ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়া থেকে মফিজুল সাদিক

কবর দেয়া ও কাপড় পরা শিখছে ওরা!

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৫
কবর দেয়া ও কাপড় পরা শিখছে ওরা! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

Mofizul_sadikটানাহ রাটা (মালয়েশিয়া) থেকে : মালয়েশিয়া এশিয়ার ইউরোপ। রাজধানী কুয়ালালামপুর কর্মচঞ্চল।

ঝকঝকে আধুনিক শহর হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত নাম। বন্ধুর ভূমিতে নান্দনিক অবকাঠামোর এই শহরটি আধুনিকতার ছোঁয়ায় বর্তমানে সারা বিশ্বের কাছে অন্যতম পর্যটন শহর।
 
অথচ এই শহর থেকে ১০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে টানাহ রাটা এলাকায় দেখা যাবে ভিন্ন এক পাহাড়ি জগৎ। যেখানে বসবাস করছে ওরাং আসলি নামে আদিবাসী জনগোষ্ঠী। বড় বড় পাহাড়ের চূড়ায় ও গাছের ডালে  আসলি সম্প্রদায়ভ‍ুক্ত মানুষের গৃহ। এরা সাধারণত পাখি ও ছোট্ট বানর শিকার করে জীবন-ধারণ করে।
 
আধুনিকতা কাকে বলে এই ধারণাও এখনও অনেকে ধারণ করতে পারেনি। বন জঙ্গল ও পাহাড় থেকে বন কাঁঠাল, বাঁশের গুঁড়ি, লতা পাতা ও পিতিয়া নামের এক ধরনের ফল সংগ্রহ করে তারা।  
Malaysia_01
দুর্গম এলাকা ও জঙ্গলের মধ্যে এরা থাকতে ভালোবাসে। আসলি ব্যতীত অন্যকোনো মানুষের সঙ্গে এরা মিশতে পারে না। নিজের মতো করে জীবন-যাপন করতে এরা স্বাচ্ছন্নবোধ করে।
 
কোনো আসলি মারা গেলে এরা সবাই লাশ ফেলে দিয়ে অন্যস্থানে চলে যেতো। গাছের লতা, পাতা ও ছাল পরতে এরা স্বাচ্ছন্ন বোধ করতো। ওরাং আসলি  হলো মালয়েশিয়ার জঙ্গলে বসবাসকারী জংলী মানুষ যারা কোন মতেই আধুনিক সমাজ জীবনে আসতে রাজি হতে চায় না। তবে মালয়েশিয়ান  সরকারের চেষ্টার অন্ত নাই।
 
যে কারণে বর্তমানে ওরাং আসলি কোনো রকমে পোষাক পরিধান করে। বর্তমানে লাশ কবর দেয়ার জন্য সরকারি নির্ধারিত স্থান ব্যবহার করছে তারা।  
 
তবে আসলি সম্প্রদায় কোনো ধর্মে বিশ্বাস করে না। এমনকি সরকারের কোনো আইন-কান‍ুন মানতে রাজি নয় তারা। অনেক আসলি বর্তমানে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে বলে জানা গেছে। আসলি দম্পতির সন্তান-সন্ততির সংখ্যা ৮ থেকে ১২ জনের কম নয়। এদের জীবন-যাপন দেখতে গিয়েছিলাম আসলি ক্যাম্পে। কিন্তু সমস্ত আসলি এসে ঘিরে ধরায় ও তাদের হাতে থাকা বাঁশ কাটার দা দেখে কথা বলার সাহস হয়নি। অনেকে বাঁশ ও বেত দিয়ে রকমারি পণ্য তৈরি করতে পারে।
 
কুয়ালালামপুর থেকে ক্যামেরুন হাইল্যান্ডে দুর্গম পাহাড়ি পথ পাড়ি দিলে কিছু আসলির দেখা মিলবে। দুর্গম পাহাড়ি এলাকা থেকে বাঁশের গুঁড়ি, বন কাঁঠাল, ফল ও ডুরাইন বিক্রি করে আসলি সম্প্রদায়। কুয়ালালামপুর শহর আসলিদের কাছে অজানা হলেও বন ও পাহাড়ের সমস্ত পথ তাদের চেনা।
 
টানা রাটাতে কথা হয় ওরাং আসলি জিউবারের(juber) সঙ্গে। তিনি বন জঙ্গল থেকে ফলমূল সংগ্রহ করে রাস্তার পাশে বিক্রি করে জীবন ধারণ করেন।
Malaysia_02
জিউবার জানান, তারা এখন আগের মতো নেই। গাছের লতা-পাতা বাদ দিয়ে এখন পোষাক পরে। কয়েক দিন পর গোসলও করে। তাদের মধ্যে কেউ মারা গেলে ফেলে আসা হয় না। সরকারি স্থানে কবর দেয়া হয়।
 
আপনি কোন ধর্মে বিশ্বাসি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি হাত প্রসারিত করে চারপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখান।
 
তিনি বলেন, পাহাড়, মেঘ, বন, জঙ্গল ও পাখির মতো আমার কোনো ধর্ম নেই। তবে কিছু কিছু আসলি এখন মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করছে।
 
বর্তমানে অনেক আসলি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে বন জঙ্গল থেকে বের হয়ে আসছে। আসলি সম্প্রদায়কে আর্থিক সহায়তা দিয়ে উন্নত জীবন-যাপনের পথ তৈরি করতে সরকার নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে।
 
তবে এখনও ওরাং আসলি সম্প্রদায় বড় বড় দালান, বিদ্যুৎ দেখে ভয় পায়। এরাই প্রথমে মালয়েশিয়ায় বসবাস শুরু করে। বর্তমানে যারা মালয়েশিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করছে এরা সবাই মূলত চীন, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতের তামিলনাড়ু থেকে এসে মালয়েশিয়ায় বসবাস শুরু করেছে। অথচ এখনও প্রায় আদিম যুগে পড়ে আছে মালয়েশিয়া ভূ-খণ্ডের প্রধান দাবিদাররা।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৫
এমআইএস/জেডএম

** কোরবানির গরু বছরে একবারই খোঁয়াড়ে আসে
** সুন্দর আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথে সঙ্গী মেঘদল
** ঈদ উপলক্ষে মালয়েশিয়ায় হোটেল মার্কে ৩০ শতাংশ ছাড়
** এয়ার এশিয়ায় কম খরচে মালয়েশিয়া

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মালয়েশিয়া এর সর্বশেষ