ফরিদপুর: ফরিদপুরের নাসিরাবাদে বিয়েতে রাজি না হওয়ায় বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এক তরুণী (২২)। পরে থানায় গিয়ে বিয়ের প্রলোভনে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন আশিক খান (২৬) নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত আশিক খান উপজেলার চরমুকডোবা গ্রামের নজরুল খানের ছেলে।
জানা যায়, গত ১৫ জানুয়ারি রাতে একটি ঘরে ওই তরুণী ও যুবককে আপত্তিকর অবস্থায় আটক করেন প্রতিবেশীরা। পরে মিমাংসার কথা জানিয়ে স্থানীয় শালিস পক্ষ ওই যুবককে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেয়। পরদিন ১৬ জানুয়ারি সকালে শালিসে সমাধান না পেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টায় বিষ পান করেন ওই তরুণী। এমনই ঘটনা ঘটে উপজেলার নাসিরাবাদ ইউনিয়নের চরদুয়াইর গ্রামে।
অতঃপর মৃত্যুর কোল থেকে ফিরে এসে সোমবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে ভাঙ্গা থানায় হাজির হয়ে আশিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে এজাহার দায়ের করেন ২২ বছর বয়সী ওই তরুণী।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, ওই তরুণীর নানা বাড়ি ও আশিকের বাড়ি পাশাপাশি হওয়ার সুবাদে তাদের মধ্যে পূর্ব থেকেই পরিচয় ছিলো। পরিচয় থেকে একপর্যায়ে সম্পর্কটি প্রেমের দিকে গড়ায়। তখন পারিবারিকভাবে মেয়ের পক্ষ বিয়ের প্রস্তাব দিলে অসম্মতি জানায় ছেলেপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে গ্রামে সমালোচনা হওয়ায় পরে ওই তরুণীকে অন্য গ্রামে বিয়ে দেন পরিবারের লোকজন। কিন্তু বিয়ের পর ওই তরুণীর স্বামীকে বিভিন্নভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রভাবিত করেন আশিক। একপর্যায়ে সংসারটি ভেঙ্গে যায় তরুণীর।
সেই সুযোগে গত কয়েকমাস ধরে আশিক পুনরায় ওই তরুণীর সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করেন এবং বিয়ের প্রলোভন দেখান। পরে গত ২২ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন আশিক। এতে ওই তরুণী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। বিষয়টি আশিক জানার পর তাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেন এবং গর্ভের সন্তান নষ্ট না করলে তাকে বিয়ে করবেন না বলে জানান। একপর্যায়ে, ওই তরুণী তার গর্ভের সন্তান নষ্ট করে ফেলেন। পরে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে আশিক আরও কয়েকবার তাকে ধর্ষণ করেন। গত ১৩ জানুয়ারি রাতে ওই তরুণীর বাড়িতে কেউ না থাকায়, পুনরায় আশিক তার ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি টের পেয়ে তাদের দুজনকে আটক করেন প্রতিবেশীরা।
ওই তরুণীর মামা রিপন হাওলাদার জানায়, এ ঘটনায় দুই পরিবারের অভিভাবকদের গত ১৪ জানুয়ারি সকাল ১০টায় ছেলে-মেয়ের বিবাহ দেওয়ার কথা বলে একটি শালিসের সময় নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বেলা গড়িয়ে দুপুর পার হলেও কোনো সমাধান না পেয়ে তার ভাগ্নি বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পরে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ভাঙ্গা হাসপাতালে ও পরে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন।
ভুক্তভোগী তরুণী জানান, তিনি মৃত্যুর ঘর থেকে ফিরে এসেছেন। তার সরলতার সুযোগ নিয়ে আশিক তার সব কেড়ে নিয়েছে। এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন তিনি ও তার পরিবার।
প্রতিবেশীরা জানান, স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী ও মোবাইল প্রতারকদের সঙ্গে আশিকের ওঠাবসা। ঘটনার পর ওই রাতেই প্রায় ৪০ জন যুবক মোটরসাইকেল ও অস্ত্র নিয়ে এলাকায় মহড়া দেয়। এলাকায় এ নিয়ে বেশ চাঞ্চল্যকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। একটি প্রভাবশালী মহল আশিকের পক্ষে ঘটনাটি ধামাচাপার চেষ্টা চালাচ্ছে।
স্থানীয় সাবেক জনপ্রতিনিধি ইদ্রিস মাতুব্বর জানান, গত ১৩ জানুয়ারি রাতে স্থানীয়রা ওই দুজনকে একটি ঘরের মধ্যে আপত্তিকর অবস্থায় আটক করে। পরে সে বিষয়ে সমাধানের জন্য ১৪ জানুয়ারি সকাল ১০টায় একটি শালিস হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ছেলের অভিভাবকরা সময়মত হাজির না হওয়ায় কোনো সমাধান হয়নি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আশিক খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তাকে জোরপূর্বক শোবার ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজায় তালা দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে সব ধরেনের অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।
এদিকে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়ারুল ইসলাম জানান, সোমবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে ভিকটিম নিজে থানায় হাজির হন এবং আশিক খান নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে একটি ইজাহার দিয়েছেন। ঘটনার তদন্তকাজ চলমান।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২৩
এনএস