রাজশাহী: রাজশাহীতে তাপমাত্রার পারদ নিচে নামলো আবারও। রোববার (৮ জানুয়ারি) সকাল ৭টায় রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবহাওয়াবিদ কামাল উদ্দিন জানান, রাজশাহীর ওপর দিয়ে মূলত গত ১৬ ডিসেম্বর পর থেকে এই নিয়ে তিনটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে ১৬ ডিসেম্বর রাজশাহীতে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
এরপর তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে দুই অংকের ঘরে ওঠে। প্রথম দফার মৃদু শৈত্যপ্রবাহ কেটে যাওয়ার পর গত ২৯ ডিসেম্বর ছিল ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে রোদ ওঠায় দ্বিতীয় দফার এই মৃদু শৈত্যপ্রবাহ কাটে পরদিনই। ৩০ ডিসেম্বর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর ৩১ ডিসেম্বর রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তারপর নতুন বছর শুরু হয় ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা দিয়ে। এরপর ২ জানুয়ারি ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৩ জানুয়ারি ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৪ জানুয়ারি ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৫ জানুয়ারি ১০ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৬ জানুয়ারি ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, গতকাল শনিবার ৭ জানুয়ারি ৯ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বশেষ আজ ৮ জানুয়ারি ৮ দশমিক ৫ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহীতে। আর এটি চলতি মৌসুমের তৃতীয় দফার মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।
সাধরণত দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। আর তাপমাত্রা ৮ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলে তাকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। এছাড়া তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। ফলে বর্তমানে রাজশাহীর ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন- এই আবহাওয়া কর্মকর্তা।
এদিকে রাজশাহীর তাপমাত্রা যখন এক অঙ্কের ঘরে অবস্থান করছে তখন আবহাওয়া যে কতটা শীতল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রায় এক সপ্তাহ থেকে শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়েছে পদ্মাপাড়ের এই শহর। তাপমাত্রা কেবল নামছেই।
আর মাঝেমধ্যে সামান্য বাড়লেও শীতের কোনো হেরফের হচ্ছে না। অনেক সময় সকাল গড়িয়ে দুপুর পার হয়ে গেলেও দেখা মিলছে না সূর্যের। আর সূর্যের দেখা মিললেও তার উত্তাপ শীতার্ত মানুষের শরীরে উষ্ণতা ছড়াতে পারছে না। দিনের বেলায় সূর্যের বিলম্বিত দর্শন রাতে শীতের তীব্রতাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এমন পরিস্থিতিতে বেকায়দায় পড়েছেন দিনমজুর, ভিক্ষুক, রিকশাচালকসহ নিম্নআয়ের মানুষ।
তাই শীত থেকে বাঁচতে এসব মানুষের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে এখন রাস্তার পাশে ফুটপাতের দোকান। রোববার সকালে সাহেববাজার জিরোপয়েন্টের ফুটপাতে উল্লেখসংখক মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। শীতের কাপড় কেনায় ধুম পড়েছে।
ফুটপাতের দোকানিদের হাঁক-ডাকই জানান দিচ্ছিলো যে শীত নিবারণের জন্য সেখানে গরম কাপড় কমদামে বিক্রি হচ্ছে। তবে বরাবরের মত সাধারণ দোকানিদের বিরুদ্ধে ক্রেতাদের সেই একই অভিযোগ 'দাম বেশি'।
