ঢাকা, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়ায় ব্ল্যাকলিস্টে ভিক্টোরিয়া কলেজ

বাংলানিউজ ইনভেস্টিগেটিভ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১৩ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৫
মালয়েশিয়ায় ব্ল্যাকলিস্টে ভিক্টোরিয়া কলেজ

কুয়ালালামপুর থেকে ফিরে: সরকারের কোন রকম নিয়ম নীতি না মেনে কোটার অতিরিক্ত বিদেশি শিক্ষার্থী  মালয়েশিয়ায় আনার অপরাধে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে ভিক্টোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কলেজকে। এর ফলে অনির্দিষ্টকালের জন্য আর কোন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে না এই কলেজ।

গত মে মাসের প্রথম দিন থেকে বিদেশি শিক্ষার্থী আনার ক্ষেত্রে ব্ল্যাকলিস্টেড করা হয়েছে কলেজটিকে।

কলেজটির এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদেশি শিক্ষার্থীর নামে শ্রমিক আনায় এ কলেজকে ব্ল্যাকলিস্ট করা হয়েছে। এই সংখ্যা বিদেশি শিক্ষার্থীর কোটার অতিরিক্ত হয়েছে। এছাড়াও সত্যিকারের অনেক শিক্ষার্থীও বাংলাদেশে দালালদের প্ররোচনায় এ কলেজে ভর্তি হয়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন।

ব্ল্যাকলিস্টেড হওয়ায় গত মাস থেকে হাজারের ওপর বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর ফাইল আটকে রয়েছে কলেজটিতে।

সম্প্রতি সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, কুয়ালালামপুরের জালান ইপোহ’র বাতু লিমার উইসমা ফু উয়েনে অবস্থিত কলেজটি। ভবনটির গ্রাউন্ড ফ্লোরে কলেজ কর্তৃপক্ষের অফিস এবং ৬ষ্ঠ তলায় কলেজটির ভিসা সম্পর্কিত অফিস। এছাড়া আর কোন ক্লাসরুমও নেই।  

বাইরে থেকে দেখলে মনে হয়, একটি গোডাউনে ঢোকার ছোট দরজা কলেজটির গেট। সেখানে বাইরে ফুটপাথে বসে আছে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। কলেজে ভিসার জন্যে পাসপোর্ট জমা দেয়ার পর কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও হাতে পাচ্ছে না তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মূলত শিক্ষার্থীর নামে শ্রমিক আনার কাজে ব্যাবহৃত হয় কলেজটি। এ ধরনের অভিযোগে গত একবছরেই বেশ কয়েকবার প্রতিষ্ঠানটিকে সতর্ক করেছে মালয়েশিয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় শিক্ষার্থীর নামে শ্রমিক পাঠানোর এজেন্টদের পছন্দের তালিকায় প্রথম দিকেই রয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। ভুয়া সার্টিফিকেট, কাগজপত্র জমা দিয়েও ভর্তি করানো হয় এখানে। আর শিক্ষার্থীরা এ কলেজের নামে মালয়েশিয়ায় এলেও এমনও ঘটনা রয়েছে, কোনোদিনও পা রাখা হয়নি ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে।

শুধু শ্রমিক নয়, এজেন্টদের প্রতারণার শিকার হয়ে অনেক শিক্ষার্থীও এই ভুয়া কলেজে ভর্তি হয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন।

কলেজের একজন শিক্ষার্থী সাগর বাংলানিউজকে জানান, প্রতিদিন এখন গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ জন শিক্ষার্থী বাংলাদেশ থেকে এ কলেজে ‍ আসেন। এদের সকলেরই ভিসা প্রসেস মে মাসের আগে সম্পন্ন হয়েছে।  

কুয়ালালামপুরে কলেজটির একজন এজেন্টের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে যে শিক্ষার্থী ভর্তি হন, তাকেই কর্তৃপক্ষ এজেন্ট বানিয়ে নেয়। নতুন শিক্ষার্থীকেই বলা হয়, পরে শিক্ষার্থী আনতে পারলে ১০ শতাংশ কমিশন দেয়া হবে। কলেজ এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর কাগজপত্র যাচাই না করে, শুধু টাকার বিনিময়ে ভর্তি করায়। এ সুযোগে নিজের নাম লিখতে না পারা লোকও হয়ে উঠেছে কলেজের শিক্ষার্থী।

ভিক্টোরিয়া কলেজের একজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রাহুল বাংলানিউজকে বলেন, শুধু যে শিক্ষার্থীর আবরণে শ্রমিক আসছে তাই নয়, দেশ থেকে মেধাবি শিক্ষার্থীদের প্রতারিত করেও এ প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসছে দালালরা।

সূত্র জানান, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অর্থেই চলছে ভিক্টোরিয়া কলেজ। শিক্ষার্থীরা এক বছরে কষ্ট করে যা আয় করেন, পরের বছরের ভিসা রিনিউর জন্যে সে অর্থ জমা দেয়া হয়।

এভাবেই চলছিল কলেজটি। তবে এবার বেশ শক্ত পদক্ষেপ নিয়েছে মালয়েশিয়ার শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মে মাসে কলেজটির কেডিএন লাইসেন্স বাতিল করা হয়।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে ঢাকায় এই কলেজের তিনজন বড় এজেন্টের নাম জানা যায়। এরা হচ্ছেন- লালমাটিয়ায় সজিব এবং মালিবাগের ফয়সাল ও পারভেজ।

বাংলাদেশ সময়: ০৭১২ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৫
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মালয়েশিয়া এর সর্বশেষ