ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নাটোরে পরিবহন ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনেও দুর্ভোগে যাত্রীরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০২২
নাটোরে পরিবহন ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনেও দুর্ভোগে যাত্রীরা

নাটোর: নাটোরে মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধসহ ১১ দফা দাবিতে অনিদিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন চলছে আজ। এতে বাসসহ সব যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।

 

অন্যদিকে পরিবহন নেতারা জানিয়েছেন, তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে।

শুক্রবার (০২ ডিসেম্বর) দ্বিতীয় দিনে সকাল থেকেই শহরের বড়হরিশপুর বাইপাস চত্বর, মাদ্রাসা মোড়, বনবেলঘড়িয়া বাইপাস থেকে কোনো প্রকার যাত্রীবাহী বাস চলাচল করতে দেখা যায়নি। এমনকি চলাচল করতে দেখা যায়নি থ্রি-হুইলার বা বিদ্যুৎ চালিত অটোরিক্সাও।

শুধুমাত্র শহর ও উপজেলা সড়কগুলোতে থ্রি-হুইলার বা বিদ্যুৎ চালিত অটোরিক্সাও চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে। দূরপাল্লার কোনো যানবাহন চলাচল করছে না। শুধুমাত্র সীমিত আকারে পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। এছাড়া বড়াইগ্রামের বনপাড়াপাড়া বাইপাস, সিংড়া ও গুরুদাসপুর থেকেও কোনো যানবাহন চলাচল করছে না বলে খবর পাওয়া গেছে।

ফলে কর্মজীবি মানুষসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতকারী যাত্রীরা কোনো যানবাহন না পাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। জরুরি প্রয়োজনেও অনেকেই গন্তব্যস্থলে যেতে পারছেন না। এমনকি গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বাসচালক ও সহকারীরাও পড়েছেন বিপাকে।

শহরের বড়হরিশপুর বাস টার্মিনালে আসা নলডাঙ্গা এলাকার আহসান আলী নামে এক যাত্রী জানান, ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন তিনি। মায়ের অসুখের খবর পেয়ে ছুটি নিয়ে গত বুধবার বাড়িতে এসেছেন। এখন ছুটি শেষ কিন্তু বাস না চলায় ঢাকায় যেতে পারছেন না। ট্রেনে টিকিট পাননি। সময়মত চাকরিতে যোগদান করতে না পারলে তার সমস্যায় পড়তে হবে।

জামাল হোসেন নামে এক যাত্রী জানান, গত বৃহস্পতিবার দিনগত ১১টায় জানতে পারেন তার বড় বোন গুরুতর অসুস্থ। দ্রুত তাকে ঢাকায় যেতে হবে। সকালে বের হয়ে বড়হরিশপুর কাউন্টারে এসে দেখেন বাস চলাচল বন্ধ। কিভাবে গন্তব্যে যাবেন তা নিয়ে তিনি খুবই দুঃচিন্তায় আছেন। এমনই নানা সমস্যা নিয়ে আছেন আরও অনেকে। দুর্ভোগ আর দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন অনেকে।

বৃহস্পতিবার (০১ ডিসেম্বর) সকাল থেকে এই পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। এর আগে মহাসড়কে নছিমন, করিমন, ভটভটিসহ অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধসহ ১১ দফা দাবিতে ২৬ নভেম্বর বিকেলে স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টারে সভা ডেকে ১ ডিসেম্বর থেকে রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা দেয় রাজশাহী বিভাগীয় সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।

সেই দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কর্মবিরতি শুরু করে বাস শ্রমিকরা। আজ পরিবহন ধর্মঘটের দ্বিতীয় চলছে। দাবি না মানা পর্যন্ত এই ধর্মঘট চলবে বলে সাফ জানিয়েছেন নাটোর জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি লক্ষণ পোদ্দার।  

তিনি বলেন, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংশোধন, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে নছিমন, করিমন, ভটভটিসহ অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ ও জ্বালানি তেলসহ ১১ দফার দাবিতে তাদের ধর্মঘট চলছে। তবে ইজিবাইকসহ সব ধরনের হালকা যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

এদিকে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা দাবি আদায়ে ধর্মঘটের কথা বললেও ধর্মঘটের সিদ্ধান্তে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে- আগামীকাল ৩ ডিসেম্বরের রাজশাহীতে বিএনপির গণসমাবেশে বাঁধা দিতেই এই ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। রাজশাহী বিভাগে তারা সরকারের চাপে এই ধর্মঘট ডেকেছে।  

বিএনপি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু অভিযোগ করে বলেন, সরকার যত বাধা দেওয়ার চেষ্টা করুক না কেন, তাদেও সমাবেশ হবে এবং রাজশাহী জনসমুদ্রে পরিণত হবে।

উত্তরবঙ্গ মোটর মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান বাংলানিউজকে একই অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলেন, তারা কারও সমাবেশ ঠেকাতে এই ধর্মঘটের ডাক দেননি। বিএনপির অভিযোগ ভিত্তিহীন। সরকার এখনই তাদের দাবি মেনে নিলে ধর্মঘট থাকবে না।

নাটোরের পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ধর্মঘটকে ঘিরে কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, সেজন্য জেলার গুরুত্বপুর্ণ এলাকায় আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা সর্তক অবস্থায় রয়েছে। কেউ ধর্মঘটকে ঘিরে অশান্তি বা বিশৃংখলা সৃষ্টি করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০২২
এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।