ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

জমি হারানোর আতঙ্কে যে গ্রামের মানুষ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২২
জমি হারানোর আতঙ্কে যে গ্রামের মানুষ অন্যের নামে খারিজ হয়ে যাওয়ায় জমি হারানোর আতঙ্কে ভুক্তোভোগীরা

কুমিল্লা: কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় একজনের জমি আরেকজনের নামে খারিজ করার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জায়গাও অন্য কারও নামে খারিজ হয়েছে বলে অভিযোগ।

 

এতে জমি হারানোর আতঙ্ক বিরাজ করছে ওই উপজেলার বাসিন্দাদের মাঝে। আর এই আতঙ্কের নেপথ্য ‘খলনায়ক’ ওই উপজেলার ভূমি অফিসের কানুনগো মো. সেলিম।

অভিযোগ, মুরাগনগরে ঝারু মিয়া নামে আত্মীয় আছেন কানুনগো মো. সেলিমের। তার মাধ্যমে টাকা নিয়ে একজনের জমি আরেকজনের নামে উঠিয়ে দেন সেলিম। এভাবে গায়েবি খারিজের ঘটনা ঘটছে।

জমি নিয়ে বিপাকে পড়া দড়ানিপাড়া গ্রামের ভুক্তভোগীরা এ অভিযোগ করেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, দড়ানিপাড়া গ্রামের অন্তত ১০জন মানুষ এখন নিজের ঘর বাড়ি বাঁচাতে দৌড়ের ওপর আছেন। তাদের মধ্যে একজন আমির হোসেন। মাস তিনেক আগে তিনি জানতে পারেন তার ৩০ বছর আগে কেনা সম্পত্তির খারিজ করে নিয়েছেন তার আরেক ভাই।  

আমির হোসেনের মতো ভুক্তোভোগী একই গ্রামের ইউসুফ মিয়া ও স্বপন মিয়া।  তাদের বাবা-দাদাদের থাকার জায়গায় খারিজ করে ফেলেন পার্শ্ববর্তী খোকন নামের আরেক ব্যক্তি।  

এসব ভুক্তভোগীরা জানান, সেলিম কানুনগো যোগদানের কিছুদিন পর থেকে জায়গা-জমির এমন গায়েবি খারিজ শুরু হয়।  

স্থানীয় কামরুল হোসেন বলেন, পরিশ্রমের টাকায় কেনা জমি। খারিজ হয়ে গেছে অন্য আরেকজনের নামে। সেলিম কানুনগো আসার পর থেকে পুরো উপজেলার একই হাল।  

আমির হোসেনের স্ত্রী হোসনেআরা বেগম বলেন, ২০০৯ সালে ভাসুর দেলোয়ার প্রফেসরের কাছ থেকে টমেটোর বাগানের জায়গাটা কিনেছি। জঙ্গল আর বড় গর্ত ছিল তখন। টাকা জমিয়ে জায়গাটাকে ভরাট করে ছেলে-মেয়ে থাকার উপযুক্ত করে বিল্ডিং করেছি। কিছু জায়গায় সবজির চাষ করি। আর এখন শুনি আমার আরেক ভাসুর নাকি জমিটা খারিজ করে নিয়েছে। কানুনগো সেলিম কোনো বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে আমাদের জমিটা টাকা খেয়ে আরেকজনের নামে খারিজ করে দিয়েছেন।  

আমির হোসেন বলেন, আমার ভাই দেলোয়ারের কাছ থেকে তার অংশ কিনে নিই। আরেক ভাই ভাই জাকির হোসেন এখন তার জায়গা বলে আমার ঘর তোলা জায়গা খারিজ করেছে। আর টাকার বিনিময়ে এই কাজ করেছে কানুনগো সেলিম।  

এ বিষয়ে অভিযুক্ত জাকির হোসেন বলেন,  বাবার জায়গার কিছু অংশ আমি পাই, তাই খারিজ করেছি। সামনে আরেকটি শুনানি আছে।

স্থানীয় গোমতা ইসহাকিয়া হাইস্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আলমগীর হোসেন বলেন, সেলিম কানুনগোকে দিয়ে স্কুলের প্রায় ৭০ শতক জায়গা নিজের নামে খারিজ করে নিয়েছেন স্থানীয় এক বাসিন্দা।  

গায়েবি খারিজের অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত ঝারু মিয়া বলেন, সেলিমকে আমি চিনি একজন কানুনগো হিসেবেই। তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। কে বলেছে আমার নাম? আমি খোঁজ নেব। আমার নামে এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
 
এতোসব অভিযোগের বিষয়ে কানুনগো সেলিম বলেন, ওই এলাকায় আমার কোনো আত্মীয়স্বজন নেই। আমরা সব কাজ নিয়ম মতোই করি। আমির হোসেনের জায়গাটা নিয়ে এক পক্ষ আপত্তি জানিয়েছে। আমরা সাতদিন পর রিপোর্ট দেব বলেছি। ব্যস্ততায় দিতে পারিনি। শিগগিরই শুনানি ডাকব। আর স্কুলের জায়গা নিয়ে ঝামেলা নেই। আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সঠিক নয়।

মুরাদনগর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নাজমুল হূদা বলেন, আমার কাছে এই বিষয়ে কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ আসলে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২২
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।