বরগুনা: বরগুনায় দিথী আক্তার (২২) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যুর ঘটনায় তার স্বামী ও শাশুড়িকে দায়ী করেছেন নিহতের মা লিমা বেগম। প্রিয় সন্তানকে রেখে দিথী আত্মহত্যা করতে পারে না বলে দাবি তার।
শনিবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে মোবাইল ফোনে বাংলানিউজের কাছে এমন অভিযোগ করেন দিথীর মা লিমা।
তিনি বলেন, ঘটনার আগের দিন দিথীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয়। মেয়ে কেঁদে কেঁদে আমাকে বলে, ‘মাসুদ (স্বামী) আমাকে মারধর করেছে। আজকের মধ্যে ৪০ হাজার টাকা না দিলে আমাকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিচ্ছে। আমাকে এই বাড়ি থেকে নিয়ে যাও মা। ’
লিমা বেগম বলেন, এমনটা বলে মেয়ে আমার কেঁদে উঠলে তার স্বামী মাসুদ ফোন হাত থেকে নিয়ে যায়। এরপর থেকেই ফোন বন্ধ, আর কথা বলতে পারিনি। পরদিন (১২ জানুয়ারি) দুপুরে শুনতে পাই আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। দিথীকে নির্যাতন করে খুন করে আত্মহত্যার ঘটনা সাজানো হয়েছে বলে দাবি লিমা বেগমের।
আপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার মেয়ে একটি ছোট সন্তান রেখে আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে মাসুদ। পরে আত্মহত্যার নাটক সাজানো হয়েছে। ৪০ হাজার টাকার জন্যই আমার মেয়েকে খুন করেছে ওরা।
একই দাবি দিথীর বাবা আনোয়ার হোসেনের।
তিনি বলেন, যৌতুকের টাকা না দেওয়ায় দিথীর স্বামী ও শাশুড়ি মিলে তাকে পিটিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। পরে লাশ ঝুলিয়ে দিয়ে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে চাইছে। আনোয়ার হোসেন বলেন, বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য আমার মেয়েকে তারা সব সময় নির্যাতন করত। কিছুদিন আগে ফ্রিজের জন্য চাপ দিলে আমি ১০ হাজার টাকা দিই। এরপর আবার দিথীর শাশুড়ি টিউবওয়েল বসানোর জন্য আমার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা এনে দেবার জন্য চাপ দেয়। আমার মেয়ে বাবার বাড়ি থেকে এই টাকা এনে দিতে পারবে না জানালে তাদের মাঝে ঝগড়া হয়। এরই একপর্যায়ে আমার মেয়েকে ঘরের দরজা লাগিয়ে তার স্বামী আর শাশুড়ি মিলে পিটিয়ে ও গলা টিপে করে মেরে ফেলেছে।
উল্লেখ্য, বরগুনার বেতাগীতে গত ১২ জানুয়ারি দুপুরে ঘরের দোতলায় আঁড়ার সাথে ফাঁস দেওয়া অবস্থায় দিথী আক্তার (২৪) কে শ্বশুরবাড়ির লোকজনেরা উদ্ধার করে। বরগুনা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর দিথীর মরদেহ রেখে তার স্বামী মাসুদ খান এবং শ্বশুর-শাশুড়ি পালিয়ে যায়।
এদিন সন্ধ্যায় মাসুদ খানকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করেন নিহতের মা লিমা বেগম। এতে সহযোগী হিসেবে দিথীর শাশুড়ি ফজিলা বেগম ও শ্বশুর রসূল খানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মাসুদ খানকে শুক্রবার রাতে উপজেলা সরিষামুড়ি ইউনিয়নের গাবতলী গ্রাম থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
শনিবার (১৪ জানুয়ারি) সকালে মাসুদকে আদালতে পাঠানো হয়। বেতাগী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শুভ বাড়ৈ বলেন, নিহত বিথীর মৃতদেহে একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। তাতে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত যে তাকে মারাত্মকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মোতালেব হোসেন বলেন, কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে হত্যা না করলে আত্মহত্যার পর লাশ হাসপাতালে রেখেই পালিয়ে যেতে পারে না।
এ বিষয়ে বেতাগী থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসন বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২২২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২৩
এসএএইচ