এর পরও আপন খেয়ালে সুর ও ছন্দ দিয়ে দোকানিরা ডাকছেন- 'আসেন আপা, দেইখ্যা লন, বাইচ্ছা লন, যেটা নেবেন মাত্র ১০০ টাকা, ১৫০ টাকা'। দাম সাধ ও সাধ্যের মধ্যেই হওয়ায় তাদের এমন ডাকে সাড়া দিচ্ছেন নিম্নআয়ের অনেকেই।
শুধু একটি দোকানই নয়, শীত বাড়তে থাকায় মহানগরীর মোড়ে মোড়ে এখন বসেছে এমন অস্থায়ী গরম কাপড়ের দোকান। যাদের মাধ্যমে নিম্নশ্রেণির মানুষরা কম দামে কাপড় পাচ্ছেন আবার দোকানিরাও লাভবান হচ্ছেন।
মহানগরীর সাহেব বাজার জিরোপয়েন্ট ঘেঁষে গড়ে ওঠা ফুটপাতে গরম কাপড় কিনছিলেন, শেফালি বেগম নামের এক গৃহিণী। তিনি বলেন, 'আমরা গরীব মানুষ। মার্কেট থেকে বেশি দাম দিয়ে ভালো গরম কাপড় কেনার সামর্থ নেই। যার কারণে ফুটপাত থেকে মেয়েদের জন্য গরম কাপড় কিনছি। কিন্তু যেই কাপড় গত বছর ২৫০ টাকা করে কিনেছি এ বছর সেটা ৪০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। তাই দাম আরও কম হলে ভালো হতো। আর যারা ডেকে ডেকে গরম কাপড় বিক্রি করছেন তাদের কাছে কাপড়ের সাইজ মেলানোই দায়'। যোগ করেন এই গৃহিণী।
মহানগরীর গণকপাড়া মোড়ে গরম কাপড় কিনতে এসেছিলেন মিনারুল ইসলাম। তিনি বলেন, কদিন ধরে শীত বাড়ছে। তাই বাচ্চার জন্য পোশাক কিনতে এসেছি। হঠাৎ করে শীত বেশি হওয়ায় গরম কাপড়ের দামও বেশি চাচ্ছেন দোকানিরা। সব রকম বাচ্চাদের কাপড়ের দাম চাওয়া হচ্ছে গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। তাহলে কিভাবে কী হয় বলেন, প্রশ্ন রাখেন তিনি।
তবে কেবল শেফালি বেগম বা মিনারুলই নয়, বেশিরভাগ ক্রেতারই কমবেশি একই অভিযোগ। কিন্তু এতে কারও কিছুই করার নেই! শীত থেকে রেহাই পেতে গরম কাপড় কেনা লাগবেই। যার কারণে দাম বেশি হলেও তা কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতারা।
এ বিষয়ে কথা হয় সাহেব বাজার এলাকার ফুটপাতের গরম কাপড় ব্যবসায়ী শরীফুল ইসলামের সাথে।
তিনি বলেন, কয়েক দিন ধরে ঠাণ্ডা বেশি পড়ার কারণে আমাদের বেচাকেনা বেশ ভালো হচ্ছে। আমাদের দোকানে ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত জ্যাকেট রয়েছে। তাছাড়া কিছু মোটা শার্ট রয়েছে। যেগুলো ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দরেই বিক্রি করছি।
তিনি আরও বলেন, অনেকে ঘুরে যাচ্ছে দাম বেশি বলে কিন্তু আমাদের কিছুই করা নেই। আমরা সামান্য খুচরা ব্যবসায়ী। আমরা যে দামে কিনি সেখান থেকে কিছু লাভ করে বিক্রি করতে হয়।
মহানগরীর গণকপাড়া এলাকার ফুটপাতের ব্যবসায়ী সাব্বির হোসেন বলেন, আমাদের সারা বছর তেমন ব্যবসা হয় না। শীত এলেই ভালো ব্যবসা হয়। যেমন বর্তমানে মোটা ফুলহাতা গেঞ্জি ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি করছি এবং পাতলাগুলো ১৫০ টাকা দরে। বিশেষ করে বর্তমান বাজারে হুডির চাহিদা বেশি। হুডি বিক্রি করছি ৩০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। গোল কলারের মোটা গেঞ্জি দাম ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকা'।
এছাড়াও ছোট্ট শিশুদের পাইজামা ৫০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত এবং শিশুদের মোটা কাপড়ের গেঞ্জির দাম ১৫০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। টুপি ৫০-১০০ টাকা, শিশুদের হাতমোজা ৩০-৭০ টাকা এছাড়াও শিশুদের সেট ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। আর সবকিছুর দামই বাড়ছে তাই শীতবস্ত্রের দামও বেড়েছে বলে জানান- এই ব্যবসায়ী।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০২৩
এসএস/এসএএইচ