ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মালয়েশিয়া

জীবনের গল্প শুনিয়েই জীবন বাঁচাতে চান বাবু

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৬
জীবনের গল্প শুনিয়েই জীবন বাঁচাতে চান বাবু

(কামপুং বারু) মালয়েশিয়া থেকে : লক্ষ্য একটাই। স্বাচ্ছন্দ্যের জীবন, ইউরোপে বসবাস, স্বপ্নের দেশ নরওয়েতে পৌঁছানো।

ইউরোপের মাটিও ছুঁয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য। দুঃসাহসিক অভিযাত্রায় মৃত্যু ঝুঁকিকে সঙ্গী করেও পৌঁছাতে পারেননি কাঙ্খিত গন্তব্যে।  

অাট লাখ টাকা। অবর্ণনীয় যন্ত্রনা। সবই বৃথা। ফিরেছেন শুন্যহাতে। কেবল প্রাণটি হাতে নিয়ে।

তারপরও হাল ছাড়েননি। সেই গন্তব্যেই আবার যেতে চান। তবে আগের মতো মৃত্যুকে সঙ্গী করে নয়, এবার ভেবে চিন্তে। অন্তত বৈধ পথে।

তিনি সাইদুর রহমান বাবু (৩০)। নিজের জীবনের দূর্বিসহ অভিজ্ঞতার গল্প শোনাতে চান সবাইকে। বিশেষ করে সেইসব মানুষদের, যারা অবৈধ পথে সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাবার স্বপ্নে বিভোর।

এভাবেই নিজের অভিজ্ঞতা বিনিময় করে যদি কেউ সর্তক হন তাতেই খুশি সাইদুর রহমান বাবু।

মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের কামপুং বারু এলাকায় পরিচয় বাবুর সঙ্গে।
সেখানেই নিজের জীবনের গল্প শোনান বাবু।

তার বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার জমিদার পাড়ায়। বাবা বজলুর রহমান পেশায় দলিল লেখক। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। ভাগ্য অন্বেষণে ২০০৯ সালে আরব আমিরাতের দুবাইতে যান তিনি। কাজ নেন একটি প্রতিষ্ঠানের আইটি বিভাগে।  

তিনি বলেন, ভালোই কাটছিলো সেখানে। কিন্তু ইউরোপের নরওয়েতে মোটা বেতন। স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন। সামাজিক নিরাপত্তা। এসব প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে মানবপাচারকারীদের মাধ্যমে অবৈধ পথে নরওয়ের গন্তব্যে পা বাড়াই।

কিছুটা থেমে তিনি আবার বলতে শুরু করেন, সব মিলিয়ে আমরা ছিলাম ৮০ জন। প্রথমে দুবাই থেকে দীর্ঘ মরুর পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছাই ওমানে। সেখান থেকে মাসকট হয়ে ইরান সীমান্ত। সেনাবাহিনী ও পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে তুর্কিস্থান এবং সেখান থেকে গ্রীস।

‘১ মাস ১২ দিনের যাত্রা পথে কেউ সাগরে ডুবে। কেউ বা অসুস্থ হয়ে মারা যান। অনেককেই তপ্ত মরুভূমি না হয় মরদেহ সাগরে ফেলেই পথ চলতে হতো। শেষ পর্যন্ত ৫৫ জন আমরা গ্রীসে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিলাম। ’, যোগ করেন তিনি।

বাবু বলেন, গ্রীসের এথেন্সে পৌঁছে দু'দিন হাজত খাটতে হলো। তারপর শরনার্থী হিসেবে আশ্রয়। এক মাসের মধ্যে দেশে ফিরে যাবার মুচলেকায় থাকলাম মাস ছয়েক। শেষে হাই কমিশনের ট্রাভেল পাশ ধরিয়ে দিয়ে দেশে ফেরত।  

‘সব মিলিয়ে আট লাখ টাকা খরচ। সবই জলে। ’, দীর্ঘ শ্বাস ফেলে কথাটি বলেন বাবু।

বাবু আবার বলতে শুরু করেন, এ যাত্রায় চলে আসি মালয়েশিয়ায়। এখানে গাড়ি চালাই। মাসে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫০ হাজার টাকার মতো রোজগার।

'মাঝে নতুন করে অনেকে প্রলোভন দেখিয়েছে। এখান থেকে থাইল্যান্ড। তারপর সাগর পাড়ি দিয়ে অষ্ট্রেলিয়া। ওই পর্যন্ত যেতে পারলেই অন্তত শরনার্থী হিসেবে মাসে ৮০ হাজার টাকা ভাতা পাবার হাতছানি।  তারপর অবস্থান পোক্ত করে সুবিধে মতো ইউরোপের দেশে পাড়ি জমানো। '

'এবার আর সেই ভুল করবো না। হাল ছাড়িনি। লক্ষ্য অটুট। যেতেই হবে স্বপ্নের সেই নরওয়েতে। তবে জীবনটাকে আর হাতের মুঠোয় করে নয়। পথেই যদি মৃত্যু হয়। সমুদ্রে যদি নিথর দেহটাকেই ফেলে দিতে হয়। তাহলে কি লাভ। 'যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, জীবন একটাই। আমার সঙ্গে সিরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের অনেকেই ছিলো। ৮০ জনের মধ্যে ২৫ জনই হারিয়ে গেছে বরফের পাহার, মরুর বুক। নয়তো গভীর সমুদ্রে। আমার ভাগ্য ভালো থাকায় এখনো বেঁচে আছি। নিজের জীবনের দুঃসহ সেই গল্প শুনে কারো জীবন যদি বেঁচে যায়। তাই বা কম কি!

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৬
জেডআর/আরএইচএস

**পরানপুর গ্রামের আকতার গাজীর পরান পড়ে থাকে দেশে

**রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী ‘বিমান’, হাঁকডাকেই সময় পার

**নতুন পরিচয়ে শাহজালালের ইমিগ্রেশন, সেবায় মুগ্ধতা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মালয়েশিয়া এর সর্বশেষ