ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়ায় মুকুল-আখলাকের ‘বাইনারি’ ফাঁদে বাংলাদেশি শিক্ষার্র্থীরা

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৪
মালয়েশিয়ায় মুকুল-আখলাকের ‘বাইনারি’ ফাঁদে বাংলাদেশি শিক্ষার্র্থীরা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কুয়ালালামপুর থেকে ফিরে: মালয়েশিয়ার বাইনারি ইউনিভার্সিটি হয়ে উঠেছে সেখানে পড়তে যাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় ফাঁদ। বিশ্ববিদ্যালয়টির নামে প্রতারণা করছে বাংলাদেশের কিছু স্টুডেন্ট কনসালটেন্সি ফার্ম।



বিশ্ববিদ্যালয়টি সর্ম্পকে ভুল তথ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করে এই ফাঁদে ফেলা হচ্ছে তাদের। আর এই প্রতারকদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ মালয়েশিয়া স্টাডি সেন্টারের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক আব্দুর রহিম খান মুকুল এবং নাহার গ্রুপের এসএম শাহরিয়ার আখলাক।
 
পুচংয়ের বাইনারি বিশ্ববিদ্যালয় সরজমিন ঘুরে এদের প্রতারণার শিকারদের সঙ্গে দেখা হয়। অভিযোগগুলোও আসে তাদেরই কাছ থেকে।

ক্যাম্পাস খুঁজতে গিয়ে পাওয়া গেলো আইওআই মলের একদিকে কয়েকটি ফ্লোর ভাড়া নিয়ে চলছে বাইনারি বিশ্ববিদ্যালয়।

ওদিকে ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইটে পুরো আইওআই মলকেই দেখানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হিসেবে।

ক্যাম্পাস দেখে প্রথমে মুগ্ধ হয়ে পড়ে ঠকেছেন এমন একাধিক শিক্ষার্থী বাংলানিউজের কাছে এ জন্য মুকুল আর আখলাককে দায়ী করেন। তারা জানান, ওই দুই ‘প্রতারক’ পুরো মলটিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হিসেবে দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন।
 
‘রুহুল আমিন’ নামে এক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, মুকুল আমাকে আইওআই মলের ছবি দেখিয়ে বলেছিলেন, এটা পুরোটাই বাইনারি ইউনিভার্সিটি। আমাদের চিন্তায় ছিল একটি স্বপ্নের মতো ক্যাম্পাস। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস হচ্ছে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি, যেটা পুরোই মিথ্যা।
akhlak_1
২০১৩ সালে মালয়েশিয়া গিয়ে আসল চিত্র দেখে হতাশ হন ‘রুহুল আমিন’।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নতুন একটি ক্যাম্পাসের ছবি টানিয়ে রেখেছে। আদৌ এ ক্যাম্পাস হবে কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
 
আরেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ‘রাইসুল’ বলেন, তিন বছর ধরে বাইনারি ক্যাম্পাসে ক্লাশ করছি। তিন বছর ধরেই নতুন ক্যাম্পাসের ছবি দেখছি।   আমাদের আগের শিক্ষার্থীরাও এ ছবিটি দেখে আসছে। এটি কবে হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করলে, তারা চোখ তুলেও তাকায় না, বলেন ‘রাইসুল’।
 
বর্তমানে বাংলাদেশের ৩২ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন বাইনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভর্তির টাকা দিয়ে এবং এক মাস বা দুই মাস পড়েই আবার দেশে ফিরে এসেছেন এমনও রয়েছেন বেশ কয়েকজন।
 
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বাংলাদেশে তারা জেনেছেন মুকুল এবং আখলাকের সেন্টারেই।

এরাই বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করে বাইনারিতে পাঠাচ্ছেন।

এমনও অনেক উদাহরন রয়েছে, দেশ থেকে যে বিষয়ে ভর্তির কথা বলে পাঠানো হয়েছে, ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায় ওই বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোই হয় না, অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।  
 
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য এবং প্রকৌশল অনুষদের বিষয়গুলোতেই বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বেশি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাণিজ্য অনুষদের মান কিছুটা ভাল হলেও, প্রকৌশলের মান অত্যন্ত নিম্ন। সেখানে রয়েছে শিক্ষক স্বল্পতা এবং শিক্ষার্থীও খুব কম।
 
মুকুলের মাধ্যমে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের একজন ‘আসাদ’। তিনি বাংলানিউজকে ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ভর্তির সময় মুকুল বলেছিলেন, বাইনারি এখানকার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি। আসলে এটি একটি ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা বিশ্ববিদ্যালয়।
mukul_1 
যেদিন বিমানে ওঠেন সেদিনও মুকুলকে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয় স্রেফ এয়ারপোর্টে কেউ রিসিভ করবে তার জন্য, জানান ‘আসাদ’।

এখানেই প্রতারণার শেষ নয়। মুকুল-আখলাকরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে রিঙ্গিতের বিনিময় মূল্যেও বড় ধরনের প্রতারণা করেন।   
 
অনেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকেই রিঙ্গিতের মূল্য ধরা হয় ২৭ টাকা। অথচ বাজার দর ২৩ টাকার সামান্য বেশি। প্রতি রিঙ্গিতে চার টাকা করে ঠকিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিনা পূঁজিতেই লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন মুকুল-আখলাক।  
 
প্রতারণার আরেকটি দিক শিক্ষার্থীদের কাজ পাইয়ে দেওয়া। ‘তন্ময়’ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, নাহার গ্রুপের আখলাক বলেছিলেন, মালয়েশিয়া পড়াশোনার পাশাপাশি মাসে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা আয় সম্ভব। কিন্তু মালয়েশিয়ার পৌঁছে দেখি এটি পুরোপুরি অসম্ভব ও অবাস্তব।

বাইনারি বিশ্ববিদ্যালয়ও শিক্ষার্থীদের কাজ করার কোনো ধরনের সুযোগ দেয় না। আর এ কারণে দেশ থেকেই টাকা নিয়ে খরচ বহন করতে হয় শিক্ষার্থীদের। অথবা ফিরে আসতে হয় দেশে।
 
মুকুল-আখলাকদের মতো প্রতারকদের কবলে পড়ে এখানে যেন আর কোনো বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা পড়তে না আসেন, এই আহ্বান জানান বাইনারির একাধিক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী।
 
দ্রষ্টব্য: শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় রেখে এই রিপোর্টে ছদ্মনাম ব্যবহ‍ার করা হয়েছে। এই দুই প্রতারকের আরো প্রতারণার খবর আসছে পরবর্তী রিপোর্টগুলোতে।


** কুয়ালালামপুরে আর এক প্রতারক আখলাক
** প্রতারণায় মেতেছে বাংলাদেশ মালয়েশিয়া স্টাডি সেন্টার


বাংলাদেশ সময় ১০৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মালয়েশিয়া এর সর্বশেষ