ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ছেলে মারা যাওয়ার ৪ বছরেও শাশুড়িকে ঘরে উঠতে দিলেন না পুত্রবধূ

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০২২
ছেলে মারা যাওয়ার ৪ বছরেও শাশুড়িকে ঘরে উঠতে দিলেন না পুত্রবধূ অসহায় বৃদ্ধা হালিমা খাতুন

পাথরঘাটা (বরগুনা): ছোট ছেলে এবিএম কামরুজ্জামান রাহাতের ঘরে থাকতেন ৮৫ বছর বয়সী বিধবা মা বৃদ্ধা হালিমা খাতুন। রাহাত ছিলেন প্রবাসী।

তার স্ত্রী ফারহানা পপি স্থানীয় মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন।

কিন্তু দুর্ভাগা হালিমা ছেলেকেও হারান, এর সঙ্গে হারান মাথা গোঁজার ঠাঁইও।  

অভিযোগ, ছেলে রাহাত অসুস্থ হয়ে মারা গেলে শাশুড়িকে আর ঘরে উঠতে দেননি পুত্রবধূ পপি। ফের বিয়ে করে রাহাতের বাড়িতে থাকছেন। গত ৪ বছর ধরেই চলছে এ অবস্থা।

আদরের ছেলে ও ঘর হারিয়ে নিঃস্ব বৃদ্ধা হালিমার চোখের পানি থামছেই না।  

জানা যায়, ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৩ পর্যন্ত প্রবাস জীবন কাটান পাথরঘাটা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কামরুজ্জামান রাহাত। দেশে ফিরে পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের নিজলাঠিমারা গ্রামের আ.করিম মাস্টারের মেয়ে ফারহানা পপিকে বিয়ে করেন তিনি।  

দুলাভাইকে অনুসরণ করেই আইন নিয়ে লেখাপড়া করেন। সনদ পরীক্ষার কিছুদিন আগে হঠাৎ রাহাতের মরণব্যধি ক্যান্সার ধরা পরে তার।  বাংলাদেশ ও ভারতের ১ মাস  ১০ দিন চিকিৎসার পরে ২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান রাহাত। ছেলে মারা যাওয়ার পর থেকেই ঘর হারান তার মা হালিমাও।

রাহাতের বড় দুলাভাই অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম বলেন, রাহাত মারা যাওয়ার পর তার স্ত্রী পপিকে স্বামীর প্রাপ্য ভাগ দিয়েছি। এমনকি রাহাতের কেনা ৮ শতাংশ জমিও পপির দখলে আছে। অথচ রাহাতের রেখে যাওয়া বসতঘরে আজও শাশুড়িকে উঠতে দেয়নি।

শাশুড়ি হালিমা খাতুনের শেষ ইচ্ছা ছিল ছোট ছেলের ঘরেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবেন।  

এমনটা জানিয়ে অ্যাড. নুরুল ইসলাম বলেন, পপি অন্য একজনকে বিয়ে করে ওই ঘরে থাকছেন। আর শাশুড়ির শেষ ইচ্ছা পুরণ না হওয়া প্রতি মুহূর্ত কাঁদছেন।  ছেলের স্মৃতি আগলে রেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে বারবার ঘরে উঠতে চাইলেও পুত্রবধূ উঠতে দিচ্ছে না। এটা অমানবিক।  

রাহাতের বোনের মেয়ে অ্যাডভোকেট উম্মে সালমা শীলা বলেন,পাথরঘাটার বাড়িতে দ্বিতীয় বিয়ে করে থাকছেন অথচ শাশুড়িকে ঘরে উঠতে দিচ্ছেন না। এটা কেমন নিয়ম? আমরা বাবা-মেয়ে আইনজীবী হয়েও বৃদ্ধ নানীকে আইনি সহায়তা দিতে পারছি না।  

রাহাতের মা হালিমা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার শেষ ইচ্ছা ছিল ছোট ছেলের সংসার থেকেই লাশ হয়ে বের হব। কিন্তু বের হলাম ঠিকই ছেলের লাশের সাথে, আর ঘরে উঠতে পারলাম না। ছেলে মারা যাওয়ার লাশটাও বাড়িতে আনতে দিতে চায়নি। পারিবারিক চাপে লাশটা আনলেও ঘরের বাইরে কিছুক্ষণ রাখার পর মঠবাড়িয়ায় গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।  

তিনি আরও বলেন, প্রতি মুহূর্ত চোখের পানি ঝড়ছে।  আর কদিন বাঁচবো জানি না, তবে ছেলের স্মৃতি আগলে রেখেই মরতে চাই।

অভিযোগের বিষয়ে প্রয়াত রাহাতের স্ত্রী ফারহানা পপির ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। পরে তার ভাই আতিকুর রহমান মিরাজের ফোনে কল করা হয়।  

তিনি এ অভিযোগের বিষয়ে পরে কথা বলবেন এবং তার বোন পপির বিকল্প ফোন নম্বর দেবেন বলে জানান। কিন্তু পরে গোটা ব্যাপারটি এড়িয়ে যান।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০২২
এসএএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।