ঢাকা, রবিবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ১২ মে ২০২৪, ০৩ জিলকদ ১৪৪৫

মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়ায় শিক্ষার্থী প্রতারণা

নতুন ফাঁদ এডাম কলেজ

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৫ ঘণ্টা, মে ২, ২০১৫
নতুন ফাঁদ এডাম কলেজ

কুয়ালালামপুর থেকে ফিরে:  মালয়েশিয়ায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি এডাম কলেজ। মূলত শিক্ষার্থীদের মোড়কে বাংলাদেশি দালালরা শ্রমিক পাচার করছে এখানে।

আবার অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীও গিয়ে পড়ছেন বিপাকে।
 
গত মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে এডাম কলেজের উদ্দেশ্যে কুয়ালালামপুরে পাড়ি জমান ঢাকার মেধাবী ছাত্র রিপন ইমরান। তবে কলেজে গিয়ে তার চক্ষু চড়ক গাছ! সেখানে শিক্ষাব্যবস্থা যেটি আছে সেটি লোক দেখানো। অফিস রুম রয়েছে, আর ৩ বা ৪টি শ্রেণী কক্ষ রয়েছে।
 
এনিমেশন অ্যান্ড ভিজুয়াল এফেক্টের ওপর ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হওয়া রিপন শনিবার ফোনে বাংলানিউজকে বলেন, আজ পর্যন্ত কলেজে কোন ক্লাস হয়নি। তিনি এখানে এসে বুঝতে পেরেছেন মূলত ঢাকার আদম ব্যবসায়ীরা এ কলেজে শিক্ষার্থীর নামে শ্রমিক পাঠায়।
 
মালয়েশিয়ায় এ ধরনের অসাধু অন্যসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে এডাম কলেজের আলাদা একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। শিক্ষার্থী লেটার নিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার পরে ভাল প্রতিষ্ঠানগুলোতে ১ সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের মধ্যে পাসপোর্টে স্টুডেন্ট ভিসার স্টিকার লাগিয়ে ফেরত দেয়া হয়। আর অসাধু প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই সময় বেড়ে হয় দেড় থেকে দুই মাস।
 
রিপন অভিযোগ জানিয়ে বলেন, এডাম থেকে তাকে বলা হয়েছে ৩ মাসের আগে স্টিকারসহ পাসপোর্ট ফেরত দেয়া হবে না। অথচ ৩ মাস হলে প্রায় অর্ধেক সেমিস্টার শেষ হয়ে যায়। এর মধ্যে মালয়েশিয়ায় পাসপোর্ট ছাড়া অনিরাপদে বাস করতে হচ্ছে।
 
অনুসন্ধানে জানা যায়, কুয়ালালামপুরের আমপাংয়ের জালান জেজাকায় এ কলেজ অবস্থিত। একটি ভবনের দুটি ফ্লোর নিয়ে চলছে কলেজটি। সেখানে ক্লাস হয় সপ্তাহে একদিন বা দুদিন। এই দুই দিন শিক্ষার্থীর মোড়কে আসা শ্রমিকরা সেখানে হাজিরা দিয়ে আসেন পুরো সপ্তাহের।
 
মালয়েশিয়ায় শিক্ষার্থীর মোড়কে শ্রমিক পাঠানোর জন্যে বাংলাদেশি দালালদের প্রিয় প্রতিষ্ঠান ছিল টিএমসি এবং লিংকন। তবে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে মানবপাচারের অভিযোগ ওঠায় বর্তমানে এডামকে বেছে নিয়েছেন বাংলাদেশি দালালরা। এখানে এনিমেশন অ্যান্ড ভিজুয়াল ইফেক্ট এবং হোটেল ম্যানেজমেন্টের ওপর ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হন শিক্ষার্থী ও শ্রমিকরা।
 
প্রতারিত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশি কয়েকজন দালাল সরাসরি কলেজটির সঙ্গে যুক্ত। এর মধ্যে অফিস ম্যানেজমেন্টের জয়ন্ত মূলত কলেজটিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির বিষয়টি দেখভাল করেন। প্রতি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী প্রতি কমিশন পান তিনি। এছাড়াও কলেজটিতে আরো ৪ বা ৫ জন বাংলাদেশি স্টাফ এ অবৈধ প্রক্রিয়ায় মানব পাচারে সরাসরি যুক্ত বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
 
এদিকে যেসব শ্রমিক এডাম কলেজের শিক্ষার্থী পরিচয়ে যাচ্ছেন, তারাও হচ্ছেন প্রতারিত। নির্মাণ শ্রমিক বা রেস্টুরেন্ট অথবা অন্য কোন উপায়ে যে আয় তারা করছেন বছর না পেরোতেই সেই অর্থ দিয়ে দিতে হচ্ছে কলেজকে। না হলে দ্বিতীয় বছরের জন্যে ভিসা রিনিউ করে না কলেজ। আর অবৈধ হয়ে যেতে হয় শিক্ষার্থীকে।
 
ঢাকার লালমাটিয়ার ‘শহীদুল্লাহ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রিপন নামে ওই শিক্ষার্থী এডাম কলেজে ভর্তি হন। রিপন বলেন, ওই প্রতারক প্রতিষ্ঠানটি কলেজটির নামে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। কলেজের যেসব ছবি ও পড়াশোনার তথ্য দেয়া হয়েছে, সব ভুয়া।
 
তিনি বলেন, আমি ইন্টারনেটে কলেজটির কোন ওয়েবসাইট পাইনি। তখন বলা হয়, ওয়েব ডেভলপমেন্টের কাজ চলছে। এখানে এসে জানতে পারি, ভুয়া এ প্রতিষ্ঠানের আসলে কোন ওয়েবসাইটও নেই। ভর্তির প্রক্রিয়ার জন্যে তার কাছ থেকে মোট ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা নেয় শহীদুল্লাহ নামক প্রতিষ্ঠান।
 
অনুসন্ধানে লালমাটিয়ারই আরেকটি কনসালটেন্সি ফার্মের নাম উঠে আসে। ইউনিভার্স এডুকেশন অ্যান্ড বিজনেস কনসালট্যান্ট নামে প্রতিষ্ঠানটি রমরমা ব্যবসা করছে এডাম কলেজ নিয়ে। এখানে শিক্ষার্থীদের ভুল তথ্য দিয়ে কলেজটিতে পাঠানো হয়। এছাড়াও শ্রমিকদের পাঠানো হয় সাড়ে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার চুক্তিতে। সে ক্ষেত্রে শ্রমিকের জন্যে শিক্ষাজীবনের জাল সনদ তৈরি করে দেয়া হয়।
 
শনিবার সকালে ফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা রাসেল বাংলানিউজকে বলেন, টিএমসি’র খরচ কিছুটা বেশি। তাই এডামকেই গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা। মূলত ডিপ্লোমা কোর্সেই শিক্ষার্থী পাঠানো হয়। এ ক্ষেত্রে আড়াই লাখ টাকা খরচে শিক্ষার্থীকে মালয়েশিয়া পাঠানোর  প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় বলে জানান তিনি।
 
তবে এডাম কলেজের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে, সেগুলো সর্ম্পকে জানতে হলে অফিসে সশরীরে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৭ ঘণ্টা, মে ২, ২০১৫
এমএন/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মালয়েশিয়া এর সর্বশেষ