ঢাকা, রবিবার, ৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৩ জুন ২০২৪, ১৫ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

দুর্ঘটনা রোধে যেসব সুপারিশমালা দিলো নিসচা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০২৩
দুর্ঘটনা রোধে যেসব সুপারিশমালা দিলো নিসচা

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) জানিয়েছে, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে সারা দেশে সড়ক, নৌ ও রেলপথে দুর্ঘটনার হার ২৯ শতাংশ বেড়েছে। ২০২১ সালে সারাদেশে এ দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ৪৯৮৩টি, ২০২২ সালে এ সংখ্যা ৭০২৪টি।

 

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এসব দুঘর্টনার বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছে নিসচা। এরইসঙ্গে  দুর্ঘটনা রোধে বেশ কিছু সুপারিশমালা দিয়েছে সংগঠনটি।

বুধবার (৪ জানুয়ারি) ২০২২ সালের সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান উপস্থাপনবিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে এ সুপারিশমালা দেয় নিসচা।  

জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ২০২২ সালের দুর্ঘটনাবিষয়ক এক প্রতিবেদন তুলে ধরে সুপারিশমালা প্রকাশ করেন নিসচার চেয়ারম্যান অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন।  

সুপারিশমালালো হলো- সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর পুরোপুরি বাস্তবায়ন সংক্রার জরুরি কার্যক্রম গ্রহণ করা, প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক নির্দেশিত ৬ দফা এবং ১১ দফা সম্বলিত টাস্ক ফোর্স কর্তৃক দাখিলকৃত ১১১টি সুপারিশনামা যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করা। সেইসাথে হাইওয়েতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ তত্ত্বাবধানে উচ্চ পর্যায়ের মনিটরিং সেল গঠন করে তাদের মাধ্যমে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে মহাসড়কের যাবতীয় বিষয়সমূহ মনিটরিং করা। করোনা নিয়ে সরকারিভাবে যেরকম প্রচার প্রচারণা চালানো হচ্ছে। একইভাবে সড়ক দুর্ঘটনা নিরসনে প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে। বিভিন্ন মিডিয়া মাধ্যমে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান প্রচারের যে ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছে ব্যাপকভাবে তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।

এছাড়া স্কুলের পাঠ্যক্রমে সড়ক দুর্ঘটনারোধের বিষয়সমূহ অন্তর্ভূক্ত করার যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে তা অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে। ঢাকা রুট ফ্রান্সাইজের যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন জরুরি।  ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করা, যত্র-তত্র গাডড়ি পার্কিং, যেখানে-সেখানে যাত্রী ওঠানো-নামানো, ওভার টেকিং, পাল্টা-পাল্টি ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, অতিরিক্ত যাত্রী ও মাল বোঝাই করা, গাড়ির ছাদে যাত্রী বহন করা, ওভার ব্রিজ কিংবা আন্ডারপাস বা জেব্রা ক্রসিং থাকা সত্ত্বেও সেগুলো ব্যবহার না করার প্রবণতাকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল মহাসড়কের মতো সকল মহাসড়ক এবং প্রধান সড়কে একমুখী চলাচলের সিদ্ধান্ত নিয়ে দীর্ঘ এবং উচ্চতাসম্পন্ন সড়ক বিভাজন তথা রোড ডিভাইডার-এর ব্যবস্থা করতে হবে।

সকল মহাসড়ক এবং প্রধান সড়ককে অবশ্যই ন্যূনতম চার লেনে উন্নীত করতে হবে। মহাসড়কের পাশে হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের মত দুপাশে ধীর গতির যানবাহন চলাচলের জন্য আলাদা সড়ক (সার্ভিস রোড) নির্মাণ করতে হবে। পথচারীদের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য ফুটপথগুলো দখলমুক্ত করতে হবে। যেখানে ফুটপাত নেই সেখানে ফুটপাত তৈরির ব্যবস্থা করতে হবে। নিয়মিত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে পুনরায় যেনো ফুটপাত দখল না হয় এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। সড়কের ত্রুটিগুলো অচিরেই দূর করতে হবে।

সুপারিশমালায় আরও বলা হয়, দেশের ৬৬ টি প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণরত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সড়ক দুর্ঘটনারোধে করণীয় সম্পর্কিত যে প্রশিক্ষণ নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর নিজস্ব অর্থায়নে প্রদান করা হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে প্রতিটি শিক্ষক তাদের স্কুলে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক ও স্থানীয় জনগণকে সচেতন করছে, একইভাবে ইমাম প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটসহ মাদ্রাসা শিক্ষক ও স্কুল-কলেজের শিক্ষকদেরকে সরকারি খরচে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে করণীয় সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। যাতে তারা স্ব স্ব এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনারোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। সেইসঙ্গে স্কুল কার্যক্রমের মধ্যে স্কাউট, গার্লস গাইড, কাব এর ইউনিটগুলোর মত প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে একটি রোড সেফটি ইউনিট গঠনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

দুর্ঘটনা বৃদ্ধির কারণ জানাতে নিসচা চেয়ারম্যান বলেন, মোটরসাইকেল চালকদের বেপোরয়া চালানো এবং মানসম্মত হেলমেট ব্যবহার না করা, সড়ক, মহাসড়ক ও গ্রামীণ সড়কে গতিসীমা নির্ধারণ না করা, চালকদের মাদকে আসক্তি, পথচারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব, বিপদজনক ওভারটেকিং ও ওভারলোডিং করা, বিরতি ছাড়াই দীর্ঘসময় ধরে গাড়ি চালনা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালনা বন্ধে আইনের প্রয়োগ না থাকা, সড়ক ও মহাসড়কে বৈধ ও অবৈধ গাড়ি বৃদ্ধি (বিশেষ করে দুই চাকার যানবাহন), মহাসড়কের নির্মাণ ত্রুটি, একই রাস্তায় বিভিন্ন গতির যানবাহন চলাচল, রাস্তার পাশে হাটবাজার ও দোকানপাটের কারণে সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নিসচার ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হক কামাল, মহাসচিব লিটন এরশাদ, উপদেষ্টা মো. হামিদ, ড. আইয়ুবুর রহমান খান, ব্র্যাকের প্রোগ্রাম ম্যানেজার এম খালিদ মাহমুদ, জিএইচএআই এর কান্ট্রি কোর্ডিনেটর ড. শরীফুল আলম, সিআইপিআরবি এর ডিরেক্টর ড. সেলিম মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০২৩
এসসি/এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।