ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

যে কারণে কুমিল্লায় মহাসড়কে কমেছে দুর্ঘটনা

তৈয়বুর রহমান সোহেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২৩
যে কারণে কুমিল্লায় মহাসড়কে কমেছে দুর্ঘটনা

কুমিল্লা: ২০২২ সালে কুমিল্লায় মহাসড়কে ৩২৭ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩৪৭ জন। এর আগে ২০২১ সালে ৪৪১ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিল ৪৪৪ জন।

যা গত বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ কম।
 
হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত বছরে নিহতদের মধ্যে ১৩০ জন ছিলেন পথচারী। ২০২২ সালে শুধুমাত্র কুমিল্লা জেলায় ১৪২ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৫১ জন। ২০২১ সালে ১৮১ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন ১৮৬ জন। ২০২১ সালে এ জেলায় ১৭ সিএনজিচালিত অটোরিকশা দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৬ জন এবং ২০২২ সালে ১১ দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত হন।  

গত বছর ৭০টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৭৮ জন। মহাসড়কগুলোতে যত্রতত্র ইউটার্ন ও ফিডার রোডের মাথায়ও ঘটছে দুর্ঘটনা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বেশ কিছু ইউটার্নে রিপ্লেক্টিভ স্টিকার নেই। এতে রাতের বেলায় এসব স্থানে দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব ইউটার্নে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয়রা লাল নিশান টাঙিয়ে দিয়েছেন।

কুমিল্লা জেলা থেকে হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা অঞ্চল তদারকি করা হয়। এর অধীনে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের (পার্বত্য এলাকা ছাড়া) ৭৮০ কিলোমিটার মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়ক। এর মধ্যে দেশের লাইফ লাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই এসব সড়কে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটছে। হাইওয়ে পুলিশের সমীক্ষায় দুর্ঘটনার জন্য ১০টিরও বেশি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে।

হাইওয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ অঞ্চলের অধীনে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার, কুমিল্লা-সিলেট সড়কের হবিগঞ্জ পর্যন্ত, কুমিল্লা-চাঁদপুর-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কসহ ৭৮০ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এসব সড়কে ৭০ শতাংশ দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হচ্ছে, ৫৪টি বিপদজনক ইউটার্ন, ফিডার রোড (মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত হওয়া গ্রামীণ সড়ক) রয়েছে ৫২৭ কিলোমিটার।  

সিএনজি স্টেশন রয়েছে ১০৪টি, মহাসড়ক সংলগ্ন বৈধ ইজারা দেওয়া হাট-বাজার ২২টি, গার্মেন্টস ও শিল্পকারখানা ৭০টি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৯২টি, হাসপাতাল-ক্লিনিক ১৯টি, বাস স্টেশন ৭১টি। এছাড়া ৩৪টি ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার না করাও দুর্ঘটনার কারণ।  

হাইওয়ে পুলিশ বলছে, ব্যস্ততম মহাসড়ক-সড়ক দিয়ে মোটরসাইকেলসহ ছোট যানবাহনে কম দূরত্বে যাতায়াতে শিক্ষার্থী, শ্রমিক, রোগী পরিবহন, পথচারী চলাচল এবং অটোরিকশায় গ্যাস নিতে মহাসড়কে এসে দুর্ঘটনায় পড়ছে। ফুটওভারব্রিজ থাকলেও ব্যবহারের প্রবণতা কম। আবার ভিন্ন চিত্রও আছে। ব্যস্ততম অনেক এলাকায় ফুটওভার ব্রিজ না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপারেও ঘটছে দুর্ঘটনা। ৩০ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল ও রাস্তায় যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো ও নামানোর কারণে।  

এদিকে মহাসড়কে দুর্ঘটনা হ্রাস করতে হাইওয়ে পুলিশ বেশি গতির যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে। এর মাধ্যমে ২০২২ সালে চার হাজার যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও ১৭ হাজার যানবাহনকে সতর্ক করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ চালক-হেলপারদের মাঝে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে প্রায় ৪ লাখ। ১৪ হাজার ৪৩০টি অটোরিকশাসহ অন্যান্য নিষিদ্ধ যানবাহন আটক করা হয়েছে। গত বছর ১৫ হাজার চালককে ট্রাফিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

কুমিল্লা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. তাজুল ইসলাম বলেন, সড়ক-মহাসড়কে ছোট যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ কিংবা এদের জন্য আলাদা লেন করার দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের। জাতীয়ভাবে এসব সমস্যা সরকারের নজরে আনা হলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেই।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীত চাকমা বলেন, মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ইউটার্নগুলোতে রিপ্লেক্টিভ স্টিকার ভেঙে যাওয়ায় লোকজন সেগুলো নিয়ে গেছে। বর্তমানে মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে মেরামতের কাজ চলছে। শেষ হলে শিগগিরই রোড সাইন স্থাপন করা হবে।

হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, মহাসড়কে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে হাইওয়ে পুলিশ নিয়মিত অভিযান, সচেতনতামূলক কার্যক্রম ও চালকদের প্রশিক্ষণে কাজ করে যাচ্ছে।  

তিনি আরও বলেন, সড়কে দ্রুতগতির বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও প্রাইভেটকারের সঙ্গে একই লেনে চলে মোটরসাইকেলসহ কম গতির যানবাহন। কারণ এ অঞ্চলের কম দূরত্বের যাতায়াতে জরুরি প্রয়োজনে শিক্ষার্থী, রোগী, শ্রমিকসহ সাধারণ লোকজনের জন্য মোটরসাইকেলসহ ছোট যানবাহনই একমাত্র ভরসা। তাই ছোট যানবাহনের জন্য আলাদা লেন তৈরি করা হলে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২৩  
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।