ঢাকা: বাংলাদেশ, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মিশর, তুরস্ক, পর্তুগাল, ভেনেজুয়েলাসহ বিশ্বের ১১৪টি দেশের ৪৯৩ জন শিল্পীর ৬৪৯টি শিল্পকর্ম নিয়ে বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) থেকে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হতে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার চারুকলার সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী এশিয়ান আর্ট বিয়েনালের ১৯তম আসর।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে মাসব্যাপী দ্বিবার্ষিক এই উৎসবের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গণভবন প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী যখন ভার্চ্যুয়ালি আসরের উদ্বোধন করবেন তখন শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চে অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন সংস্কৃতি সচিব আবুল মনসুর, এশিয়ান আর্ট বিয়েনালের জুরি বোর্ডের সদস্য রফিকুন নবী, পোলিশ শিল্প সমালোচক জ্যারোস্ল সুহান।
এশিয়ান আর্ট বিয়েনাল সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এতে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন এবারের আসরের চার জুরি জগথ ভিরাসিংহে (শ্রীলঙ্কা), নারসেরিন টর (তুরস্ক), ইয়োনা ব্লাজউইক (যুক্তরাজ্য), জ্যারোস্ল সুহান (পোল্যান্ড)।
আয়োজক সংস্থা শিল্পকলা একাডেমি জানিয়েছে, এবারের আসরে বাংলাদেশের ১৪৯ জন শিল্পীর ১৫৬টি শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হবে। বহির্বিশ্বের ৩৪৪ জন শিল্পীর ৪৯৩টি শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হবে এবারের আর্ট বিয়েনালে।
এছাড়া বাংলাদেশশের ৪৫ জন শিল্পীর অংশগ্রহণে ৩১টি পারফরমেন্স আর্টও উপস্থাপিত হবে এবারের আসরে। বিদেশ থেকে আগত ৭ জন শিল্পীর ৭টি পারফরমেন্স আর্ট প্রদর্শিত হবে এবারের আর্ট বিয়েনালে।
প্রতিবারের মতো এবারের উৎসবে থাকছে গ্রান্ড ও সম্মানসূচক পুরস্কার। গ্রান্ড পুরস্কার দেওয়া হবে তিনটি, প্রতি পুরস্কারের অর্থমূল্য ৫ লাখ টাকা। সম্মানসূচক পুরস্কার দেওয়া হবে তিনটি, প্রতি পুরস্কারের অর্থমূল্য ৩ লাখ টাকা। বিজয়ীদের দেওয়া হবে ক্রেস্ট ও সনদ।
এশিয়ান আর্ট বিয়েনাল উদ্বোধনের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে শিল্পীদের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এই আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা করছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।
শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, করোনা মহামারির প্রকোপে ১৯তম এশিয়ান আর্ট বিয়েনাল আয়োজন করতে শিল্পকলা একাডেমিকে তিন বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। ২০১৮ সালে ১৮তম আর্ট বিয়েনালে অংশ নিয়েছিলো ৮৮টি দেশ, এবারের ১৯তম আসরে অংশ নিচ্ছে ১১৪টি দেশ। এশিয়ার মধ্যে এশিয়ান আর্ট বিয়েনালই চারুকলার বড় আসর।
লিয়াকত আলী লাকী বলেন, শিল্পের নানা মাধ্যমের প্রদর্শনীর সঙ্গে এই বিয়েনালটি হতে যাচ্ছে ১১৪টি দেশের শিল্পীদের অভূতপূর্ব এক মিলনমেলা। আমরা কখনও এই বিয়েনালে কোনো থিম নির্ধারণ করি না। কারণ, আমরা জানি, প্রতিটি শিল্পী তার ভেতরে এক শৈল্পিক দর্শন ধারণ করেন যা তাকে পরবর্তীতে শৈল্পিক বুদ্ধিজীবীতে পরিণত করে। আমরা জানতে চাই, চলমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে শিল্পী বর্তমান সময়কে কিভাবে চিত্রিত করেছেন তার মানসপটে, শিল্পের কোন মাধ্যমে তিনি তার ভাবনার কথা তুলে আনতে চান।
যুক্তরাজ্যের শিল্প সমালোচক ও এবারের আসরের জুরি ইয়োনা ব্লাজউইক বলেন, এবারের আসরের ছবি বাছাই করতে গিয়ে আমরা যে বিষয়গুলোতে বেশ গুরুত্ব দিয়েছি, সেগুলোর মধ্যে অবশ্যম্ভাবীভাবে এসেছে বিশ্বের সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট। সমাজের চালচিত্র বা ঘটনাবহুল দিনগুলো শিল্পী মনে কিভাবে রেখাপাত করেছে, শিল্পকর্মের মাধ্যমে তা কতটা উঠে এসেছে তা জানতে মুখিয়ে ছিলাম আমরা। মানুষের দৈনন্দিন জীবন ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত, প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক কিভাবে শিল্পীরা তাদের চিত্রকর্ম বা পারফরমেন্স আর্টে তুলে আনছেন, সেগুলোতে ভীষণ নজর রেখেছি আমরা। সত্যি বলতে, এবার সেরা শিল্পকর্ম বা ছবি বাছাই করা দুরুহ ছিলো।
শ্রীলঙ্কার শিল্পী জগথ ভিরাসিংহে বলেন, এশিয়ান আর্ট বিয়েনাল নিঃসন্দেহে চারুশিল্পের দুই প্রজন্মের মহা মিলনমেলা। ১৯৪৭ সালে যে শিল্পীর জন্ম, তিনি যেভাবে বিশ্বকে দেখেছেন বা চিত্রিত করছেন তার সঙ্গে বিস্তর তফাৎ হবে নব্বইয়ের দশকে জন্ম নেওয়া শিল্পীদের। দুই ধারার শিল্পীদের শিল্পকর্ম দেখার অভূতপূর্ব সুযোগ এসেছে এবার।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০২২
এইচএমএস/এএটি