ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শোকজ নোটিশ পেয়ে প্রধান শিক্ষকের আত্মহত্যা!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০২৩
শোকজ নোটিশ পেয়ে প্রধান শিক্ষকের আত্মহত্যা!

সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার শ্যামনগরের কৈখালী এসআর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবুল বাসার আত্মহত্যা করেছেন। তার পরিবারের দাবি, বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের শোকজ নোটিশ পেয়ে তিনি এটি করেছেন।

বুধবার (০৪ জানুয়ারি) বেলা দেড়টার দিকে তিনি উপজেলা সদরের গোপালপুর এলাকার ভাড়া বাসায় গাছের সঙ্গে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন।

পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে উপ-পরিদর্শক রেজাউল করিমের নেতৃত্বে শ্যামনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহটি উদ্ধার করে।

নিহত আবুল বাসার শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী গ্রামের মৃত এন্তাজ আলী গাজীর ছেলে। তিনি কৈখালী এসআর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন।

সদ্য গঠিত বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ শোকজ করার ঘটনায় মানসিক চাপে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করছেন নিহতের পরিবার।

তবে পরিচালনা পর্ষদের দাবি, আগের কমিটি বিভিন্ন পদে নিয়োগের জন্য প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা নিলেও তাদের চাকরি দেয়নি। নিয়োগ বঞ্চিতদের টাকা ফেরত দিতে না পারার ঘটনায় তিনি এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন।

নিহতের ভাই মো. আবুল খায়ের জানান, গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনের কারণে গত কয়েক দিন ধরে তার ভাই ছুটিতে ছিলেন। আকস্মিকভাবে মঙ্গলবার (০৩ ডিসেম্বর) দুপুরে তিনি বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের বর্তমান কমিটির সভাপতির স্বাক্ষরিত একটি শোকজ নোটিশ হাতে পান। সেখানে অর্থ তসরুফের অভিযোগ এনে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিভিন্ন চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে নেওয়া প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা ফেরত দিতে বলা হয়। টাকা ফেরত না দিলে তাকে চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেওয়া হয়।

আবুল খায়ের আরও জানান, শোকজন নোটিশ পাওয়ার পর থেকে তার ভাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এক পর্যায়ে বুধবার দুপুরে দুই ছেলে নানার বাড়ি ও স্ত্রী অসুস্থ স্বামীর ওষুধ কিনতে বাসার বাইরে যাওয়ার সুযোগে তিনি গলায় ফাঁস দেন। এ ঘটনায় তারা সভাপতিসহ পরিচালনা পর্ষদের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করবেন। তার দুই ছেলে উচ্চ ম্যাধমিক ও স্নাতক পর্যায়ে লেখাপড়া করেন বলেও তিনি জানান।

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি কৈখালী ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আব্দুর রহিম জানান, আগের কমিটির কাছে টাকা দিয়ে চাকরি না হওয়া কয়েকজনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হয়।

তিনি আরও জানান, তবে আগের কমিটির সভাপতিসহ অন্যান্যরা টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় পর চাকরি বঞ্চিতদের টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে প্রধান শিক্ষক বেকায়দায় পড়েন। টাকা দিয়েও চাকরি না পাওয়া প্রার্থীরা সম্প্রতি টাকা ফেরত চাওয়ায় প্রধান শিক্ষক আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি পদের নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী ঘটনার দায় তার ওপর চাপাতে চেষ্টা করছে বলেও তিনি দাবি করেন।

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি ও প্রাক্তন চেয়ারম্যান রেজাউল করিম জানান, বর্তমান সভাপতি প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয় থেকে সরাতে নানান ষড়যন্ত্র করছে। আবুল বাসারকে অপসরাণসহ মামলার হুমকি দিয়ে শোকজ করার মাধ্যমে তাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করা হয়েছে।

শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল ইসলাম বাদল জানান, পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছে। নিহতের পরিবার এ ঘটনায় অভিযোগ করলে পুলিশ পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০২৩
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।