কুয়ালালামপুর থেকে: মালয়েশিয়ায় এখন চলছে ই-কমার্সের আধিপত্য ও জয়জয়কার। ঘরের আসবাবপত্র থেকে শুরু করে বাজারের যেকোনো কিছু ঘরে বসে কম্পিউটার অথবা মুঠোফোনের কয়েকটি স্পর্শের মাধ্যমে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পেয়ে যাচ্ছেন যেকোনো ক্রেতা।
বিশাল পণ্যের সমাহার এবং গ্রহণযোগ্যতার কারণে মালয়েশিয়ায় ই-কমার্স সাইটগুলো এখন সবার কাছে বেশ জনপ্রিয়।
দেশটির সর্ববৃহৎ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘লেলং’- এ আইটি বিভাগে ডটনেট ডেভেলপার হিসেবে কাজ করছেন একমাত্র বাংলাদেশি চট্টগ্রামের মো. ফরহাদ হোসেন। পরিশ্রম এবং মেধায় তিনি সুনাম কেড়েছেন মালয়েশিয়ানদের মাঝে।
বর্তমানে lelong.com.my ওয়েবসাইটের আধুনিকীকরণ এবং বিভিন্ন নতুন ফিচার সংযোগ করার দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন তিনি।
ফরহাদ হোসেনের জন্ম চট্টগ্রাম শহরের লাভলেনে। তার বাবা মো. জাহিদ হোসেন ও মা ফেরদোউসি খানম। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং মহসিন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে যান মালয়েশিয়ার অন্যতম বিখ্যাত মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানে স্নাতক পাস করে তিনি কাজ করেন স্টারলিং সফটওয়্যার নামক একটি স্টারটাপ কোম্পানিতে। এরপর যোগ্যতা এবং সফলতার মাধ্যমে জায়গা করে নেন ‘লেলং’ কোম্পানিতে।
ফরহাদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘মালয়েশিয়ার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইটি ক্ষেত্রে পড়ালেখার মান ততোটা ভালো নয়। তবে শিক্ষকদের দরজা ছাত্রদের জন্য সব সময় খোলা। যেকোনো সময় শিক্ষার্থীরা চলে যেতে পারেন লেকচারারদের রুমে। তারাও সাহায্য করার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। আর ক্রমাগত বিভিন্ন ওয়ার্কশপ ও ট্রেনিং লেগেই থাকে, যা ভবিষ্যতে বেশ কাজে আসে’।
আর কর্মক্ষেত্রে বেশিরভাগ ইন্টারভিউগুলো হয় তিনটি ভাগে। প্রথম ধাপে রয়েছে টেকনিক্যাল টেস্ট- যেখানে প্রোগ্রামিং সম্পর্কিত প্রশ্ন থাকে, দ্বিতীয় ধাপে থাকে টিম পারফরমেন্স টেস্ট- যেখানে একটি দলের সঙ্গে কাজ করার ক্ষমতা সম্পর্কে জানা হয় এবং শেষ ধাপে অফিস পারফরমেন্স টেস্ট নেওয়া হয়, যেখানে অফিসের নিয়ম-কানুনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়।
কিভাবে লেলং এর সঙ্গে যুক্ত হলেন জানতে চাইলে ফরহাদ বলেন, ‘আমি এখানকার পড়াশোনা শেষ করে বাংলাদেশে ফেরত চলে যাই। এরপর সেখান থেকেই মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কোম্পানিগুলোতে অনলাইনে আবেদন জানাই। এরপর আমার অনলাইন পরীক্ষার মাধ্যমে তারা আমাদের নির্বাচন করেন’।
‘এখানে ডিগ্রি থেকে কাজের মূল্য দেওয়া হয় বেশি। আর আইটিতে কাজ জানতে হবে। আর নিজের বিভাগ সম্পর্কে পুরো জ্ঞান থাকতে হবে। আপনি যদি ওয়েব ডেভেলপার হন, তাহলে সেটা ভালো মতো জানুন। আপনি যদি নেটওয়ার্কিংয়ে পারদর্শী হন, তাহলে সেটাও ভালোভাবে আয়ত্বে আনতে হবে। কারন আইটি সেক্টরটি বেশ দ্রুত এগোচ্ছে। যদি যুগের সঙ্গে না এগোনো যায় তাহলে পিছিয়ে যেতে হবে’।
লেলং-এ কাজের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে প্রায় ১৫০ জন কাজ করেন। প্রতিটি বিভাগই এক একটি বিশাল টিম। একে অপরের যেকোনো বিষয়ে সাহায্য করতে প্রস্তুত। এছাড়া অফিসের এইচআর ডিপার্টমেন্ট বেশ কেয়ারিং। কোন কর্মচারীর কোন সময়ে কোন জিনিসটা করা উচিত, সঠিক নির্দেশনা দিয়ে সাহায্য করেন তারা’।
বাংলাদেশে আইটি ক্ষেত্রে নতুন প্রজন্মের জন্য ফরহাদ বলেন, বাংলাদেশে এখন অনেক প্রোগ্রামিং, কোডিং প্রতিযোগিতা হয়। এগুলোতে অবশ্যই অংশগ্রহণ করতে হবে। এছাড়া অনলাইনেও অনেক প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা লেগেই থাকে। এগুলোতে অংশগ্রহণ করলে সেই অভিজ্ঞতা পরে অনেক অনেক কাজে দেবে।
ভবিষ্যতে নতুন কিছু উদ্ভাবনার চিন্তা রয়েছে ফরহাদের। তবে বর্তমান সময়টাই ফোকাস করতে চান তিনি। কারণ, সামনে সুযোগ অনেক। সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ না নিলে পিছিয়ে যেতে হবে। আর আইটি ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৬
ইএস/এএসআর