কুয়ালালামপুর: অবশেষে দেশে ফিরলেন মালয়েশিয়ায় পরোক্ষ বন্দীদশায় থাকা শ্রমিক মোহাম্মদ নাজমুল। শুক্রবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা ১৪ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি।
নেত্রকোনার বাসিন্দা নাজমুল দীর্ঘ আট বছর ধরে বৈধ পন্থায় মালয়েশিয়ার একটি এলাকায় কাজ করছিলেন। সম্প্রতি মালিক বেতন অনেক কমিয়ে দিয়ে তাকে পরোক্ষভাবে বন্দীদশায় রেখেছিলেন। ‘ম্যাজিস্ট্রেটস, অল এয়ারপোর্টস অব বাংলাদেশ’ নামে একটি ফেসবুক পেজে এ নিয়ে একটি লেখা প্রকাশ হওয়ার পর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও অভিবাসীদের সংগঠন ‘ভালোবাসি বাংলাদেশ’সহ অনেকের দৃষ্টিগোচর হয় বিষয়টি। তাদেরই সহযোগিতায় দেশে ফিরলেন নাজমুল।
ভালোবাসি বাংলাদেশ’র সমন্বয়ক হারুন আল রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে নাজমুলকে দেশে যাওয়ার প্লেনের টিকিটের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।
মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক রেজাউল করিম বাংলানিউজকে জানান, তারা নাজমুলের ট্রাভেল পাসের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মালয়েশিয়া শাখার আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির জানান, দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে নাজমুল কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়াই ইমিগ্রেশন অতিক্রম করেছেন এবং বিমানে ওঠার আগ পর্যন্ত তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল।
এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর এ বিষয়ে ‘ম্যাজিস্ট্রেটস, অল এয়ারপোর্টস অব বাংলাদেশ’ নামে ফেসবুক পেজটিতে জানানো হয়, সন্ধ্যায় নাজমুল দেশের মাটিতে পা রেখেছেন।
গত ১৩ অক্টোবর রাতে নাজমুলের দুর্দশার কথা বর্ণনা করে একটি পোস্ট দেয় ‘ম্যাজিস্ট্রেটস, অল এয়ারপোর্টস অব বাংলাদেশ’ পেজটি। এতে বলা হয়, “নেত্রকোনার নাজমুল দীর্ঘ আট বছর ধরে বৈধভাবে মালেশিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাগানে কাজ করে আসছেন। একসময় ভালো বেতনও পেয়েছেন। সাড়ে তিন একর বাগান পরিচর্যা বাবদ ওভার টাইমসহ দিনপ্রতি ৭৫ রিংগিতও আয় করেছেন। সম্প্রতি মালিক বেতন কমাতে কমাতে দিনপ্রতি ১৫ রিংগিতে নামিয়ে এনেছেন, যা দিয়ে তার খাওয়ার খরচও হয় না। নাজমুল দেশে চলে আসতে চাইলে তার গত কয়েক মাসের বেতন এবং পাসপোর্ট আটকে দেন মালিক। এরপর থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ হাসে। নাজমুল দূতাবাস চেনেন না, কারও নম্বরও জানেন না। কেউ একজন তাকে এই পেজের নম্বর দিয়েছেন। ফোনে অভুক্ত নাজমুল কান্নার শক্তিও পাচ্ছিলেন না। অশিক্ষিত নাজমুল এই শিক্ষিত দাসত্ব থেকে মুক্তি চান। পাসপোর্ট নিয়ে বৈধভাবে বাংলাদেশে ফেরত এসে মাথা উঁচু করে হালচাষ করে জীবন ধারণ করতে চান... ‘কয় বেলা না খাইয়া আছি জানি না স্যার, ক্ষুধায় ঘুম আসে না স্যার... দেশে গিয়া হালচাষ করে খামু, আমারে নিয়া যান স্যার। নাজমুল +৬০১১১৫৭৯৪১৬২। ”
পোস্টটিতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ায় আলমের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই প্রতিমন্ত্রী কমেন্ট করে জানান, তিনি বিষয়টি আমলে নিয়েছেন। প্রতিমন্ত্রীর তৎক্ষণাৎ মন্তব্যে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন অনেকে।
পরে মালয়েশিয়ার পেরাকের দুর্গম এলাকা থেকে নাজমুলকে উদ্ধার করা হয়। এরপর তাকে কুয়ালালামপুরের একটি বাসায় রাখা হয়। তখন নাজমুলের হাস্যোজ্জ্বল ছবিও প্রকাশ করা হয় ‘ম্যাজিস্ট্রেটস, অল এয়ারপোর্টস অব বাংলাদেশ’ পেজে।
কিন্তু সেখানে থেকে নাজমুল সহসাই দেশে ফিরতে পারবেন না বলে অনুভব করতে থাকেন। তাই কুয়ালালামপুরের ওই বাসা থেকে নাজমুল জোহর বাহরুতে চলে যান। সেখানে গিয়েও তিনি পান না পূর্ণ আশার বাণী।
এরমধ্যে হুমায়ুন কবির তার খোঁজ নেওয়ার জন্য ফোন করলে নাজমুল পুরো ঘটনাটি খুলে বলেন এবং দেশে ফেরার আকুতি প্রকাশ করেন। এরপর আবারও নাজমুল কুয়ালালামপুর আসেন। এখান থেকেই তাকে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করে ‘ভালোবাসি বাংলাদেশ’।
নাজমুল দেশে ফেরার পর খবরটি দিয়ে ‘ম্যাজিস্ট্রেটস, অল এয়ারপোর্টস অব বাংলাদেশ’ পেজ আরেকটি পোস্ট দিলে তাতেও মন্তব্য করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি সেখানে বলেন, ‘ভালো কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন। ’
বাংলাদেশ সময়: ২২০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৫
এইচএ