ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ০৮ জুলাই ২০২৫, ১২ মহররম ১৪৪৭

জাতীয়

ভালো কলেজে পড়তে চায় কবিতা, সামর্থ্য নেই বাবার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:১৩, ডিসেম্বর ১, ২০২২
ভালো কলেজে পড়তে চায় কবিতা, সামর্থ্য নেই বাবার কবিতা আক্তার

মাদারীপুর: ‘মেয়েটারে একটার বেশি স্কুল ড্রেস বানাই দিতে পারি নাই। ধুইয়া পড়তে পড়তে জামা পাতলা হইয়া যাইতো।

আমি ভ্যান চালাইতাম আর ওর মা পাশের বাড়িতে কাজ করতো। অভাব-অনটনের মধ্যেই মেয়েটা লেখাপড়া করেছে। আইজ ভালো রেজাল্ট করেছে। আমাদের আনন্দের শ্যাষ নাই। ’

মাদারীপুর জেলার শিবচরে ভ্যানচালক কুদ্দুস সরদার মেয়ের ভালো ফলাফল অর্জনের অনুভূতি প্রকাশ করেন এভাবেই।  

সদ্য প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষায় দরিদ্র পরিবারের মেয়ে কবিতা আক্তারের জিপিএ-৫ পাওয়ায় আনন্দিত তার পরিবার, প্রতিবেশী এবং স্কুলের শিক্ষক। তবে আনন্দের মাঝেও ভালো কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়ে শঙ্কায় কবিতা আক্তার। দরিদ্র বাবার আর্থিক সংগতি নেই তাকে কলেজে পড়ানোর। সেখানে 'ভালো কলেজ' এ ভর্তি হওয়া শুধুই স্বপ্ন দেখা বলে মনে করেন কবিতা!

কবিতা আক্তার চলতি বছর শিবচরের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ শিবচর নন্দকুমার মডেল ইনস্টিটিউটশনের ভোকেশনাল শাখা থেকে জিপিএ-৫ (গোল্ডেন) অর্জন করেন। তিনি উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়নের চর কাঁচিকাটা গ্রামের কুদ্দুস সরদারের মেয়ে।

জানা গেছে, কবিতার বাবা কুদ্দুস সরদার যক্ষ্মাসহ নানা রোগে আক্রান্ত। পেশায় একজন ভ্যানচালক। তার স্ত্রী শেফালি বেগম পাশের বাড়িতে কাজ করেন। এভাবেই সংসার চলে তাদের। অভাবের সংসারে চার সন্তানের মধ্যে সবার বড় কবিতা। লেখাপড়ার প্রতি প্রবল ঝোঁক তার। ভবিষ্যতে একজন সেবিকা হওয়ার ইচ্ছা তার।

কবিতা জানায়, নিয়মিত স্কুলে যেতো সে। কখনোও ক্লাস বাদ দিত না। সে বলেন, অনেক সময় না খেয়েও স্কুলে গিয়েছি। আব্বা ভ্যান চালাতে যেতেন, মা অন্যর বাড়িতে কাজে যেতেন, তখন বাড়িতে বসে পড়তাম। আমি ঠিকমতো স্কুলের বেতন দিতে পারতাম না। প্রাইভেটের বেতন দেওয়ার সাধ্য ছিল না। স্কুলের স্যারেরা এদিকে সাপোর্ট দিয়েছে। এখন কলেজে ভর্তিসহ লেখাপড়া করতে গেলে যে পরিমাণ টাকা ব্যয় হবে, তার যোগান দেওয়া বাবার পক্ষে সম্ভব হবে না। উচ্চ শিক্ষা নিয়ে তাই শংকিত আমি।

কবিতার মা শেফালি বেগম বলেন, আমরা গরিব মানুষ। যখন হুনছি মেয়েটি গোল্ডেন প্লাস পাইছে, আর কান্না থামাতে পারি নাই। ওর স্কুলের বোরহান স্যার, লিটু স্যারসহ সবাই মেয়েটিকে সাহায্য করতেন। একটা জামা কিনে দিতে পারি নাই। এখন আপনারা সবাই এগিয়ে এলে আমরা ওকে পড়াতে পারবো।

স্থানীয়রা জানান, কবিতা ছোট সময় থেকেই মেধাবী। তবে ওরা অনেক দরিদ্র। ভালো ছাত্রী হওয়ার কারণে পড়াশোনার ব্যাপারে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনেক সহযোগিতা করেছে।

এসএসসিতে তিনি ভালো রেজাল্টও করেছে। কিন্তু ভালো কলেজে ভর্তি করাতে অনেক টাকার প্রয়োজন। সেই টাকা জোগাড় করা তার পরিবারের পক্ষে সম্ভব হবে না। তাছাড়া কলেজে পড়াতে যে পরিমাণ খরচ হয়, তা যোগার করাও কষ্টকর তার পরিবারের পক্ষে। সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত।

শিবচর নন্দকুমার মডেল ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক মো. হারুন অর রশিদ জানান, কবিতা আক্তার একজন মেধাবী ছাত্রী। সে অসহায় বাবা-মায়ের সন্তান। আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করছি তার পড়াশোনায় যাতে বিঘ্ন না ঘটে। আল্লাহর রহমতে সে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। এজন্য আমরা গর্বিত। আমি আশা করবো সমাজে যারা বিত্তবান আছেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিরা আছেন তারা কবিতার পাশে থাকবেন। তাকে সাহায্য করবেন। যাতে সে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পৌঁছাতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০২২
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।