টঙ্গীর তুরাগ পাড় থেকে: বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে যেন মুসল্লিদের ঢল নেমেছে টঙ্গীর তুরাগ পাড়ের ময়দানে। কানায় কানায় পরিপূর্ণ বিশ্ব ইজতেমার ময়দান।
বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মুসল্লিরা ময়দানে অবস্থিত খিত্তায় বসে বয়ান শুনছেন। অপরদিকে জোরে আসা সাথীদের জন্য খিত্তার বাইরে চলছিলো রান্নার আয়োজন। প্রতিটি জোরে/দলে আসা মুসল্লিদের একটি গ্রুপ তিন বেলার রান্নার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। অবশ্য জোরে আসা মুসল্লিরা তাদের সঙ্গে করে চুলা, পাতিলসহ সরঞ্জামাদি নিয়ে এসেছেন। কেউ পেয়াজ কুচি করছেন, তো কেউ চুলায় জ্বাল ধরাচ্ছেন। আবার কেউ সবজি, তরিতরকারি কাটা ও চাল ধৌত কাজে ব্যস্ত। তবে সবাই মিলে নিজেদের দলে আসা মুসল্লিদের জন্য রান্নায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
গত বুধবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে মাদারীপুরের টেকের হাট এলাকা থেকে ১১০ জনের একটি জোর এসেছেন বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে। তারা ময়দানের একেবারে সামনের অংশে একটি খিত্তায় অংশে অবস্থান নিয়েছেন৷ খিত্তার বাইরে চলছিলো তাদের দুপুরের আহার রান্নার কাজ।
শনিবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুর, রাত ও পরদিন সকালের রান্নার দায়িত্ব পড়েছে এই জোরে সাথী রেজ্জাক শেখের উপর। তিনি রান্নার কাকে অনেক ব্যস্ত।
কিছুক্ষণ পর পর তিনি বড় ডেগে হাতল দিয়ে নাড়ছিলেন আবার ঢেকে জ্বালে রাখছিলেন।
মুসল্লি রেজ্জাক শেখ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের জোরে মোট ১১০ জন মুসল্লি/সাথী ভাই আছেন। সবাই মাদারীপুর টেকের হাট এলাকা থেকে এসেছি, গত বুধবার দুপুরে ময়দানে এসে পৌঁছেছি।
তিনি জানান, প্রতি তিন বেলা মুসল্লিদের জন্য রান্নার দায়িত্বে থাকে ৭/৮ জন। এটা প্রতি তিন বেলা পরপর পরিবর্তন করা হয়। আজ দুপুর রাত পর দিন সকালের রান্নার দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে। আমাকে সহযোগিতা করার জন্য আর সাতজন রয়েছে। আজকের দুপুরের জন্য ভাত ডাল, নিরামিষ (মিষ্টি কুমড়া, আলু, টমেটো, লাউ) রান্না হয়েছে। রাতে যে কোনো একটা তরকারি রান্না করা হবে।
তিনি বলেন, জোরে প্রায় সব মুসল্লিকেই কাজ ভাগ করে দেওয়া হয় এখানে এসে সবাইকেই কিছু না কিছু কাজ করতে হয় নিজেদের স্বার্থে। কেউ পানি এনে দেয় কেউ রান্নার কাজে নিয়োজিত থাকে কেউ বা মুরুব্বিদের সেবায় নিয়োজিত থাকে। তবে গোসল এবং যার যার কাপড়-চোপড় তাকেই ধুতে হয়। সবাই একসঙ্গে থেকে যার যার কাজের করে আবার পরদিন কি কি কাজ ভাগ করে দেওয়া হলে সে অনুযায়ী চলে। এখানে আজানের পরপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে সবাই একসঙ্গে আদায় করতে পারে বয়ান শুনে অনেক কিছু দিনও আমলের বিষয় জানা যায়।
দিনাজপুর থেকে ৩১ জন মুসল্লি একসঙ্গে একটি জোরে এসেছেন বিশ্ব ইজতেমায় ময়দানে। ৩১ জনের জন্য রান্নার কাজে নিয়োজিত ছিল ইসলাম কাদের রুবেল।
ইসলাম কাদের রুবেল তার সঙ্গে আসা মুসল্লিদের জন্য সবজি খিচুড়ি রান্না করছিলেন। সঙ্গে একটি তরকারিও রান্না করেন তিনি। তুমি জানান দুপুরে আমাদের সবজি খিচুড়ি দিয়ে সবার আহার হয়ে যাবে। রাতের জন্য শুধু ভাত রান্না করলে তরকারি দিয়ে আজকের দিন পার হয়ে যাবে।
অপরদিকে কামারপাড়া দিয়ে ময়দানে প্রবেশের গেটের পাশে অবস্থান নিয়েছে পুরান ঢাকার রায় সাহেব বাজার এলাকা থেকে আগত তিন'শ মুসল্লির একটি জোর। তারা ময়দানে গত বুধবার সকালে এসে পৌঁছেছেন। তাদের সাথী ভাইদের জন্যও চলছিল রান্না কাজ। দেখা যায় দুপুরে আহারের জন্য তারা মুরগি তরকারি ও ভাত রান্না করছিলেন।
রান্নার কাজে নিয়োজিত তাওহীদ ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ৩০০ জন মুসল্লির একটি জোর ময়দানে অবস্থান নিয়েছি। এর আগে আমরা ময়দানে মুসল্লিদের জন্য চিপটা তৈরির কাজেও এসেছিলাম। আমাদের রান্নার দায়িত্ব পড়েছে আল্লাহতালার ইচ্ছায় যদি ভালো রান্না করতে পারি আমাদের সাথী ভাইয়েরা যদি কেউ তৃপ্তি পায় তবে অনেক সওয়াব পাব।
তিনি বলেন, আল্লাহতালার হুকুম আর নবীর তরিকায় চললে দুনিয়াতেও শান্তি আখড়াতেও শান্তি। আর এই শান্তির জন্য প্রতিবার বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লিদের সেবায় আমরা ময়দানের কাজ করতে আসি সেই সঙ্গে ইজতেমায় তিন দিনের জামাতে এসে ঈমান ও আমলের বয়ান শুনি।
বেলাল খান নামে এক মুসল্লি জানান, আল্লাহর রহমতে জোরে আশা মুসল্লিদের তিনবেলা আহারে কোনোদিন কমতি পড়ে না। অনেক সময় আমাদের সঙ্গে অতিরিক্ত মুসল্লিরাও খাওয়া-দাওয়া করেন। এটাই আল্লাহতালার বরকত।
এদিকে ময়দানের ভেতরে ক্ষিপ্তার বাইরের হাঁটা পথের পাশে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মুসল্লিরা নিজেদের আহার রান্নায় ব্যস্ত সময় পার করছিলেন। কেউ সিলিন্ডার গ্যাসে, কেউ লাকড়ি দিয়ে রান্না করছিলেন।
এদিকে ইজতেমার ময়দানের আশপাশের সড়কের পাশে অসংখ্য খাবারের দোকান ও হোটেল অস্থায়ীভাবে বসানো হয়েছে। সেখানেও ভাসমান মুসল্লিদের খাওয়া-দাওয়া করতে দেখা যায়। অস্থায়ী এসব দোকানপাট এর মধ্যেও বিভিন্ন ধরনের পণ্য বিক্রি করতে দেখা যায়। এগুলোর মধ্যে শীতবস্ত্র, কম্বলসহ নানা ধরনের পণ্যের পসড়া সাজানো রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২৩
এসজেএ/এসএ