ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহন করে চলেছে বোমার খোলস

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২২
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহন করে চলেছে বোমার খোলস

পাবনা (ঈশ্বরদী): মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাবনার পাকশীতে পড়েছিল একটি বোমা, যা দীর্ঘসময় অবিস্ফোরিত অবস্থায় ছিল।  

স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই বোমার খোলস মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহন করে চলেছে।

 

বোমার ওই খোলসটি একনজর দেখতে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা।  

বোমাটি পরে পদ্মা নদীর বালু চরে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় বিস্ফোরিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এই বোমার খোলস এখন পাকশী বিভাগীয় রেলের ব্যবস্থাপকের (ডিআরএম) চত্বরে রাখা।

মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিরাপত্তার বেষ্টনীতে বোমার খোলসটি রাখা রয়েছে। লোহার খোলসটির ওজন প্রায় দুই মণের বেশি। লাল-সাদা রং দিয়ে সিমেন্টের বেদির ওপর সযত্নে গাঁথা রয়েছে।  


পাকশী রেলওয়ে শ্রমিকলীগ সভাপতি ইকবাল হায়দার বাংলানিউজকে বলেন, হার্ডিঞ্জ ব্রিজটি যেহেতু রেলওয়ে ব্রিজ, সে কারণেই  মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসাবে পাকশী রেলওয়ের বিভাগীয় সদর দফতরের সামনে রেখে দেওয়া হয়েছে এই বোমার খোলসকে। এটি দেখে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অনুভব করে নতুন প্রজন্ম।  
 
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ বলেন, মহান স্বাধীনতার ৫০ বছর পর আজও বোমার খোলসটি এই এলাকার মুক্তিযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞের একটি স্মৃতি হয়ে আছে নতুন প্রজন্মের কাছে।  

ইতিহাস বলছে, একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর দুপুর ১২টার পর থেকেই ভারতীয় পাঁচটি যুদ্ধবিমান ঈশ্বরদীর পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ওপরে আকাশ দিয়ে চক্কর দিতে থাকে। ওই সময়ে যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে পালিয়ে পাক-হানাদার বাহিনী 'হার্ডিঞ্জ ব্রিজ' দিয়ে ট্যাংক, কামান, জিপ পার করে ঈশ্বরদী আসছিল।

এসময় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ লক্ষ্য করে ৪/৫ টি বোমা নিক্ষেপ করে  ভারতীয় যুদ্ধবিমান। একটি বোমার আঘাতে ব্রিজের ১২ নম্বর স্প্যানের একদিকের অংশ ভেঙে নদীতে পড়ে যায়।  

আরেকটি বোমা পড়েছিল পাকশী রেলস্টেশনের  ৫০ গজ দূরে। সেদিন বোমাটি বিস্ফোরিত না হয়ে অক্ষত ছিল। সেই বোমার খোলসই এটি।


সেই ইতিহাস স্মৃতিচারণ করেন পাবনা এডওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের তৎকালীন সহ-সম্পাদক বীর-মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ রশীদূল্লাহ।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ঠিক বিজয়ের দুইদিন আগের ঘটনা। ঈশ্বরদীতে হানাদারদের সঙ্গে তখনও যুদ্ধ চলছিল। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা পাকশী দিয়ার বাঘইল-সাহাপুরের মাঝামাঝি অবস্থান করছিলাম। ওরা (পাকিস্তানি সেনারা) পাকশী টানেল- বাঘইল রেললাইনের টানেলের লাইনের  ধারে বসে কাঁচা বেগুন খাচ্ছিল। আমাদের সঙ্গে জীবন নামের একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি পাবনার ছেলে। পাক-সেনাদের তিনি পাঞ্জাবী ভাষাতেই আত্মসমর্পনের কথা বলছিলেন। ওদের শেষ বাক্য ছিল 'এ্যাহ- স্যালে বাঙালি হ্যায়' ( এ তো বাঙালি) সেকেন্ডের মধ্যে  তারা গুলি ছুঁড়তে থাকে। আমরাও তখন পাল্টা গুলি চালাই। এ সময় আমরা একত্রিত হয়ে পাক-সেনাদের ঘিরে ফেলি।  


স্মৃতিচারণ করেন পাকশী চন্দ্রপ্রভা বিদ্যাপীঠের তৎকালীন ছাত্রলীগ স্কুল শাখার কর্মী, বর্তমানে পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুল ইসলাম হবিবুল।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, পাক-বাহিনীকে মুক্তিযোদ্ধারা ঘিরে ফেলেছিল। এ খবরে পাকিস্তানি সেনারা আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আমরা বাধ্য হয়ে দুজন ইপিআরের মাধ্যমে দমদম এয়ারপোর্টে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর  কমান্ডারের কাছে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সাহায্য চাই। দুপুরের পর পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রীজের ওপর দিয়ে পাঁচটি যুদ্ধবিমান বোমা নিক্ষেপ করে। একটি বোমার আঘাতে হার্ডিঞ্জ ব্রীজের একটি স্প্যান ভেঙ্গে পদ্মা নদীতে পড়ে যায়। আরেকটি বোমা পাকশী স্টেশনের কাছে পড়ে। বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছিল। আরেকটি বোমা বালুচরের মধ্যে পড়েছিল।

হাবিবুল ইসলাম হবিবুল আরও বলেন,সে দিন হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ওপর দিয়ে যাওয়া বিদ্যুৎ সংযোগের তারের মধ্যে জড়িয়ে পড়েছিল পাকিস্তানি সেনাদের মরদেহ। পাক- সেনাদের ফেলে যাওয়া একটি ট্যাংক ব্রিজের ওপর পড়েছিল। ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার কারণে পাকিস্তানি সেনারা সেটি পার করতে পারেনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২২
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।