ঢাকা, সোমবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

জয়িতারা সমাজের বাধা পেরিয়ে সফলতার প্রতীক: ইন্দিরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২২
জয়িতারা সমাজের বাধা পেরিয়ে সফলতার প্রতীক: ইন্দিরা

বরিশাল: মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেছেন, নারীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নকে বেগবান করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালে জয়িতা কার্যক্রমের সূচনা করেন। জয়িতার কার্যক্রম বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে এবং নারীবান্ধব একটি বিপণন নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে।

জয়িতাকে কেন্দ্র করে তৃণমূল পর্যায়ে নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস, উৎসাহ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বরিশাল বিভাগের শ্রেষ্ঠ জয়িতাদের সম্মাননা দেওয়া এবং নারী নির্যাতন ও বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বৈষম্যহীন ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকার জয়িতাদের চিহ্নিত করে তাদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত করে তুলতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। আজকের এ জয়িতা তারই উদাহরণ। তারা সমাজের বাধা পেরিয়ে সফলতার প্রতীক।

তিনি বলেন, সরকারের নারীবান্ধব উন্নয়ন ও নীতি কৌশল বাস্তবায়নের ফলে গত একযুগে সরকারি, বেসরকারি, আত্মকর্মসংস্থানসহ সব ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হারে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। এসব কর্মজীবী নারীদের সন্তানদের সুরক্ষা, শিক্ষা ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ মন্ত্রণালয় বর্তমানে ১১৯টি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র পরিচালনা করছে। বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নির্মিতব্য মহিলা কমপ্লেক্স ভবন ও সব বৃহৎ ও সুউচ্চ সরকারি ভবনে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারাজীবনই এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন। তিনি নির্যাতিত, নিপীড়িত, শোষিত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। ১৯৭২ সালে সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদে নারীর সম-অধিকার নিশ্চিত করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে নারী পুনর্বাসন বোর্ড গঠন করেন। নির্যাতিত মহিলা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরাঙ্গনা উপাধি দিয়ে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্যাতিত বীরাঙ্গনা নারীদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করেন।

তিনি বলেন, জাতির পিতার পথ ধরে তার কন্যা দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা নারীর উন্নয়ন, নারীর কর্মসংস্থান, নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীর সম-অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন এবং করছেন। নারীর দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ানো, কর্মসংস্থান, নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং উৎপাদিত পণ্যের ব্র্যান্ডিংকরণে জয়িতা ফাউন্ডেশন গঠন করেছেন। নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য এবং সেবা বিপণন ও বাজারজাত করার জন্য দেশব্যাপী নারীবান্ধব অবকাঠামো গড়ে তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন এবং বাস্তবায়ন করছেন। কর্মজীবী নারীদের নিরাপদ আবাসনের জন্য ৯টি কর্মজীবী নারী হোস্টেল, তাদের শিশুদের সুরক্ষার জন্য ১১৯টি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র চলমান আছে। শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র আইন ২০২১ প্রণয়ন করা হয়েছে। জেলা ও বিভাগীয় জেলা শহরে ১১টি ভবন নির্মাণ প্রকল্প খুব শিগগিরই একনেকে এ বরাদ্দের জন্য অনুমোদিত হবে। সেখানেও কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল ও শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাছাড়া প্রতিটি জেলা-উপজেলায় কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল ও শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। ২০৩০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্মস্থলে নারীদের ‘৫০:৫০’ উন্নীত করার অঙ্গীকার করেন। তা বাস্তবায়নের জন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় দুস্থ-অসহায় নারীদের কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, নারী উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন, নারীর সম-অধিকার এবং সম-মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন পরিকল্পনা, নীতি, আইন প্রনয়ন ও অগ্রগতিশীল কৌশল গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছেন, যা সারা বিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়নে নারী উন্নয়নে বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী। সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় একেবারে শীর্ষে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালে লন্ডনে গার্লস সামিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে বাল্যবিয়ের হার শূন্যে নামিয়ে আনার অঙ্গীকার করেন। বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন প্রণয়ন ২০১৭, কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ, মেয়ে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তিসহ বিভিন্ন কমিটি গঠন করা সত্ত্বেও বাল্যবিয়ে রোধ হচ্ছে না। বাল্যবিয়ে ও নারী নির্যাতন নির্ভর করে সোশ্যাল নরমস বিলিফ ভ্যালু ও দৃষ্টিভঙ্গি ও অন্যান্য রেলিভেন্ট ফ্যাক্টরের ওপর।

বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন উল আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফরিদা পারভীন, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম, জাতীয় মহিলা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আবেদা আক্তার, বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার ইউনুস প্রমুখ।

এর আগে অতিথিরা বরিশাল বিভাগের পাঁচজন শ্রেষ্ঠ জয়িতাকে সম্মাননা দেন।  সম্মাননাপ্রাপ্ত জয়িতারা হলেন- অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী ক্যাটাগরিতে জবেদা বেগম, শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী ড. রহিমা নাসরিন, সফল জননী ক্যাটাগরিতে মাজেদা বেগম আলেয়া, নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যোমে জীবন শুরু করা মরিয়ম বেগম ও সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখায় রেহানা বেগম।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২২
এমএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।