ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

স্বপ্ন পূরণে পাখির পাশে ফরিদপুরের ডিসি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২৩
স্বপ্ন পূরণে পাখির পাশে ফরিদপুরের ডিসি

ফরিদপুর: ফরিদপুরের নাইমা সুলতানা পাখি। বয়স ২২ বছর।

উচ্চতা ২৯ ইঞ্চি। ওজন ২০ কেজি। তার স্বপ্ন নিজের পায়ে দাঁড়ানো। এজন্য অভাব অনটনের সংসারে প্রতিনিয়ত করছেন জীবনযুদ্ধ।

পাখির ইচ্ছা পড়াশোনার পাশাপাশি কম্পিউটারের কোর্সটি শেষ করে কম্পিউটার পরিচালনায় আরও দক্ষ হবে। কিন্তু নিজের কোনো কম্পিউটার নেই। একসঙ্গে এত টাকা দিয়ে কম্পিউটার কেনা সম্ভব নয়। ফলে বেশ দুশ্চিন্তায় ছিল তিনি।

ঠিক এমন সময়ে তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার।  

মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) সকালে পাখি ও তার পরিবারকে ডেকে নেন জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার। শোনেন তার ইচ্ছার গল্প। তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা শুনে হতবাক হন জেলা প্রশাসক। এসময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাখিকে তার পড়াশোনায় এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে দেওয়া হয় একটি আধুনিক মানের ল্যাপটপ, শুধু তাই না তার পড়ালেখার খবর বহন করার ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসনের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।
 
নাইমা সুলতানা পাখি ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের উলুকান্দা গ্রামের নাদের মাতুব্বর ও সাহিদা বেগম দম্পতির সন্তান। তিন মেয়ের মধ্যে পাখি সবার বড়। গ্রামের স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেছেন পাখি। বর্তমানে ফরিদপুর সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের অনার্স (বাংলা) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। বাবা নাদের মাতুব্বর একসময় পাট-ভুষা মালের ব্যবসা করতেন। ১২ বছর আগে ব্রেন স্ট্রোক করে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন। একেবারেই চলাফেরা করতে পারেন না।

পাখি জানান, বাবা অসুস্থ। সংসারে রোজগারের মতো কেউ নেই। পড়াশোনা তো দূরে থাক ঠিকমতো সংসারই তো চলে না। এরপরও কষ্টের মধ্য দিয়ে পড়া চালিয়ে যাচ্ছি। মানুষ ছোট হলেও আমার স্বপ্নটা বড়। চাই লেখাপড়া করে যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি একটা চাকরি করে পরিবারের হাল ধরতে। বাবা-মা, বোনদের মুখে হাসি ফোটাতে। কারও করুণা কিংবা ভিক্ষা করে নয়, মাথা উঁচু করে বাঁচবো। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সমাজের দৃষ্টান্ত হতে চাই।  

জেলা প্রশাসকের এই সহায়তার বিষয়ে পাখি বলেন, আমার পাহাড় সমান স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেবতার মতো হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান স্যার। তার এই সহযোগিতা হয়তো আমাকে আমার লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে।  

পাখির মা শাহিদা বেগম বলেন, স্বামী অসুস্থ অবস্থায় দীর্ঘদিন ঘরে পড়ে আছেন। তিন মেয়ের পড়াশোনাসহ সংসারের যাবতীয় খরচ চালাতে খুবই কষ্ট হয়। পাখির স্বপ্ন পড়াশোনা শেষে ভালো চাকরি করে সংসারের হাল ধরবে। কিন্তু আমাদের সামর্থ্য নেই।  
তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক স্যারকে ধন্যবাদ জানাই, আমার এই অবহেলিত মেয়েটির পাশে দাঁড়িয়েছেন।

নাইমা সুলতানা পাখির প্রসঙ্গে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, পাখির স্বপ্ন ও তার পরিবারের অভাব অনটনের খবর পেয়ে তাদের অফিসে ডেকে নিয়ে আসি। আমি হতবাক মেয়েটি স্বপ্ন কত বড়। এতো কষ্টের মধ্যেও সে নিজেকে স্বাবলম্বী করতে চায়। এ কারণে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চেষ্টা করেছি কিছুটা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে। তার পড়ালেখা শেষ হলে যোগ্যতানুযায়ী চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।