ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

এক কিলোমিটার পথ হামাগুড়ি দিয়ে স্কুলে যায় ববিতা 

  মোমেনুর রশিদ সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০২২
এক কিলোমিটার পথ হামাগুড়ি দিয়ে স্কুলে যায় ববিতা 

গাইবান্ধা: দুই পা নিয়ে জন্ম নিলেও নিজের পায়ে দাঁড়ানো বা চলার শক্তি নেই তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া ববিতার। তবে শিশুটির প্রবল ইচ্ছে শক্তির কাছে হার মেনেছে শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতা।

 

প্রতিদিন এক কিলোমিটার পথ হামাগুড়ি দিয়ে স্কুলে যায় ববিতা। কিন্তু হাঁটতে না পারায় তার সঙ্গে খেলতে বা চলতে চায় না তার সহপাঠীরা। যা তাকে সবসময় কষ্ট দেয়।

ববিতার বাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়নের মুরারীপুর গামে। সে মুরারীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বাবা আব্দুর রহিম একজন পাটখড়ি ব্যবসায়ী পাশাপাশি দিনমজুরি করেন। গৃহিনী মা মমতা বেগম তিনিও শারীরিক প্রতিবন্ধী। বাক ও শ্রবণ শক্তি নেই তার। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে কবিতা সবার ছোট।

ববিতা বলে, অন্য শিশুদের মতো আমারও ছুটতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে সহপাঠীদের সঙ্গে হাত ধরে খেলতে-স্কুলে যেতে। কিন্তু আমাকে পথ চলতে হয় হামাগুড়ি দিয়ে। এজন্য আমার সঙ্গে খেলতে বা পথ চলতে পছন্দ করে না কেউ। বাধ্য হয়ে একাকি হামাগুড়ি দিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যাই।  

শিশুটি আরও বলে, আমি দেখেছি অনেকে হুইল চেয়ারে বসে আরামে পথ চলে। আমারও খুব ইচ্ছে করে হুইল চেয়ারে স্বাচ্ছন্দ্যে পথ চলতে। কিন্তু সে চাহিদা পূরণের সক্ষমতা আমার বাবার নেই।

ববিতার বাবা আব্দুর রহিম বলেন, তুচ্ছ পাটখড়ির ব্যবসার পাশাপাশি অন্যের জমিতে শ্রম বিক্রি করে কোনোমতে সংসারের জীবিকা নির্বাহ করি। মেয়েটার লেখাপড়া করার খুবে ইচ্ছে। মেয়েটা হামাগুড়ি দিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যায়। মেয়ে হয়ে বাবার কাছে একটি হুইল চেয়ারের আবদার করলেও ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তা পূরণের ক্ষমতা আমার নেই। বাড়ি থেকে ববিতার স্কুলের দূরত্ব আধা কিলোমিটার। ফলে মেয়েকে প্রতিদিন এক কিলোমিটার পথ হামাগুড়ি দিয়ে স্কুল করতে হয়, যেটা বাবা হিসেবে আমাকে খুব কষ্ট দেয়।  

ববিতার শিক্ষকরা বলেন, ববিতা লেখাপড়ায় বেশ মনযোগী। সে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসে। যত্ন নিলে সে ভবিষ্যতে লেখাপড়ায় ভালো করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।  

এ ব্যাপারে বেতকাপা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে আমি অবগত নই। খোঁজ নিয়ে শিশুটির একটি হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করা হবে। যাতে সে সহপাঠিদের সঙ্গে একসঙ্গে স্কুলে যাতায়াত করতে পারে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।