ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘নদী রক্ষার ক্ষেত্রে কোনো আপস করিনি’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২২
‘নদী রক্ষার ক্ষেত্রে কোনো আপস করিনি’

ঢাকা: নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, নদী রক্ষার ক্ষেত্রে কোনো আপস করিনি। স্থানীয় প্রশাসন যার যার অবস্থান থেকে কাজ করেছে।

তিনি বলেন, নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদী ও পরিবেশ রক্ষায় সরকার সচেষ্ট। নদী রক্ষায় নৌপরিবহন, পানিসম্পদ, স্থানীয় সরকার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন, শিল্প মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরা কাজ করে যাচ্ছে। করোনাকালীন কাজের গতি কিছুটা স্লো হয়ে গেলেও থেমে যায়নি। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ তখন গুরুত্বপূর্ণ ছিল।  

বৃহস্পতিবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘দেশের গুরুত্বপূর্ণ নদ-নদীর নাব্যতা এবং নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে পরামর্শ প্রদান, সুপারিশ প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের জন্য গঠিত টাস্কফোর্সের ৪র্থ বৈঠকে’ সভাপতির বক্তব্যে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী এসব কথা জানান।

এসময় অন্যান্যের মধ্যে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম এমপি, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় অনলাইনে যুক্ত ছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভি, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণসহ সংশ্লিষ্টরা।

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, নদীরক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন, তারমধ্যে ‘টাস্কফোর্স’ অন্যতম। নদীরক্ষায় আমরা সতর্ক আছি। নদীতীর দখল ও দূষণরোধে কাজ করছি। দূষণের ক্ষেত্রে দূষণকারীদের বিরুদ্ধে মনিটরিং জোরদার করতে হবে। শিল্প মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে। অনেক শিল্প কারখানায় ইটিপি আছে; কিন্তু সেগুলোর সঠিক ব্যবহার হয় না। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন নদী রক্ষায় কাজ করছে। প্রথমত, তারা ৪৮টি নদী নিয়ে কাজ করছে; পরবর্তীতে অন্যান্য নদী নিয়ে কাজ করবে। নদী রক্ষায় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সরকারের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে এসমস্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।  

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আধুনিক বাংলাদেশের উন্নয়নের মহাযাত্রায় বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণ করতে পারবো।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, নদী রক্ষায় সবচেয়ে বড় সাফল্য মানুষকে সচেতন করতে পেরেছি। নদীর প্রবাহ ঠিক রাখতে অবৈধ দখলরোধে সীমানা পিলার, ওয়াকওয়ে এবং বনায়নের জন্য ইকোপার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য বঙ্গবন্ধুর সময়ে সাতটি ড্রেজার সংগ্রহ করা হয়েছিল। ২০০৮ পর্যন্ত আর কোনো ড্রেজার সংগ্রহ করা হয়নি। বর্তমান সরকারের সময়ে ৮০টি ড্রেজার সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫০টি ড্রেজার সংগ্রহ করা হয়েছে। সরকারের নির্বাচনী ওয়াদা অনুযায়ী, ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খননের কাজ চলমান।

সভায় জানানো হয়, ঢাকার চারপাশের নদীসমূহের অবৈধ দখল ও দূষণরোধে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ২০১০ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে। ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ২২ হাজার ৫৩৯টি স্থাপনা উচ্ছেদ এবং ৮৪১ দশমিক ৪৯ একর তীরভূমি উদ্ধার করা হয়েছে। উল্লেখিত এলাকায় ভরাটকৃত ২ লাখ ঘনমিটার বালু/মাটি/রাবিশ এবং ১.৫ লাখ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। নদী তীর দখলের অভিযোগে বিভিন্ন জনের থেকে ৩৮ লাখ ৩৬ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে এবং ২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত তীরভূমি দখল করে রাখা পণ্য নিলামের মাধ্যমে ১৮ কোটি ৭২ লাখ ৪৮ হাজার টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে।

সভায় আরও জানানো হয়, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ-শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর উচ্ছেদকৃত তীরভূমিতে ‘সীমানা পিলার স্থাপন, তীররক্ষা, পরিবেশ সংরক্ষণ, ওয়াকওয়ে, জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণের লক্ষে প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ৭ হাজার ৫৬২টি সীমানা পিলার নির্মাণ, ৫২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, ১৪টি ভারী জেটি এবং তিনটি ইকোপার্ক নির্মাণ করা হবে। এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৪৭৯টি সীমানা পিলার নির্মিত হয়েছে; ১ হাজার ১০১টির কাজ চলমান এবং ১ হাজার ৯৮২টির দরপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ৬টি জেটি নির্মিত হয়েছে; ৮টি জেটির নির্মাণ কাজ চলমান। ১০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মিত হয়েছে; ৪২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণাধীন। দু’টি ইকোপার্ক নির্মিত হয়েছে; একটির নির্মাণ কাজ চলমান।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২২
এমআইএইচ/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।