ঢাকা, রবিবার, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পূর্ণাঙ্গ রূপ পাচ্ছে খুবির কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২৩
পূর্ণাঙ্গ রূপ পাচ্ছে খুবির কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার

খুলনা: ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও ভাষা শহিদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের মধ্যে এই চেতনা জাগিয়ে রাখতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) নির্মিত হচ্ছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। ইতোমধ্যে এর ৮৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।

তবে এর পূর্ণাঙ্গরূপ দিতে শিগগিরই বাকি কাজ শুরু হচ্ছে। কয়েকদিনের মধ্যেই শহীদ মিনারের পেছনের অংশের মাটি ভরাট কাজ শুরু হবে এবং পরবর্তীতে ল্যান্ডস্কেপিং অনুযায়ী বাকি অংশের কাজও শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ দেশের অন্যান্য স্থানের শহীদ মিনারের যে আদল রয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নকশা তা থেকে অনেকটা ব্যতিক্রমী। বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন মূল নকশা অনুযায়ী এই শহীদ মিনারটির পরিপূর্ণভাবে শেষ করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। আশা করা হচ্ছে আগামী বছরের মধ্যে এটি পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে।

শহীদ মিনারটির দৈর্ঘ্য ৩৮ ফুট ও প্রস্থ ৩৫ ফুট। ভূমি থেকে ৩২ ফুট উচ্চতার এই শহীদ মিনারের বেদীর দিকে মুখ করা আছে মাতৃভাষার জন্য দেশের শহীদ সন্তানদের উৎসর্গীকৃত রক্তের আখরে লেখা মুক্তির মাধ্যম কলম। যদিও নকশাটি সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়নি।

তবে, বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া বর্ণনামতে, কলমের নিবের মাথায় চৌকনিক একটি ফোটা (ড্রপ) যুক্ত হয়েছে। যা ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও বেদনার অশ্রুবিন্দু এবং একই সঙ্গে জ্ঞান সৃজনের অন্তর্নিহিত শক্তি প্রতিভাত হয়েছে। কলমটি একটি খোলা চোখের গোলাকার আকৃতির মধ্য দিয়ে প্রবেশ করেছে। স্থাপত্য ডিজাইনে এই কলমে চির জয়ের ছবি, ভাষ্য ও ভবিষ্যৎ দৃষ্টি প্রতিফলিত হয়েছে।

শহীদ মিনারে ল্যান্ডস্কেপিংয়ে কয়েকটি ধাপ রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি চাতালে পর্যায়ক্রমে ওঠার জন্য ৮টি ধাপ রয়েছে। যাতে আমাদের ভাষা আন্দোলনের পর্যায়ক্রমিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। অনেকটা ত্রি-কোন আকৃতির শহীদ মিনারের নিচের অংশে আরও বেশ কিছু শৈলী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

খুবির এই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নকশা নির্বাচনে ১৯৯৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা আহ্বান করা হয়। সেখানে মোট ১৭টি নকশা জমা পড়ে। জীববিজ্ঞান স্কুলের তৎকালীন ডিন প্রফেসর ড. মো. আব্দুর রহমানের নেতৃত্বাধীন ৯ সদস্যের নির্বাচক কমিটি স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের ৯৫ ব্যাচের ৪ শিক্ষার্থী যথাক্রমে মিজানুর রহমান, তপন কুমার ধর, মুহাইমিন শাহরিয়ার, আহসান হাবিবের করা স্থাপত্য নকশাকে প্রথমনির্বাচন করে। এর জন্য সে সময় তাদের ১০ হাজার টাকা সম্মানি দেওয়া হয়। স্থাপত্য ডিজাইনের পর স্ট্রাকচারাল ডিজাইন করে কনসালটেন্ট ফার্ম শহীদুল্লাহ অ্যাসোসিয়েটস্ লি.।

১৯৯৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর এই শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ গোলাম আলী ফকির। ১৯৯৭ সালের ১৮ জুন তিনি এই শহীদ মিনার স্থাপন সংক্রান্ত প্রস্তাবের প্রশাসনিক অনুমোদন দেন। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. এস এম নজরুল ইসলাম। প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষে ২০০০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি এ শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন। ২০০১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ আশপাশের এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান এখানে শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন শুরু করে। এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ সম্পাদন শেষে ২০০৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মাহবুবুর রহমান। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ঐতিহ্য স্থাপনার মধ্যে এটি অন্যতম।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১ , ২০২৩
এমআরএম/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।