ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বাগেরহাট পৌরসভার ময়লায় অতিষ্ট মাঝিডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দারা

এস এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০২২
বাগেরহাট পৌরসভার ময়লায় অতিষ্ট মাঝিডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দারা

বাগেরহাট: বাগেরহাট পৌরসভার ময়লার ভাগারের দুর্গন্ধে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের মাঝিডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দারা। খোলা যায়গায় অপরিকল্পিতভাবে ফেলা ময়লা ও আবর্জনা পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপর বিরুপ প্রভাব ফেলছে।

প্রচণ্ড দুর্গন্ধে বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে ভাগারের আশপাশ। এ থেকে বাঁচতে অনেকে বাড়ি ঘর বিক্রি করে অন্যত্র যাওয়ার চেষ্টা করছেন। অথচ ২০১৯ সালের ২৩ জুন ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাগেরহাট পৌরসভার আবর্জনা অপসারণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য ডাম্পিং প্লেস নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল।

তৎকালীন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস এই প্লেসের ফলক উন্মোচন করেছিলেন। সাড়ে তিন বছরে ভূমি অধিগ্রহন ছাড়া দৃশ্যমান কোনো কাজ হয়নি এই ডাম্পিং প্লেসের। উপরন্তু খোলা স্থানে বিপুল পরিমাণ ময়লা-আবর্জনা ফেলায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে খুব শিগগিরই এখানে পরিবেশবান্ধব গার্বেজ সেন্টারের কাজ শুরু হবে। তখন এ সমস্যা থাকবে না।

সোমবার (০৫ ডিসেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, বাগেরহাট সদর উপজেলার মুনিগঞ্জ পোলঘাট সড়কের পাশে মাঝিডাঙ্গা এলাকায় বিশাল এলাকাজুড়ে ময়লার স্তুপ। পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা থেকে ময়লা এনে ফেলা হয় এখানে। বিভিন্ন ধরনের পলিথিন, কাগজ, খাবারের উচ্ছিষ্ট, প্লাস্টিক পণ্যসহ নানা ধরনের ময়লা। ময়লার স্তুপের ওপর কুকুর, কাক ও বিভিন্ন ধরনের পাখি খাবার খাচ্ছে। দুর্গন্ধে নাক চেপে চলাচল করছেন পথচারীরা। প্রতিদিনই এমন চিত্র চোখে পড়বে ওই এলাকায় গেলে।

মো. রফিকুল ইসলাম নামে এক পথচারী বলেন, প্রতিদিন সকাল বিকেল কাজের জন্য এই পথ দিয়ে যাওয়া-আসা করতে হয়। এত দুর্গন্ধ যে নাক বন্ধ করে যেতে হয়। খুবই কষ্ট হয় আমাদের। শুধু আমি নয়, প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ এভাবে কষ্ট পায়।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. আব্দুল জলিল বলেন, ময়লার দুর্গন্ধে আমরা রোগাক্রান্ত হয়ে যাচ্ছি। শান্তিতে খাবার খাওয়ারও উপায় নেই আমাদের। বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে এই এলাকা।

শেলী বেগম নামে এক নারী বলেন, দুর্গন্ধে দরজা জানালা বন্ধ করে রাখতে হয়। তাতেও গন্ধ কমে না। খুবই অসহায় লাগে তখন। মনে হয় ঘর-বাড়ি বিক্রি করে অন্য কোথাও চলে যাই।

স্থানীয় একটি অটো রাইস মিলের শ্রমিক নাহার বেগম বলেন, ময়লা ফেলার স্থানের চারদিকে অন্তত আধা কিলোমিটার জুড়ে দুর্গন্ধ আসে। বৃষ্টির সময় ময়লা ও ময়লাযুক্ত পানি রাস্তায় চলে আসার পাশাপাশি স্থানীয়দের বাড়িতেও প্রবেশ করে। একটা বিরক্তিকর ও অস্বাস্থ্যকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। এখানে বসবাস করা খুবই কষ্টের হয়ে গেছে আমাদের জন্য।

পরিবেশ অধিদপ্তর, বাগেরহাটের উপ-পরিচালক মো. কামরুজ্জামান সরকার বলেন, পৌরসভার নিজস্ব আইন দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। তারাই এর ব্যবস্থা নেবে। তবে কেউ অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা পৌরসভাকে চিঠি দেব।

বাগেরহাট পৌরসভার মেয়র খান হাবিবুর রহমান বলেন, পৌরসভার ময়লা ও আবর্জনা অপসারণ এবং উন্নত ব্যবস্থাপনার জন্য ইতোমধ্যে ৫ একর জমি ক্রয় করা হয়েছে। ওই জমিতে উঁচু দেয়াল দিয়ে পৌরসভার বর্জ্যকে আধুনিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা হবে। এখানে বায়োগ্যাস প্লান্ট, কম্পোস্ট সার প্লান্ট, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। দুই মাসের মধ্যে এসব কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হবে। যতদ্রুত সম্ভব কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, পৌরসভার বর্জের দুর্গন্ধ যাতে না আসে সেজন্য নিয়মিত ব্লিসিং পাউডার দেওয়া হয়। সময় সময় আগুন দিয়েও বর্জ পুড়িয়ে ফেলা হয়, যাতে অতিরিক্ত গন্ধ তৈরি না হয়। এছাড়া রাস্তার ওপর ময়লা চলে এলে তা ভেতরে নিয়ে ফেলা হয়। সব মিলিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের যাতে কষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে কাজ করা হচ্ছে। আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্ট চালু হলে এসব সমস্যা থাকবে না। সেই সঙ্গে এলাকার মানুষও উপকৃত হবে বলে দাবি করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।