সিলেট: গাড়ি পোড়ানো মামলার আসামি ছাত্রদল নেতার মুক্তির দাবিতে সিলেটে পরিবহণ শ্রমিক সংগঠন আহুত বিতর্কিত ধর্মঘট স্থগিত করা হয়েছে।
সোমবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে ধর্মঘট স্থগিতের ঘোষণা দেন সিলেট জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মইনুল ইসলাম।
এর আগে রোববার (২২ জানুয়ারি) মামলার আসামি রাজনের মুক্তির দাবিতে সোমবার (২৩ জানুয়ারি) সিলেট জেলায় এবং পরদিন মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) বিভাগজুড়ে ধর্মঘট ডাক দেওয়া হয়েছিল।
মামলার আসামির জামিন না হওয়ায় ধর্মঘট আহ্বান করে বিতর্কের জন্ম দেন শ্রমিক নেতারা। যে কারণে ধর্মঘটের ইস্যু নিয়ে প্রশাসন এমনকি সাধারণ মানুষের মাঝেও অসন্তুষ দেখা দেয়।
আলী আকবর রাজন সিলেট জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট জেলা ও বিভাগীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার পলতাক আসামি ছিলেন।
তার বিরুদ্ধে আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। এরপর তাকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। সেই আলী আকবর রাজনের আদালত থেকে জামিন না দেওয়া ও একাধিক মামলায় শোন অ্যারেস্ট দেখানোর কারণে ধর্মঘটের ডা্ক দিয়েছিলেন বলেও জানিয়েছেন পরিবহণ শ্রমিক নেতৃবৃন্দ।
বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে সিলেট জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মইনুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক মামলায় গত ৭ ডিসেম্বর আলী আকবর রাজনকে গ্রেফতার করা হয়। তার মুক্তির দাবিতে আমরা প্রশাসনের প্রতি দফতরে আমরা স্মারকলিপি দিয়েছি। সে তার রাজনৈতিক মামলা মোকাবিলা করবে। রায়ে তার যা হোক হবে, তবে তাকে জামিন দেওয়া হোক। এ নিয়ে কয়েকবার জামিন আবেদন করলেও অন্য মামলায় শোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে জেলে আটকে রাখা হয়েছে। তাকে ষড়যন্ত্র করে মামলায় ঢোকানো হয়েছে। আমাদের দাবি হলো, তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হোক।
জামিন দেওয়া, না দেওয়া আদালতের এখতিয়ার- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আদালতের বিরুদ্ধে যেতে চাই না। আমরা আদালত মানি, তবে জামিন হবে না, এরকম বিধান আদালত দেখাতে পারবেন কি না? আরও গুরুতর মামলারও জামিন দেওয়া হচ্ছে। অথচ আমাদের শ্রমিক নেতার জামিন হচ্ছে না, এটা মেনে নিতে পারছি না। যে কারণে ধর্মঘটে যেতে হচ্ছে।
রাজন গাড়ি পুড়ানোর মামলার আসামি, জনগণকে জিম্মি করে ধর্মঘটের আহ্বানের বিষয়ে তার বক্তব্য হলো, আমাদেরতো আর কোনো পথ নেই। সর্বশেষ হাতিয়ার এটা (ধর্মঘট)। আমরা চাই না জনগণের কষ্ট হোক। কিন্তু প্রশাসন ইচ্ছা করে এটা করছে। গত ১১ জানুয়ারি রাজনের মুক্তির দাবিতে পুলিশ কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। আমরা গাড়ি পুড়ানোর মামলার সব আসামির মুক্তি চাচ্ছি না, কেবল শ্রমিক নেতা রাজনের মুক্তি চাচ্ছি। প্রশাসন আমাদের নিয়ে বসে শান্ত্বনা দিতে পারতেন। কিন্তু আমাদের কথার কর্ণপাত করেননি। যদিও শেষ পর্যন্ত প্রশাসন ও কেন্দ্রীয় শ্রমিক নেতাদের আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়।
বাংলানিউজকের সঙ্গে আলাপকালে সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ জানিয়েছেন, শ্রমিক সংগঠন থেকে সপ্তাহ দু’য়েক আগে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। আদালত থেকে রাজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করা হয়। পুলিশ কেবল গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল করেছে। আদালত তাকে মুক্তি দিলে দেবে। কিন্তু শ্রমিক নেতাদের বোঝাতে ব্যর্থ যে, আদালতের বিষয়ে আমাদের করণীয় কিছু্ই নেই। জামিন দেওয়ার বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার।
সিলেট জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা আলী আকবর রাজনকে ৭ ডিসেম্বর গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি ২০১৮ সালের বিএনপি কর্তৃক জ্বালাও-পোড়াওয়ের একটি মামলায় পলাতক থাকায় আদালত থেকে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি করা হয়। ওই মামলায় তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। ২২ জানুয়ারি তার জামিন না হওয়ায় ধর্মঘট আহ্বান করা হলেও আজ সোমবার ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২৩
এনইউ/এসএ