বরিশাল: সাপে কাটা রোগীদের সারিয়ে তুলতে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে মন্ত্র পড়ে চিকিৎসার ঘটনা বহুযুগ আগের। তারপরও দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রাগ ঐতিহাসিক এ পন্থায় চিকিৎসার খবর পাওয়া যায় কম বেশ।
গত বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে এলাকায় সাপের ছোবলের শিকার হন সালাম ফকির নামে এক যুবক। তিনি বিষয়টি বুঝতে পারে বাড়ি ফেরার পর। পরে চিকিৎসা দিতে পরিবারের লোকজন তাকে নিয়ে যায় পার্শ্ববর্তী মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার দক্ষিণ রমজানপুর গ্রামের কবিরাজ আলী আকবর ফকিরের কাছে।
কবিরাজের চিকিৎসা কাজে না লাগায় তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে কবিরাজ আলী আকবর ফকির নিজেই আসেন সালামের বাড়িতে। এ সময় তিনি ঝাড়ফুঁক দিয়ে সালামকে সুস্থ করার চেষ্টা করেন। তারপরও কাজ না হওয়ায় তিনি সালামের শরীরে থেকে সাপের বিষ নামাতে আধ্যাত্মিক চিকিৎসার কথা বলেন।
তার কথা মতো বাড়ির লোকেরা সালামকে উঠানে নিয়ে আসেন। মাটিতে কলাগাছ পুঁতে সেটির সঙ্গে সুতা লাগিয়ে সালামের পায়ে বেধে দেন। তার মাথায় পরিয়ে দেওয়া হয় কড়ি। এরপর ঢাক-ঢোল, কাসরসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে মন্ত্র পড়তে শুরু করেন কবিরাজ। মন্ত্র পড়ার সময় দলের সদস্যসহ তাকে নাচ করতেও দেখা যায়।
ঘটনা এখানেই শেষ হয়নি। মন্ত্রের পড়ার ফাঁকে মাটিতে পোঁতা কলাগাছে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় মোমবাতি, আগরবাতি ও ধূপ। মাটিতে ঘেরাও দেওয়া সীমানার মধ্যে বসে কখনও নাচ করেন কবিরাজ। আবার কখনও বেহুলা সাজিয়ে নাচানো হয় এক কিশোরীকে। কবিরাজ ফকিরের দাবি, তার এই আধ্যাত্মিক চিকিৎসায় অদৃশ্যভাবে ধীরে ধীরে সালামের শরীর থেকে বিষ নেমে জমা হচ্ছে কলাগাছে। সুতার মাধ্যমে বিষ কলা গাছে যাওয়ায় ভেঙে যাচ্ছে গাছের ডগা। এতে সুস্থ হয়ে উঠছেন সালাম।
শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া কবিরাজ ফকিরের এই আধ্যাত্মিক চিকিৎসা চলে শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) রাত পর্যন্ত।
মন্ত্র পড়ে বিষ নামানো ও কবিরাজের নাচ দেখতে এ তিনদিন সালামের বাড়িতে ভিড় করে এলাকাবাসী। এ ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয় ফুল্লশ্রী গ্রামে।
সালামের বড় ভাই এরশাদ ফকির এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বাড়িতে কবিরাজের এমন চিকিৎসায় সালাম সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
বিষ নামানো দেখতে আসা আভা মুখার্জী, মোকলেচ ফকির, আসলাম ফকির, জুলহাস পাইক, সজল বালাসহ স্থানীয় লোকজন জানান, এর আগেও তারা একাধিকবার এভাবে সাপে কাটা রোগীর বিষ নামানো দেখেছেন। তারাও এই আধ্যাত্মিক চিকিৎসায় মাধ্যমে ভালো হয়েছেন। তবে আবার কেউ কেউ বলছেন সাপে কাটা রোগীর আধ্যাত্মিক এই চিকিৎসা দেখতে এসেছেন প্রথমবার।
আধ্যাত্মিক চিকিৎসা দেওয়া কবিরাজ আলী আকবর হোসেন ফকির জানান, তার ৬ বছর বয়স থেকে ওস্তাদ অব্দুল আলী গারুলীর কাছে তিনি শিক্ষা নিয়েছেন। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে তিনি কবিরাজি চিকিৎসা দিচ্ছেন। আধ্যাত্মিক এই চিকিৎসার মাধ্যমে সাপে কাটা রোগীকে সুস্থ করে পারিশ্রমিক রের ৩০ থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এখন পর্যন্ত এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০০ সাপে কাটা রোগীকে সুস্থ করেছেন তিনি।
সাপে কাটা যুবক মো. সালাম ফকিরের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তার শরীর নীল বর্ণ ধারণ করেছিল। সারা শরীরে তিনি অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব করেন। কবিরাজের চিকিৎসা নিয়ে তিনি সুস্থ হয়েছেন বলে দাবি করেন সালাম।
এ ব্যাপারে আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ডা. বখতিয়ার আল মামুন জানান, এ ধরণের কোনো চিকিৎসার ভিত্তি নেই। এটা চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা। এতে সাপে কাটা রোগীর বড় ধরণের বিপদের আশংকা থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২২
এসএম/এমজে