ঢাকা: দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ যাতে না হয় তা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০২৩ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
ডিসিদের রাষ্ট্রপতি বলেন, আপনারা বিভিন্ন জেলায় সরকারের বহুমুখী কার্যক্রমের সমন্বয় ও তত্ত্বাবধানকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ যাতে না হয় তা নিশ্চিত করা অতীব জরুরি। আশা করি, আপনারা কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব ও ক্ষমতার পার্থক্য সচেতনভাবে বজায় রাখবেন।
আবদুল হামিদ বলেন, আপনাদের পদবী জেলা প্রশাসক হলেও শাসক নয়, সেবক হিসেবে জনগণের দোরগোঁড়ায় সরকারি সেবা পৌঁছে দেবেন। জেলা প্রশাসনের কর্ণধার হিসেবে আপনাদের ওপর অর্পিত এ গুরুদায়িত্ব আরও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবেন-এ প্রত্যাশা করছি।
জনগণকে সেবা করা দায়িত্ব সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, জনগণের সেবা দেওয়া আপনাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এটাকে দয়া বা অনুগ্রহ মনে করার কিছু নেই। আপনারা সরকারি কর্মচারী হিসেবে যেমন ক্যারিয়ার প্লানিং করে থাকেন তেমনি কর্মক্ষেত্রে গিয়েও একটি প্লানিং করবেন। আর এই প্লানিংটা হবে আপনার দায়িত্ব পালনকালে জনকল্যাণে কী কী করতে পারেন তা ঠিক করা।
বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিদের দুর্নীতি মুক্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, অনেকেই চাকরি করেন কিন্তু অতীত কর্মস্থলে কয়জনকে মনে রাখে ভেবে দেখবেন। নিজে দুর্নীতিমুক্ত থাকবেন এবং অন্যরাও যাতে দুর্নীতির সুযোগ না পায় সেদিকেও খেয়াল রাখবেন।
তিনি বলেন, দুর্নীতি উন্নয়নের সবচেয়ে বড় অন্তরায়। দুর্নীতির কারণে টেকসই উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই মাঠ প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আপনাদের মেধা ও দক্ষতা জনকল্যাণে ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে ব্যবহার করবেন। আমার বিশ্বাস, আপনারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে দেশাত্মবোধ ও একাগ্রতার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে যাবেন। নবতর উদ্ভাবনী চর্চা ও সেবামূলক কর্মপ্রয়াসের দ্বারা আপনারা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পথ পরিক্রমায় একটি উন্নত, আধুনিক ও তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাবেন, এটাই সবার প্রত্যাশা।
বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে সরকারের নেওয়া কর্মসূচিগুলো সফল করতে মাঠ প্রশাসনকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, যুদ্ধের প্রভাবে খাদ্যদ্রব্য, ভোজ্য তেল ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে অর্থনীতি চাপের মুখে পড়েছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতি মাথায় রেখে সরকারি সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার, ব্যয় সংকোচন এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে আপনাদের আরো যত্নশীল হওয়ার অনুরোধ করছি।
ভূমি বিষয়ক দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ভূমি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জনগণ সরাসরি সম্পৃক্ত। গ্রামীণ বিরোধ ও মামলা মোকাদ্দমার বেশিরভাগই জমি-জমা সংক্রান্ত। তাই দক্ষ, আধুনিক, জনকল্যাণমুখী ও টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার এবং ভূমি সংক্রান্ত জনবান্ধব ডিজিটাইজ সেবা নিশ্চিতকরণে আপনাদের আরো বেশি কৌশলী ও তৎপর হতে হবে। ভূমি রেকর্ডের সময় এক শ্রেণীর অসাধু কর্মচারী স্থানীয় প্রভাবশালী দালালচক্রের সহযোগিতায় জনভোগান্তি বাড়ায়। তাই এসব ব্যাপারে আপনাদের কঠোর হতে হবে এবং এসিল্যান্ডসহ তৃণমূল পর্যায়ের ভূমি অফিসগুলোকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে হবে।
যুবকদের মাদকের হাত থেকে বাঁচানোর আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, যুবরাই দেশের প্রাণশক্তি। যুব সমাজের মেধা, সৃজনশীলতা ও প্রতিভা বিকাশের লক্ষ্যে সরকার যুব সমাজকে সুসংগঠিত ও উৎপাদনমুখী করতে ‘ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচিসহ’ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর ১০টি বিশেষ উদ্যোগ বাস্তবায়নে কার্যকর অবদান রাখতে হবে। মাদকের অপব্যবহার যুব সমাজকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে। মাদকদ্রব্য যাতে যুব সমাজকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে না দেয় সেদিকেও আপনাদেরকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২৩
এমইউএম/এএটি