ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের সমাধি দেখে হতাশ দর্শনার্থীরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২২
বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের সমাধি দেখে হতাশ দর্শনার্থীরা অবহেলায় অযত্নে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামালের সমাধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামালের সমাধি দেখে হতাশ হচ্ছেন দর্শনার্থীরা। স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পরেও এই শহিদের সমাধি ঘিরে অবকাঠামোগত কোনো উন্নয়ন হয়নি।

 বিভিন্ন স্থান থেকে আসা দর্শনার্থীদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে নিয়মিত।  

সমাধিস্থল পরিদর্শন আসা দর্শনার্থীরা জানান, একজন বীরশ্রেষ্ঠর সমাধি যে মর্যাদায় সংরক্ষণ করা উচিত এখানে তেমনটা দেখলাম না। অযত্ন আর অবহেলায় সমাধিস্থলটি পড়ে আছে। বেশ নোংরা এখানে। আশপাশের মানুষ নানাভাবে সমাধির পরিবেশকে নষ্ট করছে। আমরা অনেকটাই হতাশ।  

এছাড়াও এখানে আসার সড়কের অবস্থাও করুণ বলে জানালেন দশর্নার্থীরা। তারা বললেন, রাস্তার যে বেহাল দশা, এতো কষ্ট করে কেউ এখানে আসতে চাইবে না।  

এই বীর শ্রেষ্ঠের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে অবকাঠামোগত উন্নয়নের দাবি জানিয়েছেন তারা।  

সিপাহী মোস্তফা কামালের জন্ম ১৯৪৭ সালে বরিশাল জেলার দৌলতখান থানার পশ্চিম হাজীপুর গ্রামে। মুক্তিযুদ্ধকালীন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার দরুইন গ্রামের গঙ্গাসাগর এলাকায় তিনি শহিদ হন। আর সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয়।

গঙ্গাসাগর এলাকার বাসিন্দারা বলেন, বীরশ্রেষ্ঠর সমাধি দেখতে বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে লোকজন আসে। লোকসমাগমের কারণে জায়গাটি নোংরা অবস্থা থাকে। আর রাস্তা জরাজীর্ণ হওয়ায় মূল ফটক থেকে সমাধি পর্যন্ত আসতে পায়ে হেঁটে আসতে হয় সবাইকে। এছাড়া আশপাশের বাড়ি ঘরে গবাধি পশু অবাদ করে। সেসব পশুও ভেতরে ঢুকে বিচরণ করে। সব মিলিয়ে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের সমাধিস্থলের পরিবেশ হতাশ করার মতোই। সরকারে পক্ষ থেকে সমাধিটি দেখভালের জন্য একজন লোক নিয়োগ দেওয়া হলে এ সমস্যা কাটবে। সমাধির সৌন্দর্য ঠিক থাকবে।

মোগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম.এ মতিন বাংলানিউজকে বলেন, সমাধির চারপাশে দেয়াল নিমার্ণ ও রেললাইন থেকে সমাধিস্থল পর্যন্ত যাওয়ার সড়কটি পাকাকরণ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।

ভেঙে পড়ে আছে সমাধির ফলক, দেখভালের কেউ নেই

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আল-মামুন সরকার বলেন, এখানে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে একটি পাঠাগার করে দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীরা যাতে শিক্ষা সফরে গিয়ে মোস্তফা কামালের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে সে ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি এর অবকাঠামোগত উন্নয়নেও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।  
 
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহগীর আলম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আর্কষণে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের কার্যবিবরণীভুক্ত করার জন্য পাঠিয়েছি। ইতিমধ্যে জেলা পরিষদের সঙ্গে গেট নির্মাণের জন্য আলোচনা হয়েছে। শুধু শহিদ মোস্তফা কামালের সমাধি নয়; ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের  কবর ও বধ্যভূমিগুলো তালিকাভুক্ত করে সরকারের দৃষ্টিতে আনতে চেষ্টা করছি।

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুক্তিবাহিনীর আখাউড়া প্রতিরক্ষা অবস্থানে হানাদারবাহিনী শক্তিশালী আক্রমণ চালায়। এ সময় লাগাতার ২ দিন আখাউড়ার বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানিদের সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। দরুইন গ্রামে ইপিআরের একটি কোম্পানি অবস্থান নেয়।  

তবে হানাদাররা যাতে সামনের দিক অগ্রসর না হতে পারে সেজন্য একটি ব্রিজ ভেঙে প্রতিরোধ সৃষ্টি করে মুক্তিযোদ্ধারা। কিন্তু পাকবাহিনী গঙ্গাসাগর এলাকা থেকে তীব্র আক্রমণ চালিয়ে দরুইন গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের চারপাশ ঘিরে ফেলে।  

এ সময় দরুইন গ্রামে বাঙ্কার খুঁড়ে মোস্তফা কামাল ও তার সহযোদ্ধারা প্রচণ্ড প্রতিরোধ গড়ে তুলে । ১৭ ও ১৮ এপ্রিল সেখানে লাগাতার যুদ্ধ হয়। টানা ২ দিন মোস্তফা কামাল কাভারিং ফায়ার দিয়ে প্রতিপক্ষকে আটকে রেখে তার সহযোগীদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে সুযোগ করে দেন। এক পর্যায়ে মোস্তফা কামাল ১৮ এপ্রিল বাঙ্কারেই শহিদ হন। এর ঠিক পাশেই তাকে সমাহিত করা হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২২
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।