ঢাকা: বৈশিক মহামারি করোনাভাইরাসের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে চলছে অস্থিরতা, যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। একদিকে ডলার সংকট রয়েছে যেমন, তেমনি হু হু করে বেড়েই চলেছে নিত্য পণ্যের দাম।
এদিকে নিত্য পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে নানা পদক্ষেপ। তারই অংশ হিসেবে প্রতিবছর দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ধান-চাল সংগ্রহ করা হয়। তবে বরাবরই অপূর্ণ থাকে সংগ্রহের সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা। চলতি আমন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হলেও মাঠ পর্যায়ে তার কোনো প্রভাব পড়ছে না। ফলে চলতি আমন সংগ্রহ মৌসুমে হুমকির মুখে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ৮ লাখ টন ধান ও চাল কিনবে সরকার। এর মধ্যে ৫ লাখ টন চাল ও ৩ লাখ টন ধান। প্রতি কেজি চাল ৪২ ও ধান ২৮ টাকা দরে কেনা হবে। যা গত ১০ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে। গত তিন-চার বছর ধরে মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে কোনো ধান কেনা হচ্ছে না। অ্যাপের মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়, আবার কৃষকের তালিকা ধরে লটারির মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে। টাকাও সরাসরি তাদের ব্যাংক হিসেবে চলে যায়। তাই মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের উদ্যোগ নেয় সরকার।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য মতে, শতভাগ আমন ধান কাটা হয়ে গেলেও সরকারের ধান-চাল সংগ্রহে কোনো গতি নেই। প্রায় তিন মাসে ৭৫ হাজার টন ধান-চাল সংগ্রহ করেছে সরকার। যা লক্ষ্যমাত্রার খুবই তুলনায় কম।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, অনুকূল আবহাওয়ায় এবার আমনের ফলন হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি। সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের স্থবিরতার পেছনে প্রক্রিয়াগত ত্রুটি আর বাজারের দামজনিত সমস্যা দেখা দিয়েছে। প্রচলিত অভ্যন্তরীণ ধান-চাল সংগ্রহ পদ্ধতিতে সরকার মিল ও চালকল মালিকদের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। সরকারি সংগ্রহ মূল্যের তুলনায় বাজারদর বেশি হওয়ায় কৃষকরা সরকারের কাছে ধান বিক্রিতে কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
চলতি মৌসুমে সরকারিভাবে আমন ধান ও চাল সংগ্রহ কর্মসূচি সফল করতে ১৭টি নির্দেশনা দেয় সরকার। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-ধান সংগ্রহে বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা সংগ্রহ ও মনিটরিং কমিটির সভা করে সংগ্রহ কার্যক্রম জোরদার করা, উপজেলা পর্যায়ে কৃষকদের মধ্যে লটারি করে জরুরি ভিত্তিতে সংগ্রহ শুরু ও শেষ করা, দ্রুততম সময়ের মধ্যে কৃষকের অ্যাপভুক্ত উপজেলায় রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা। ধান সংগ্রহের খবর মাইকিং, লিফলেট বিতরণ, স্থানীয় কেবল টিভি স্ক্রলের মাধ্যমে বহুল প্রচারের ব্যবস্থা করা। অভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্য সংগ্রহ নীতিমালা-২০১৭ অনুসারে ধান ও চাল সংগ্রহ নিশ্চিত করতে হবে। ব্যত্যয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে ২০২১ সালের আমন মৌসুমে দুই লাখ টন ধান, ছয় লাখ টন সিদ্ধ চাল ও ৫০ হাজার টন আতপ চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হয় প্রতি কেজি আমন ধান ২৬ টাকা, চাল ৩৭ টাকা ও আতপ চাল ৩৬ টাকা। সে বছরের ৭ নভেম্বর থেকে সংগ্রহ শুরু হয়। ধান-চাল কেনার তারিখ নির্ধারিত ছিল ২০২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। পরে তা বাড়িয়ে ১৫ মার্চ পর্যন্ত করা হয়। আমনে দুই লাখ টন ধানের বিপরীতে মাত্র ১২ হাজার ৩৪২ টন সংগ্রহ করা হয়। আর ৬ লাখ টন সিদ্ধ চালের বিপরীতে ৭০ হাজার ১৩৬ টন এবং ৫০ হাজার টন আতপ চালের বিপরীতে চার হাজার ৮৬৩ টন সংগ্রহ করা সম্ভব হয়।
এছাড়া ২০২১ সালে বোরোতে ১০ লাখ টন ধান, ১০ লাখ টন সিদ্ধ চাল ও দেড় লাখ টন আতপ চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ২৬ টাকা কেজি দরে ধান, ৩৬ টাকা কেজি দরে সিদ্ধ চাল এবং ৩৫ টাকা কেজি দরে আতপ চাল কেনার সিদ্ধান্ত হয়। গত বছরের ২৬ এপ্রিল থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বোরো সংগ্রহ কার্যক্রম চলে। ওই সময়ে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে দুই লাখ ১৯ হাজার টন ধান, ছয় লাখ ৬৭ হাজার ৮৯০ টন সিদ্ধ চাল এবং ৯৯ হাজার ১২৩ টন আতপ চাল কিনতে সক্ষম হয় খাদ্য অধিদফতর।
খুলনা সদর উপজেলার কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার আমন ধানের ফলন ভালো হয়েছে। সরকারের নির্ধারিত দামের তুলনায় খোলা বাজারে বেশি দামে ধান বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সরকারি গোডাউনে ধান দিতে নানা ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয়।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শারমিন ইয়াসমিন বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে সর্বেচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সে জন্য জেলা-উপজেলায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সংগ্রহের গতি কম হলেও আশাকরি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। চালের ক্ষেত্রে শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হলেও ধানের ক্ষেত্রে কাছাকাছি থাকবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৩
টিএ/এমএমজেড