ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘অপচিকিৎসায় ’ ছেলের মৃত্যু, বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মা

এস এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০২২
‘অপচিকিৎসায় ’ ছেলের মৃত্যু, বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মা

বাগেরহাট: বাগেরহাটে কথিত কবিরাজের ‘অপচিকিৎসায় ’ হারাতে হয় ছেলেকে। ছেলের এমন মৃত্যুর বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মোসা. মোরশেদা বেগম মনি নামে অসহায় এক মা।

সিভিল সার্জন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেও বিচার পাননি তিনি। অবশেষে আদালতে গিয়ে করেছেন মামলা। আদালত সিআইডি, বাগেরহাটকে মামলাটির তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

মোরেলগঞ্জ উপজেলার চিংড়াখালী ইউনিয়নের কাছিকাটা এলাকার রেজাউল করিমের ছেলে মো. সাকিব। কথিত কবিরাজের ‘অপচিকিৎসায় ’ মৃত্যু হয়েছিল তার।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৭ ডিসেম্বর কচুয়া উপজেলার সাইনবোর্ড বাজারের কবিরাজ শাহজাহান শেখের কাছে সাকিবকে নিতে যায় তার পরিবার। কবিরাজ সাকিবকে নানা রকম বড় রোগের কথা বলে ভয়ভীতি দেখান। চিকিৎসার কথা বলে সাকিবের নাকে সাইকেলের স্পোক দিয়ে গুতায়, নাকের মধ্যে এসিড জাতীয় এক ধরণের তরল পদার্থ ঢেলে দেওয়া হয়। এছাড়া তার নিজের তৈরি কিছু তরল ঔষধ ও বড়ি খেতে দেওয়া হয়। এর জন্য তিনি নগদ ৩ হাজার টাকা নেন সাকিবের মা মোরশেদা বেগমের কাছ থেকে।

কবিরাজের চিকিৎসায় সাকিব সুস্থ্য না হয়ে, আরও বেশি অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে অনেক বেশি অসুস্থ্য হয়ে পড়লে সাকিবকে গত ০৭ জানুয়ারি বাগেরহাটে ডা. আব্দুল মান্নানের কাছে নেন তার পরিবার। পরে বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা জানান, লোহার সিক দিয়ে গুতানোর ফলে সাকিবের নাকের পর্দা ফুটো হয়ে গেছে। যার ফলে সাকিবের নাক ও ব্রেনে ইনফেকশন হয়ে গেছে। পরবর্তীতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা করানো হয় সাকিবের। কিন্তু অবশেষে ২৭ মার্চ বাড়ি থেকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে সাকিবের মৃত্যু হয়।

সন্তান হারা মা মোরশেদা বেগম বলেন, কবিরাজের অপচিকিৎসায় আমার ছেলে গুরুত্বর অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। পরে গত ২০ ফেব্রুয়ারি কবিরাজ শাহজাহান শেখের নামে বাগেরহাট সিভিল সার্জনের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। তারা এক মাসেও কোনো ব্যবস্থা নেননি। আমার ছেলে মারা যাওয়ার একদিন পরে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে তদন্ত করে ৭ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল সিভিল সার্জন। সেই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

পরে ১৪ আগস্ট কবিরাজ শাহজাহানের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসার মাধ্যমে রোগী মারা যাওয়ার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া, অতি দ্রুত ও চিরতরে তার অপচিকিৎসা কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ অভিযোগকারী ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সুপারিশ করেন ওই তদন্ত কমিটি। এরপর ২১ আগস্ট সিভিল সার্জন কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় এ ব্যপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

তিনি আরও বলেন, সিভিল সার্জনের লিখিত আদেশ দেওয়া প্রায় সাড়ে তিন মাস পার হয়ে গেলেও কবিরাজের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি স্বাস্থ্য বিভাগ বা পুলিশ প্রশাসন। আর এদিকে কবিরাজ শাহজাহান শেখ আমাকে নানাভাবে হয়রানি করে আসছেন। এমনকি অভিযোগ প্রত্যাহার না করলে আমাকে লোক দিয়ে মেরে ফেলারও হুমকি দিয়েছেন। বিচারের দাবিতে আমি বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা করেছি।

মোরশেদা বেগম আরও বলেন, কবিরাজ শাহজাহানের অপচিকিৎসার কারণে আমার ছেলের পেছনে ২ লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।

বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট লিয়াকত আলী খান বলেন, আদালত মোরশেদা বেগমের আবেদন আমলে নিয়ে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

অভিযুক্ত কবিরাজ শাহজাহান বলেন, যেহেতু আদালতে মামলা করা হয়েছে তাই ও বিষয়টি আমি আইনিভাবে জবাব দেব।

বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. মো. জালাল উদ্দিন বলেন, মোরশেদা বেগমের অভিযোগের ভিত্তিতে কবিরাজের দোকানটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কবিরাজের বিরুদ্ধে কেন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০২২
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।