ফরিদপুর: ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় এক বৃদ্ধ দম্পতিকে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করতে বাড়িঘর ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছে এক প্রভাবশালী ইউপি সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতার বিরুদ্ধে। উচ্ছেদের পর ওই বৃদ্ধের পরিবার এখন খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন।
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) ঘটনাটি ঘটেছে ময়না ইউনিয়নের ময়না-বানিয়াড়ী মৌজার সীমান্ত চরবর্নি বাজার সংলগ্ন বর্নিচর গ্রামে। প্রায় দেড় শতাধিক লোকজন নিয়ে এ হামলা চালানো হয় বলে দাবি ওই বৃদ্ধের পরিবারের।
অভিযোগটি উঠেছে, উপজেলার ময়না ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন শেখ ও ময়না ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি হাসিবুল হাসানের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী বৃদ্ধ মো. হাফিজার অভিযোগ করে বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকে ওই জমি আমাদের ভোগ দখলে। ছয় মাস আগে ঘর তুলে আমরা বসবাস শুরু করি। এটা বেলজানী পূর্বপাড়ার মেতালেব শরীফের সঙ্গে আমাদের ৩৬ শতক জমি। যা এসএ দাগ নম্বর-৬৩ এর সঙ্গে ময়না মৌজার এসএ দাগ নম্বর-৮৪ এর ২১ শতাংশ ও একই মৌজার ৫২ দাগের ২৬ শতাংশ জমি এওয়াজ বদল শর্তে ভোগ দখল করে আসছি। জমির মধ্যে ১১ শতাংশ গত বিএস রেকর্ডে মোতালেব শরীফের ছেলে অহম ও তহম শরীফ রেকর্ড করে নেয়। রেকর্ড শর্তে এ জমি সাড়ে পাঁচ শতাংশ বানিয়াড়ী গ্রামের সাহেব আলী ও সাড়ে ৫ শতাংশ ময়না ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি হাসিবুল ইসলামের নিকট অহম ও তহম বিক্রি করে দেয়। এর বিরুদ্ধে ফরিদপুর দেওয়ানি আদালতে একটি মামলা চলমান। তবে তিনি জমি থেকে উচ্ছেদ করতে জোরপূর্বক পেশী শক্তি খাটিয়ে হাসিবুল ও আলাউদ্দীন মেম্বার তার লোকজন নিয়ে ঢাল সড়কি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) সকালে হামলা চালিয়ে বাড়ি-ঘরসহ সকল আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এবং আমার স্ত্রী মমতাজ বেগমের (৭০) কানের দুলসহ নগদ ৩০ হাজর টাকা লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
তিনি আরও বলেন, প্রভাবশালীরা আমার ঘরবাড়ি ভাঙচুর করবে বলে গুঞ্জন শুনে আমার আপন ছোট ভাই ফরিদ হোসেন মোল্যা বাদী হয়ে ভাঙচুরের আগের দিন সোমবার (৯ জানুয়ারি) রাতে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরেরদিন সকালেই আমার ঘর বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। আমি বুঝতে পারছি না, প্রশাসনের চেয়েও কি অপরাধীরা শক্তিশালী!
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ময়না ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হাসিবুল হাসান বলেন, ওই জমিটা আমার দুই চাচার। এ নিয়ে আদালত মামলার রায় অনুযায়ী ঢোলডগর বাজিয়ে লাল নিশানা গেড়ে দেয়। কিন্তু হাফিজার মোল্যা গং আইন না মেনে জমিটি জবরদখল করে কিছুদিন আগে কয়েকখান ইট দিয়ে ছাপড়া দেয়। চাচার জমি এখন দখলমুক্ত করা হয়েছে। হাফিজার মোল্যা অযথা আমাদের সম্মানহানী করার জন্য অপপ্রচার চালাচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে ময়না ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন শেখ প্রথমে কিছুই জানেন না বলেন। তবে পরে বলেন, হাফিজার কয়েকখান টিন ও ইট দিয়ে ছাপড়া তুলে অন্যের সম্পত্তি দখল করেছে। এখন জমির মূল মালিকরা তাদের জমি দখলমুক্ত করেছে।
এ ব্যাপারে বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আব্দুল ওহাব বলেন, হাফিজারকে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করা নয়, মূলত সে অন্যের জমি দখল করেছিল। পরে মালিকপক্ষ ঘরের বেড়া সরিয়ে ফেলেছে বলে জানতে পেরেছি। কোনো ঘর ভাঙচুর হয়নি।
সোমবার (৯ জানুয়ারি) রাতে হাফিজারের ভাই ফরিদের লিখিত অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগ পেয়েছিলাম। ভাঙচুরের খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখে। অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ মামলা করতে পারে। তবে এখনো এ ব্যাপারে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।
এ বিষয়ে মধুখালী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সুমন কর বাংলানিউজকে বলেন, সোমবার (৯ জানুয়ারি) রাতে হাফিজারের ছোট ভাই ফরিদের লিখিত অভিযোগ পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। তবে ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ দিলে যাচাই-বাছাই করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২৩
এনএস