ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মাত্র ৯ মাসে হাফেজ ১৩ বছরের দুই কিশোরী

কাজী আব্দুল কুদ্দুস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৩
মাত্র ৯ মাসে হাফেজ ১৩ বছরের দুই কিশোরী

রাজবাড়ী: মাত্র ২৭০ দিনে পবিত্র কোরআন সম্পূর্ণ হেফজ (মুখস্ত) করে নজির গড়ল রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার ফাতেমা খাতুন ও সুমাইয়া খাতুন নামে ১৩ বছরের দুই কিশোরী।

হাফেজা ফাতেমা খাতুন রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার মৌরাট ইউনিয়নের রূপিয়াট গ্রামের ১নং ওয়ার্ডের দরিদ্র কৃষক মো. মিরাজ মন্ডলের মেয়ে।

আর সুমাইয়া খাতুন উপজেলার জীবননালা গ্রামের আইয়ুব আলীর মেয়ে।  

তারা দুজনেই বর্তমানে জীবননালা আল কারীম তাহফিজুল কুরআন মহিলা মাদরাসা ও লিল্লাহ বোডিংয়ের শিক্ষার্থী।

শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সরেজমিনে মাদরাসায় গিয়ে দেখা যায়, মাদরাসার ৫৩ জন শিক্ষার্থী সুমধুর কণ্ঠে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করছে।

এ সময় ফাতেমা খাতুনের সঙ্গে কথা হলে সে জানায়, আল্লাহর রহমতে অনেক কষ্ট ও পরিশ্রম করে পবিত্র কোরআনের পুরো ৩০ পারা মুখস্ত করতে পেরেছি। আল্লাহর দরবারে অনেক শুকরিয়া জানাই।

মোছা. সুমাইয়া খাতুন বাংলানিউজকে জানায়, বাবা-মায়ের দোয়া ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সহযোগীতায় এই সফলতা আল্লাহর দান। আমি বড় হয়ে একজন আলেমা হতে চাই।

ফাতেমা খাতুনের মা আঞ্জুয়ারা বেগম জানান, আমার মেয়ে স্থানীয় ভরকুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। এখন জীবননালা আল কারীম তাহফিজুল কুরআন মহিলা মাদরাসায় পড়ে হাফেজা হয়েছে। আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাই। সবাই দোয়া করবেন।

সুমাইয়া খাতুনের মা নারগিস বেগম জানান, আমরা আমাদের মেয়েকে স্থানীয় খান্দুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়িয়েছি। তারপরে জীবননালা আল কারীম তাহফিজুল কুরআন মহিলা মাদরাসায় ভর্তি করে দেই। আমাদের এই ছোট্ট মেয়েটি কোরআনের হাফেজা হয়েছে। মা হিসেবে আমি খুবই খুশি।

সুমাইয়ার বাবা মো. মিরাজ মন্ডল জানান, আমি কৃষক মানুষ। তেমন লেখাপড়া জানিনা। মেয়ে কোরআনের হাফেজা হয়েছে মাত্র ২৭০ দিনে। আমরা সবাই আল্লাহর কাছে দোয়া করি, ওরা যেন ইসলামের পথে খেদমত করতে পারে।

স্থানীয় ৭৭ বছর বয়সী মুরব্বী আব্দুল গাফফার মিয়া জানান, আমার জীবনে আমি অনেককে কোরআনের হাফেজ হতে দেখেছি। তবে অনেকের ৩ থেকে ৪ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। সুমাইয়া ও ফাতেমা মাত্র ২৭০ দিনে পুরো কোরআন হেফজ করেছে।

২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি নূর ইসলাম মিয়া জানান, জীবননালা আল কারীম তাহফিজুল কুরআন মহিলা মাদরাসা কর্তৃপক্ষ তাদের দুই ছাত্রীকে অত্যন্ত যত্ন-সহকারে পড়িয়ে মাত্র ২৭০ দিনে তাদের পবিত্র কোরআনের ৩০ পারা হাফেজা বানিয়েছে। বিষয়টি দেশজুড়ে প্রশংসার দাবিদার। গ্রামবাসী হিসেবে আমরা গর্বিত।

৬০ বছর বয়সী লোকমান মন্ডল জানান, আমরা গ্রামবাসী খুবই আনন্দিত এ বিষয়ে। এখন আধুনিক যুগে অনেক শিশু মোবাইল ফোনে গেম খেলে। ঠিক এমন সময়ে ছোট্ট দুটি মেয়ে ৩০ পারা কোরআন মুখস্ত করেছে। এটা অনেক অধ্যাবসায় ও দুর্দান্ত মেধার পরিচয়।

জীবননালা আল কারীম তাহফিজুল কুরআন মহিলা মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক হাফেজ মুহাম্মাদ শেখ মহিউদ্দিন মানিক বাংলানিউজকে জানান, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে এখানে ৫৩ জন শিক্ষার্থী পড়ছে। আরবী ভাষায় পারদর্শী তিন জন হাফেজা দ্বারা ছাত্রীদের পড়ানো হচ্ছে। ২০২১ সালে মোছা. সুমাইয়া খাতুন ও মোছা. ফাতেমা খাতুন এই মাদরাসায় আদর্শ নূরানী বিভাগে ভর্তি হয়। নূরানী বিভাগ থেকে নাজেরা বিভাগ সম্পন্ন করে মানসম্পন্ন হিফজুল কুরআন বিভাগ শুরু করে। পরবর্তীতে আল্লাহার রহমতে শিক্ষিকা ও ছাত্রীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ৩০ পারা কোরআন সম্পূর্ণ নির্ভুলভাবে মুখস্ত করতে সক্ষম হয়েছে। হিফজ শুরুর পরেই আমরা ফাতেমা ও সুমাইয়ার মধ্যে ভিন্ন প্রতিভা দেখতে পাই। তারা মাত্র ৯ মাসেই (২৭০ দিনে) হিফজ সম্পন্ন করেছে। আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাই।

তিনি আরও জানান, সাধারণত কোরআন মাজিদের ৩০ পারা মুখস্ত করে হাফেজ হতে সময় লাগে ৩ বছর। সেখানে ফাতেমা ও সুমাইয়াদের সময় লেগেছে মাত্র ৯ মাস। ফাতেমা ও সুমাইয়াদের ঐকান্তিক ইচ্ছা, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষিকাদের প্রচেষ্টা ও পরিবারের সহযোগিতায় আল্লাহর অশেষ রহমতে তারা এই মহাপুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। আমি তাদের সার্বিক উন্নতি কামনা করছি। তারা যেন বড় হয়ে ইসলামের খেদমত ও দেশবাসীর সেবা করতে পারে।

উল্লেখ্য, আগামী ২৮ এপ্রিল পাংশা উপজেলার মৌরাটে ইসলামিক মাহফিলে এই দুই কৃতি শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৩
এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।