ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ভক্তদের পদচারণায় মুখর নরসিংদীর বাউল মেলা

সুজন বর্মণ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৩
ভক্তদের পদচারণায় মুখর নরসিংদীর বাউল মেলা বাউল মেলায় ভক্তদের মোমবাতি প্রজ্জ্বলন

নরসিংদী: নরসিংদী শহরের কাউরিয়াপাড়া এলাকার মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষে প্রাচীন শ্রী শ্রী বাউল ঠাকুরের আখড়া ধাম। বাউল সম্প্রদায়ের নিয়ম অনুযায়ী প্রায় ৭০০ বছর ধরে মাঘী পূর্ণিমা তিথিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাউল মেলা।

 

শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হওয়া মেলা চলবে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত ভক্তদের উপস্থিতিতে বাউল ঠাকুরের আঁখড়া পরিণত হয় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব ধর্মাবলম্বীদের মিলনমেলায় । আত্মশুদ্ধি আর আত্মমুক্তির জন্য মেলা থেকে বাউলরা তুলে ধরছেন মানব প্রেমের গান।

বাউল ঠাকুরের আখড়াবাড়ি সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছরই মাঘী পূর্ণিমার দিনে শ্রী চৈতন্য দেবের জন্ম তিথি উপলক্ষে এ মহাযজ্ঞের আয়োজন করা হয়। প্রায় ৭০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ মেলাকে ঘিরে নরসিংদীর কাউরিয়া পাড়া এলাকার মেঘনা নদীর তীরে সমাগম ঘটে হাজারো নারী-পুরুষের। নদীতে চলে পুণ্যস্নান। পাশেই রয়েছে বাউল ঠাকুরের আখড়া। যেখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাউল কণ্ঠসাধকরা এসে বসিয়েছে বাউল গানের আসর। ভক্তরা সারিবদ্ধভাবে মহাযজ্ঞানুষ্ঠানে ঘি-প্রদীপ, মোমবাতি ও আগরবাতি জ্বালিয়ে পূজা দিচ্ছে আর প্রার্থনা করছে পরিবার ও দেশের সব মানুষের কল্যাণসহ যত ধরনের অশুভ শক্তি থেকে নিষ্কৃতি পেতে।

রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বাউল ঠাকুরের আখড়াবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাউল সাধকরা দলবেঁধে মেলায় যোগ দিয়েছেন। আখড়ায় থাকা আটচালা বৈঠক ঘরে চলছে মুন্সীগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, গাজীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কয়েকশত বাউলদের বৈঠক। বাউল সাধকরা এ আসরে বাউল গান গুনিয়েছেন। আত্মশুদ্ধি আর আত্মমুক্তির জন্য এ মেলায় আসেন তারা এবং তুলে ধরেন মানব প্রেমের গান।

বৈঠকে আত্মশুদ্ধি আর আত্মমুক্তির গান গাইছিলেন বাউল অরুন দে। তিনি  বলেন, সব মানবজীবের ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষের বাউল মেলায় সবাই সমবেত হয়। নিজেকে পরিশোধন করার জন্য মানবজীবনে যত গ্লানি আছে তা থেকে মুক্তি লাভের জন্য বাউল ঠাকুরের মানব তথ্যের আরাধনা করা হয়। আমরা শ্রী শ্রী বাউল ঠাকুরের এ মতাদর্শ বংশ পরমপরায় পেয়ে এসেছি। এখানে দেহতত্ত্ব, মহাজনী, মুর্শিদি, ফকিরি, গুরু ভক্তিসহ সব ধরনের সাধনার গান গাওয়া হয়ে থাকে। এ গানের মাধ্যমে মানব জীবনে যত ভুল ভ্রান্তি আছে তা দূর করে পুনরায় যেন মানব জীবন প্রাপ্তি লাভ করতে পারি তার জন্য সাধনা করা হয়।

তিশা বাউল বলেন, বৈঠক ও যজ্ঞের মাধ্যমে আমরা দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করেছি। মানুষ যেন সত্যে চলে, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মধ্যে যেন ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে ঠাকুরের কাছে তর জন্য প্রার্থনা করা হয়েছে।

গাজীপুর থেকে পরিবার নিয়ে বাউল মেলায় এসেছে চন্দন সাহা। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই মেলায় আসি। এবার পরিবার নিয়ে মেলায় এসেছি। মেলায় ধর্মীয় আলোচনা ও গান হয়। যা মনে প্রশান্তি লাগে।

এদিকে  বাউল মেলা উপলক্ষে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা বাঙালির চিরচেনা মুখরোচক খাবার ও বাহারি পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছেন। এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে আমিত্তি, জিলেপি, সন্দেশ, বারো মিঠাই, দই, মুড়ালি, গুড়ের তৈরি মুড়ি ও চিড়ার মোয়া, তিলের মোয়া, তিলের সন্দেশ, কদমা, নারিকেলের নাড়ু, তিলের নাড়ু, খাজা, গজা, নিমকি, মনাক্কা, গাজরের হালুয়া, পিঠাসহ রকমারি খাবার। এছাড়া খেলনা, ঘরের তৈজসপত্র, আসবাবপত্র, বিভিন্ন ধরনের তৈরি পোশাক, মাটি ও বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রসহ নানা ধরনের পণ্যের স্টল নিয়ে বসেছেন।

নরসিংদীর হাজীপুর থেকে ছেলেকে নিয়ে মেলায় এসেছেন পার্থ সাহা। তিনি বলেন, ছেলেকে নিয়ে বাউল ঠাকুরের মেলায় এসেছি। ঠাকুরের কাছে পরিবার ও দেশের মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করেছি। এখন ছেলেকে মেলায় ঘুরাচ্ছি তার পছন্দেও খেলনা কিনে দিচ্ছি। আর বাড়ির সবার জন্য জিলাপি নিয়ে যাচ্ছি।

বাউল আখড়া বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক পিন্টু বাউল বলেন, জগৎব্যাপী মানুষ ও জীবের মঙ্গল কামনায় আমরা মেলায় বাউল ঠাকুরের যজ্ঞ করে থাকি। বাউল মেলায় জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশ ও বিদেশ থেকে বাউলরা অংশগ্রহণ করেছে। তারা তাদের মনোবাসনা পূরণের জন্য ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করেন। আগামী বুধবার ঠাকুরের মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৩
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।