

লাইফস্টাইল

লালায় রাসায়নিক বিক্রিয়াতে মিষ্টি লাগে ‘আমলকী’ 

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২২
লালায় রাসায়নিক বিক্রিয়াতে মিষ্টি লাগে ‘আমলকী’  আমলকী। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: খেলাম ‘টক’ আর ‘তেতো’ বা ‘বিস্বাদ’যুক্ত, কিন্তু একটু পরই লাগছে মিষ্টি! অপূর্ব মিষ্টি! এর কারণটা কী? আমলকী খাবার পর এমন প্রশ্ন অনেকের মনোজগতের মাঝে ঘুরপাক খায়।  

‘আমলকী’-কে অন্যভাবেও চেনা যায়।

আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে ‘ত্রিফলা’ নামে একটি বিশেষ ধরনের অত্যন্ত উপকারী এটি। ত্রিফলা মানে ‘তিন ফলের সমাহার’ অর্থাৎ তিনটি ফল একত্রিত হয়ে বিশেষ একটি ওষুধ বানাতে ভূমিকা রেখেছে। সে ফলগুলো- বহেড়া, হরিতকি এবং আমলকী।  

খাদ্য বা খাবারের সাথে আমাদের জিহ্বায় সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। কোনো কিছু মুখে দেওয়া মাত্রই জিহ্বার সে খাবারটাকে মুহূর্তে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ফলাফল দ্রুত মস্তিষ্কে পাঠিয়ে দেয়। তারপর অতি দ্রুত মস্তিষ্ক সিদ্ধান্ত নেয় – এই খাদ্যটি খাবার আগে পরিণত করে এর স্বাদ নেবে কিনা? নাকি দ্রুত এ খাবারটি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে! 

তারপর খাবারপূর্ব সুসম্পন্ন হলে সে খাবার পাকস্থলীর ভেতরে পৌঁছে সে খাদ্যের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ উপাদানের উপকারী এবং ক্ষতিকর দিকগুলো শরীরের নানা প্রান্তে ধীরে ধীরে পাঠিয়ে দেয়। সময় যত গড়তে থাকে উপকারী খাবারের ফলে শরীর ততই উন্নতি অর্জন করে থাকে। আর ক্ষতিকর খাদ্যের মাত্রা অনুযায়ী শরীর তার জীবনীশক্তি হারাতে থাকে।

এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞ বলেন, চারদিকের এই ভেজালের সময়ে স্বাস্থ্য উপকারী খাবার নির্বাচন করা এবং গ্রহণ করা দুটোই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর উৎকৃষ্ট খাবার হিসেবে মৌসুমী ফলের কোনো বিকল্প নাই। বাজারে এ উপকারী ফলটি বিক্রি হয় কেজি প্রতি ৪০ থেকে ৬০ টাকা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক উপ-পরিচালক (ডিডি) কৃষিবিদ কাজী লুৎফুল বারী বাংলানিউজকে বলেন, এখন চলছে শীতকাল। শরৎ ও শীতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মৌসুমী ফল ‘আমলকী’। ফলটি খেলে প্রথমে টক, তেতো বা বিস্বাদ লাগে। পানি খেলে এরপর আবার মিষ্টি লাগে। আমলকীর মাঝে ‘ অ্যাসকরবিক অ্যাসিড’ রয়েছে। এই অ্যাসিড স্বাদটাই বিস্বাদ। আমলকী খাওয়ার কিছুক্ষণ পর পানি থেকে মুখের লালার সাথে রিঅ্যাকশন (বিক্রিয়া) হয়ে মুখে সুগার ফর্ম (তৈরি) করে। তখন মুখটা মিষ্টি মিষ্টি লাগে। এটা মুখের লালার সঙ্গে অ্যাসিডের রিঅ্যাকশনের ফল।

এ ফলটি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমলকী ‘ভিটামিন সি’ সমৃদ্ধ ফল। হাইয়েস্ট কোয়ালিটি ভিটামিন ‘সি’ এই ফলে রয়েছে। ‘ভিটামিন সি’র মেইন সোর্স হলো আমলকী। এই ফলটি ওষুধ হিসেবেই বেশি ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন ভেষজ ওষুধ প্রতিষ্ঠানগুলো এই মৌসুমে প্রচুর আমলকী সংগ্রহ করে সারাবছরের জন্য সংগ্রহ করে রাখে।  

শরীরের রোগ প্রতিরোধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ভিটামিন সি’ হলো প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা শরীরের বিভিন্ন ক্ষতিকর মুক্ত মৌলগুলোর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। আমলকীতে প্রচুর পরিমাণে ‘ভিটামিন সি’ রয়েছে। এর অভাবজনিত রোগগুলো- ঠোঁট ফাটা, দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া, ত্বক খসখসে হয়ে যায়, ঠোঁটের কোণা ফেটে প্রভৃতি সমস্যাকে ‘ভিটামিন সি’ দূর করে। এছাড়া শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায় ‘ভিটামিন সি’। ঘা বা ক্ষত হলে কিংবা শরীরে অপারেশন হলে দেখবেন ডাক্তাররা তাদের প্রেসক্রিপসনে ‘ভিটামিন সি’ খেতে লিখেন। তাতে শরীরের ওই ক্ষত তাড়াতাড়ি শুকায়।   

এছাড়াও আমলকী শরীরের বয়স বাড়ার প্রক্রিয়াকে ধীর করে ত্বক ভালো রাখে, চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে, হৃদযন্ত্র ও মস্কিস্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং চোখের দৃষ্টিশক্তিকে বৃদ্ধি করে। এছাড়াও আমলকীতে রয়েছে ক্যানসার প্রতিরোধী গুণ।  

গবেষণায় প্রমাণিত এই ফলটি ক্যানসার কোষ বাড়াতে বাঁধা দেয় বলে জানান কৃষিবিদ কাজী লুৎফুল বারী।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২২
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।