ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

মালয়েশিয়া

ডেডলাইন ৩১ ডিসেম্বর

মালয়েশিয়ায় অবৈধ শ্রমিক বৈধকরণের নামে প্রতারণা

কুয়ালালামপুর করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৫
মালয়েশিয়ায় অবৈধ শ্রমিক বৈধকরণের নামে প্রতারণা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কুয়ালালামপুর: মালয়েশিয়ায় অবৈধ শ্রমিকদের স্বদেশে ফেরত যেতে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেধে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এই সিদ্ধান্তে এখানে সক্রিয় হয়ে উঠেছে কিছু প্রতারক চক্র।

অবৈধ শ্রমিকদের ‘বৈধ করার’ প্রলোভন দেখিয়ে তারা  হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি টাকা। অবশ্য, এরইমধ্যে প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিতে এবং জড়িতদের পাকড়াও করতে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

কুয়ালালামপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ‘ডেডলাইন ৩১ ডিসেম্বর’কে সামনে রেখে এখন অবৈধ শ্রমিক ‘বৈধকরণের’ ঘোষণা সম্বলিত নানা রঙ-বেরঙের পোস্টারের ছড়াছড়ি অলিতে-গলিতে। বাংলাদেশি অধ্যুষিত কোতারায়ার আশপাশ, পোর্ট ক্লাং এবং শাহ আলমেও এই ধরনের লোভনীয় পোস্টারের দেখা মিলছে। মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ অবৈধদের দেশে ফিরতে ‘শেষ বারের মতো’ সময় বেধে দিলেও তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ‘বৈধকরণের’ কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নিতে এ প্রচারণা চালাচ্ছে চক্রগুলো।

নিয়ম অনুযায়ী, ৬পি ভিসার মাধ্যমে কেউ মালয়েশিয়ায় কাজ করতে এলে তার সময়সীমা থাকে তিন বছর। গত বছর আনুষ্ঠানিকভাবে এর মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়। তবে এরপর এ বিষয়ে সরকারিভাবে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

এরমধ্যে মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ অবৈধদের স্বদেশে ফেরত যেতে ৩১ ডিসেম্বর ‘শেষ সময়’ বেধে দেয়।

সংশ্লিষ্ট সচেতন মহল বলছেন, সরকারি এ সিদ্ধান্তের কারণে অবৈধ শ্রমিকেরা দিশাহীন হয়ে পড়েছেন। তাদের এ ‘দুর্বলতা’ কাজে লাগিয়ে অর্থ হাতাতে গজিয়ে উঠেছে বিভিন্ন এজেন্ট বা চক্র। তারা মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে শ্রমিকদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব চক্র যেমন অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ করার কথা বলছে, তেমনি মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া শ্রমিকদের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য টাকা জমা দেওয়ারও কথা বলছে। পোস্টার-লিফলেট ছাপিয়ে, ফেসবুকে প্রচারণা চালিয়ে প্রতারকরা রমরমা বাণিজ্য করছে এখন।

স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক মাস আগেও ইমিগ্রেশন পুলিশ প্রতারণার ব্যাপারে সাবধান করে দেয়। এতেও প্রতারকদের তৎপরতা বন্ধ হয়নি।

মালয়েশিয়ান সংবাদ সংস্থা বেরনামা জানায়, গত কয়েক বছরে এমন প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে কয়েকশ’ বাংলাদেশি কোটিপতি হয়েছেন। পুলিশের কাছে এ সংক্রান্ত প্রায় ১০টি মামলা জমা পড়েছে। প্রতারকরা প্রতি শ্রমিকের কাছ থেকে ছয় হাজার থেকে আট হাজার রিংগিত পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে।

এদিকে, প্রতারণার খবরে উদ্বিগ্ন হয়ে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাহিদ হামিদি প্রতারকদের পাকড়াও করার নির্দেশ দিয়েছেন। ২০ ডিসেম্বর ইমিগ্রেশন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ৯৫ শতাংশ অভিবাসী বৈভাবেই কাজ করতে আসে এবং করতে চায়। তবে তাদের মাঝে কিছু শ্রমিক এজেন্টে রূপান্তরিত হয়েছে, যারা প্রতারণা করছে। আমি পুলিশকে প্রতারক এজেন্ট ও সিন্ডিকেটদের গ্রেফতারে নজর দেওয়ার কথা বলছি।

প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত শ্রমিকদের আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে স্বদেশে ফিরে যেতে হবে। এই সময়ের পর বিধি লঙ্ঘনকারী কেউ গ্রেফতার হলে তার সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার রিংগিত জরিমানাসহ পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

এ হিসেবে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া শ্রমিকদের স্বদেশে ফেরার হাতে সময় আছে সপ্তাহখানেকের মতো। অবশ্য, এই সময়ের মধ্যে কেউ স্বেচ্ছায় কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করলে তাকে ‘হয়রানি ছাড়া’ দেশে ফেরার সুযোগ দেবে মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৫/আপডেট ২১৩৭ ঘণ্টা
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মালয়েশিয়া এর সর্বশেষ

welcome-ad