ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বিচারক যদি দোষ করে তাকেও ছেঁটে ফেলব: প্রধান বিচারপতি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২৩
বিচারক যদি দোষ করে তাকেও ছেঁটে ফেলব: প্রধান বিচারপতি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: বিচার বিভাগ সংবিধানের শেষ রক্ষাকবজ। বার ও বেঞ্চ একে অপরের অবিচ্ছেদ্য অংশ, পরস্পরের পরিপূরক।

একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। একটি পাখির দুটি ডানার মতো। একটা না থাকলে অপরটা অকেজ। পারস্পারিক শ্রদ্ধাহীনতা পরস্পরকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ক্ষতি হবে আদালতের, ক্ষতি হবে নিরীহ মানুষের।  

দেশের বিভিন্ন স্থানে তুচ্ছ কারণে আদালত বর্জন থেকে শুরু করে ব্যক্তিগতভাবে বিচারককে আক্রমণ করা হচ্ছে। আমি বিশ্বাস করতে চাই এগুলো একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এটি ধারাবাহিকভাবে ঘটতে থাকলে সাধারণ মানুষের মধ্যে সংশয় দেখা দেবে। বাড়বে বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীনতা।

শনিবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতি চত্বরে সমিতির ১শ বছর উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এসব কথা বলেন।

আইনজীবী সমিতির ‘গৌরবের ১০০ বছর’ উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে আদালতের সম্মান রক্ষার দায়িত্ব আইনজীবীদের। এ সম্মান আমাদের জুডিসিয়াল আদালতের, আইনজীবীদের ও সাধারণ মানুষের। নিজেদের সম্মান রক্ষার পাশাপাশি আদালতের সম্মান রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের। বিচারকের ও আইনজীবীর সম্মান একই সূত্রে গাঁথা। আপনি আদালতকে সম্মান করেন বলেই সম্মানিত হন। জেলার বিচার সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে আপনাদের নিজস্ব মতামত থাকতেই পারে। আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধানের সুযোগ রয়েছে। সুসর্ম্পক না থাকলে উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ক্রমাগতভাবে বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা বেড়ে যাবে।

প্রধান অতিথি বলেন, বিচারকের প্রতি যদি কোনো অভিযোগ থেকে থাকে, সে অভিযোগ আমার কাছে করবেন। অভিযুক্ত বিচারক যদি দুর্নীতিগ্রস্ত হয়, যেমন আঙুলে ক্যানসার হলে গোড়া থেকে ছেঁটে ফেলতে হয়, একইভাবে বিচারক যদি দোষী সাব্যস্ত হয় তাকেও ছেঁটে ফেলব।

আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে প্রধান অতিথি বলেন, আপনারা দেশ প্রেমিক, আদালতের প্রতিটি ইট, কাঠ, পাথরকে ভালোবাসেন। ভালোবাসেন কোর্টের সিস্টেমকে। আপনারা সহসী, পরিশ্রমী। আপনারাই বিচার বিভাগকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় আমরা সমৃদ্ধ হই। দুনীর্তি, মাদক, সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গড়ি। দেশ দারিদ্র মুক্ত হয়। দুর্বলদের সাহায্য করি। তাদের শান্তিতে থাকার ব্যবস্থা করি। একাত্তরের রক্তদানকে সাহায্য করতে বিচার ব্যবস্থাকে সাহায্য করব। জুডিসিয়ালকে এগিয়ে নিয়ে যাব।  

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. জবদুল হকের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বাংলাদেশ আইন কমিশনের সদস্য বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর, জেলা ও দায়রা জজ মোহা. আদীব আলী।

অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন- চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খান, পুলিশ সুপার আবদুর রকিব।  

স্বাগত বক্তব্য দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মো. মাহমুদুল ইসলাম কনক।

শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং আদালত চত্বরে গাছের চারা রোপণ করেন। পরে শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে জেলার প্রবীণ আইনজীবী ও প্রয়াত আইনজীবীদের সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয় এবং প্রয়াতদের সম্মানে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

এর আগে সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতি চত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এসময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য, জেলার বিচার বিভাগের কর্মকর্তাগণ, জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।