ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নিহত বন্ধুর মায়ের ধান কেটে দিল স্বেচ্ছাসেবী তরুণরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০২২
নিহত বন্ধুর মায়ের ধান কেটে দিল স্বেচ্ছাসেবী তরুণরা

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ সদর উপজেলার পুটিয়ালিচর গ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বন্ধু জহিরুল ইসলামের (২৫) মায়ের ৩৯ শতক ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে মড়াই করে দিয়েছেন স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের একদল তরুণ।

সোমবার (৫ ডিসেম্বর) দিনভর জোছনা বেগমের উঠানে ওই কাটা ধান মাড়াই করেন স্বেচ্ছাসেবী তরুণরা।

এ ঘটনায় স্থানীয় এলাকাবাসীর ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসায় ভাসছেন তারা।

ধান কাটা তরুণরা ‘দাপুনিয়া-ঘাগড়া হেল্পলাইন’ নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য। তারা সবাই বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে রয়েছে রাকিব, উবায়দুল, সিফাত, আরিফুল, চমক, ফরাজী, ফরহাদসহ ১০ জন।

এর আগে গতকাল রোববার (৪ ডিসেম্বর) দিনভর নিহত বন্ধু জহিরুল ইসলামের মা জোসনা বেগমের ৩৯ শতক জমির ধান কাটা হয় বলে জানান সংগঠনের পরিচালক মো: রাকিব হাসান।

জানা যায়, নিহত জহিরুল ইসলাম এ গ্রামের আমীর আলী ও জোছনা বেগম দম্পতির একমাত্র ছেলে ছিল। তাদের একমাত্র মেয়েরও বিয়ে হয়ে গেছে। আর স্বামী আমীর আলী অসুস্থ হয়ে থাকেন নেত্রকোনায়।

এই অবস্থায় সংসারের একমাত্র অবলম্বন ছেলেকে হারিয়ে একা হয়ে যায় জোছনা বেগম। কিন্তু শোকার্ত এ মাকে মনে রেখেছে ছেলের বন্ধুরা। তারা প্রায়ই জহিরুলের মাকে দেখতে যায়। সংসারের খোঁজ-খবর নেয়।

এরই মধ্যে চলতি আমন মৌসুমের শুরুতে জহিরুলের বন্ধুরা জানতে পারে প্রতিবেশী এক ব্যক্তির কাছ থেকে ভাগে নেওয়া ৩৯ শতক জমিতে টাকা ও শ্রমিকের অভাবে ধান রোপণ করতে পারছে না জোছনা বেগম। তখন জহিরুলের ১০ বন্ধু কাজ করে ওই জমিতে ধান রোপণ করে দেয়।

সম্প্রতি ওই জমির ধান মাড়াইয়ের সময় হওয়ায় গতকাল রোববার (৪ ডিসেম্বর) দিনভর ওই জমির ধান কেটেছে এ স্বেচ্ছাসেবী তরুণরা। এরপর আজ সোমবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে সেই কাটা ধান মাড়াইয়ের কাজ করছেন তারা।

জহিরুলের বন্ধু রাকিব বলেন, বন্ধুর মায়ের জন্য আমরা কিছু করতে পেরেছি, এতেই অনেক ভালো লাগছে। আমরা চাই সমাজের প্রতিটি তরুণ মানবিক ভাবে জাগ্রত থাকুক। সমাজের কল্যাণে অবদান রাখুক।

এদিকে ছেলের বন্ধুদের এমন কাজে আপ্লুত পঞ্চাশোর্ধ মা জোছনা বেগম। তিনি বলেন, আমার ছেলে চলে যাবার পর থেকেই আমার জীবনে কোনো সুখ, আহ্লাদ নেই। ছেলের বন্ধুরা আমার বাড়ি এলে খুব ভালো লাগে। সময়ে অসময়ে তারা এসে আমার ভাল মন্দ জানতে চায়। এবার ধান রোপণ করে দিয়েছে, কেটেও দিয়েছে। আল্লাহ তাদের ভাল রাখুক।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০২২
এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।