ঢাকা: হত্যা নয়; স্বেচ্ছায় সুলতানা কামাল ব্রিজ থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নুর পরশ (২৪)। লাফিয়ে পড়ার সময় ব্রিজের পিলারের কাছেই পড়েন তিনি।
ফারদিনের শেষ অবস্থান ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে প্রাথমিকভাবে এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) রাত ৮টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজিত হয়। সেখানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
কমান্ডার মঈন বলেন, ফারদিনের মাথায় যে আঘাতের কথা বলা হচ্ছে সেটা কতটুকু নিশ্চিত সে ব্যাপারে কিছু বলবো না। তবে ঝাঁপ দেওয়ার সময় ফারদিন পিলারের কাছেই পড়ে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সব বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে।
তিনি বলেন, ফারদিনের মৃত্যু রহস্য নিয়ে আমরা অনেক কাজ করেছি। যার যার সঙ্গে কথা বলা দরকার, চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞ, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা আমাদের ফাইন্ডিংস আমরা তদন্তকারী সংস্থাকে জানিয়েছি।
চনপাড়ায় মাদককারবারিরা তাকে হত্যা করতে পারে এমন তথ্য র্যাব ও ডিবি শুরুর দিকে জানিয়েছিলেন। তখন কোন তথ্যের ভিত্তিতে একথা বলা হয়েছিল?
সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আল মঈন বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আমরা চনপাড়ার আশপাশের স্থানে ফারদিনের অবস্থান ছিল। সে সময় বিভিন্ন সাংবাদিকরাও সেখানে গেছেন, কাজ করেছেন। কেউ হয়তো তাকে চনপাড়ায় নিয়ে হত্যা করতে পারে। বিভিন্ন সময় মাদককারবারিরা অনেককে ধরে নিয়ে চনপাড়ায় ফিডিং দিয়েছে, মালামাল লুট করেছে। চনপাড়ার আশপাশে ফারদিনের লোকেশন ছিল বলে সেখানে আমরা কাজ করেছি। তবে আমরা কখনোই বলিনি ফারদিন মাদকাসক্ত ছিলেন।
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ডাক্তারের বক্তব্য নিয়ে কোনো কথা বলবো না। যে পোশাকে ছিল ফারদিন, ঘড়ি, মোবাইল সবই ঠিক ছিল। ডেডবডির সঙ্গে এসব থাকায় অনেক কিছু বোঝায় যে, অন্তত ছিনতাইকারী তাকে খুন করেনি। মাথা, বুকে আঘাতের চিহ্ন অনেক কারণে হতে পারে। আমরা কনক্লুসিভ নিয়ে গত ২/৩ দিন ধরে কাজ করছি। আমরা মনে করি ডিবি তদন্ত করছে। তারা একটা উপসংহারে যাবেন।
সিসি ক্যামেরায় পাওয়া ফুটেজে লাফ দেয়া ব্যক্তির চেহারা অস্পষ্ট। তার সঙ্গে ফারদিনের চেহারার মিল আপনারা পেয়েছেন? কিভাবে বলছেন কেউ ব্রিজ থেকে কেউ ধাক্কা দিয়ে ফেলেনি?
এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, সিসিটিভি ফুটেজে চেহারা বোঝার উপায় নাই। সময়, পারিপার্শ্বিক তথ্য উপাত্ত, মোবাইল বন্ধ হওয়া, ঘড়ি বন্ধ হওয়া, যেখান থেকে নামছে সেখান থেকে লাস্ট লোকেশন পর্যন্ত দূরত্ব, তদন্তকারী সংস্থাসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলে আমরা প্রাথমিকভাবে মনে করেছি, স্বেচ্ছায় ফারদিন ব্রিজ থেকে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ, ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টসহ অন্যান্য সকল সংশ্লিষ্ট আলামত বিবেচনায় নিয়ে আমাদের তদন্তে বের হয়ে আসে যে, বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন স্বেচ্ছায় সুলতানা কামাল ব্রিজ থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যুবরণ করে।
বুয়েট ক্যাম্পাসে যাওয়ার কথা বলে গত ৪ নভেম্বর ডেমরার কোনাপাড়ার বাসা থেকে বের হন ফারদিন। ওই দিনই তিনি নিখোঁজ হন। পরদিন ৫ নভেম্বর রামপুরা থানায় জিডি করেন তার বাবা কাজী নূর উদ্দিন। নিখোঁজের তিন দিন পর ৭ নভেম্বর বিকেলে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ।
এ ঘটনায় ফারদিনের বাবা মামলা করেন। মামলায় ছেলের বন্ধু আয়াতুল্লাহ বুশরাকে আসামি করেন। ওই মামলায় গ্রেফতার বুশরা পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে রয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২২
এসজেএ/এসএএইচ