ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দুর্গাপুরে বন্যহাতির তাণ্ডবে তছনছ ২৫টি বসতঘর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২২
দুর্গাপুরে বন্যহাতির তাণ্ডবে তছনছ ২৫টি বসতঘর

নেত্রকোনা: নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী অঞ্চলের কুল্লাগড়া ইউনিয়নের আড়াপাড়া, পশ্চিমবিজয়পুর ও সদর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে বন্যহাতির দল তাণ্ডব চালিয়ে ফসল ও ঘর-বাড়ির ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে।

০৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর থেকে ভারত থেকে নেমে আসা হাতির দল গত ৩-৪ দিনে ২০ থেকে ২৫টি ঘর-বাড়ির গুঁড়িয়ে দিয়েছে এবং বহু জমির ফসল ও বাড়ির ধান খেয়ে সাবার করে দিয়েছে।

হাতির তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে কেউ খোলা আকাশের নিচে, আবার কেউ কেউ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। ইতোমধ্যে হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে মারা গেছেন পশ্চিম বিজয়পুর গ্রামের এক কৃষক। আগেও হাতির তাণ্ডবে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে বন্যহাতির দল সীমান্ত অঞ্চলে অবস্থান করছে সন্ধ্যা হলেই নেমে আসে লোকালয়ে। বন্যহাতির ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে আছে সীমান্তবর্তী মানুষেরা। না পারছে তাদের ফসল রক্ষা করতে না পারছে তাদের ঘর-বাড়ি রক্ষা করতে। বর্তমানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মশাল জ্বালিয়ে ফসল ও বাড়িঘর রক্ষার চেষ্টা করছে, কিন্তু বন্যহাতির আক্রমণের সামনে দাঁড়াতে পারছে না। গত চারদিনে বন্যহাতির তাণ্ডবে ২০ থেকে ২৫টি বাড়ি তছনছ করেছে। এছাড়াও ঘরের আসবাবপত্র ভেঙে চাল, ডাল সবকিছুই খেয়ে সাবার করেছে। পেটে ক্ষুধা ও আশ্রয়স্থল হারিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে ক্ষতিগ্রস্তরা। অন্যদিকে বন্যহাতির তাণ্ডবে আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে চার গ্রামের মানুষ। এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান। এ সময় তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে নগদ অর্থসহ কম্বল বিতরণ করেছেন ও সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

ক্ষতিগ্রস্ত মনোয়ারা বেগম বলেন, রাতে হঠাৎ বন্যহাতির একটি দল আমার বাড়িতে প্রবেশ করে। হাতিগুলো আমার বসতঘরের খুঁটি, বেড়া, ভেঙে তছনছ করে ফেলে। বসতঘরে থাকা হাঁড়ি-পাতিল, জামা-কাপড়সহ যাবতীয় আসবাবপত্র পিষে নষ্ট করে। তখন ঘরবাড়ি ফেলে তিন সন্তান নিয়ে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে যাই আমরা। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালিয়েছে হাতির দল। শুধু তাই নয় ঘরে রাখা চাল ও ধান নষ্ট করেছে ক্ষুধার্ত হাতির দলটি। বর্তমানে আমাদের মাথা গোঁজার জায়গাটুকুও নেই।

কুল্লাগড়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ইউপি সদস্য আব্দুল হামেদ বলেন, হাতিগুলো বাংলাদেশ সীমান্তের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে এবং রাত হলেই চলে আসছে লোকালয়ে এতে স্থানীয়রা আতঙ্কে রয়েছে। বন্যহাতির দল লোকালয়ে প্রবেশ করে ধান, সবজি, গাছ-পালাসহ মানুষের ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

দুর্গাপুর সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাদেকুল ইসলাম জানান, বন্যহাতির দল ভবানীপুর গ্রামে হানা দিয়ে গ্রামের প্রায় ২০০-২৫০ মণ ধানের ক্ষতি করেছে।

বন কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম জানান, প্রতি বছরই বন্যহাতি খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে প্রবেশ করে জানমালের ক্ষতি করে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের বন বিভাগের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়। বন বিভাগের আইন অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহযোগিতা করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান বলেন, ভারতীয় বন্যহাতির দল লোকালয়ে প্রবেশ করে আড়াপাড়া ও পশ্চিমবিজয়পুর, ভবানীপুরসহ কয়েকটি গ্রামের ফসল, বাড়ি-ঘর ভাঙচুরসহ ব্যাপক ক্ষতি করেছে। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের ভেঙে যাওয়া ঘর মেরামতের জন্য দুই হাজার টাকা ও শীতবস্ত্র কম্বল দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদনের মাধ্যমে সহায়তা দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।