মাদারীপুর: পদ্মার পাড়ে বা পদ্মা সেতু ঘিরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে সেগুলোতে কর্মসংস্থানের আশায় আছেন নদীপাড়ের মানুষ। সেতুটি উদ্বোধনের পর থেকেই তারা স্বপ্ন বুনে আসছেন যে, এখানে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে।
পদ্মা সেতু সংলগ্ন এলাকার একাধিক বাসিন্দা বলেন, আমরা এখনও অন্যের জমিতে কাজ করি। দিনমজুরী খাটি। যা কামাই করি তা দিয়ে সংসার কোনোমতে চলে যায়। পদ্মা সেতু ঘিরে এখানে শিল্পকারখানা গড়ে উঠলে দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। সেগুলোতে কাজের জায়গা তৈরি হবে এ আশায় আছে এখানকার সাধারণ মানুষরা।
স্থানীয়রা জানান, আগে এই এলাকাতে কোনো রাস্তাঘাট ছিল না। চর আর ফসলের ক্ষেত ছিল। থানা সদরে যেতে অনেক দূর্ভোগ পোহাতে হতো। পদ্মা সেতুর ফলে আমাদের গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নত হয়েছে। তবে আর্থিকভাবে যারা দরিদ্র, তাদের নতুন কোনো কর্মসংস্থান হয়নি। আগে লঞ্চ-ফেরিতে হকারি করে আয়-রোজগার করতো। এখন সেটিও বন্ধ। তবে এই পাড়ে শিল্প কারখানা হলে শ্রমিক হিসেবে মানুষের কাজের ব্যবস্থা হতো। গরীব মানুষরা ভালোভাবে উপার্জন করতে পারতেন। তাদের জীবনযাত্রার মান আরও বাড়তো।
সরেজমিনে পদ্মা সেতুর জাজিরা উপজেলার দক্ষিণ থানা সংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ির ব্যস্ততা। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী বাস একের পর এক উঠে যাচ্ছে সেতুতে। আবার ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বাস এসে নামছে সেতু দিয়ে। সড়কের আসে-পাশের গ্রামীণ রাস্তায় নতুন করে কেউ দোকান দিয়েছেন। আবার ঘুরে ঘুরে চা-বিস্কুটসহ বিভিন্ন খাবার বিক্রি করছেন কেউ কেউ। পদ্মা সেতু হওয়ায় সেতু সংলগ্ন গ্রাম ও চর এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে।
এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগ সড়কের পাশে তৈরি হচ্ছে নানা রেস্টুরেন্ট, দোকান। গড়ে উঠেছে একাধিক নতুন বাজার। সেখানে সাপ্তাহিক হাটও বসছে। সেতুর কারণে রাস্তাঘাট হওয়ায় মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নত হয়েছে।
স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানান, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয়ের পথ কমেছে। যারা নদী ও ঘাট কেন্দ্রীক জীবিকা অর্জন করতো, তাদের সেই সুযোগটাও এখন বন্ধ। গ্রামের অনেকেই শীত মৌসুমে বিভিন্ন শাক-সবজি নিয়ে লঞ্চ-ফেরিঘাটে বিক্রি করতেন। এখন সেই সুযোগটাও নেই। সেসব মানুষের বিকল্প আয়ের পথ তৈরি হয়নি এখনও।
স্থানীয় কৃষক মো. হাশেম মিয়া বলেন, সেতু হওয়ায় আমাদের এখানে জমির দাম অনেক বেড়েছে। রাস্তার পাশে অনেকেই আধুনিক রেস্টুরেন্ট তৈরি করেছেন। ধীরে ধীরে উন্নয়ন হবে আশা করি। চর এলাকায় শিল্প কারখানা হলে মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য দূরে যেতে হবে না। এর ফলে আগামী প্রজন্ম লাভবান হবে। তাছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হচ্ছে। অনেক লোকজন বিকেলে এখানে ঘুরতে আসেন। গ্রামের অনেক বেকার যুবকরা ক্ষুদ্র ব্যবসা করছেন। ঘরের সঙ্গেই অনেকে খাবার হোটেল বানাচ্ছেন।
পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা সংলগ্ন এলাকার মো. সামাদ বেপারী বলেন, আমাদের এখানে শিল্পপ্রতিষ্ঠান তৈরি হলে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আমরা এটাই চাই।
কলেজছাত্র মাহবুব জানান, পদ্মা সেতুর ফলে যোগাযোগের নতুন মাত্রা তৈরি হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সরাসরি ঢাকার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটছে। এতে করে এই অঞ্চলের উন্নয়নও হবে।
পদ্মা সেতুর দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সেতুর দক্ষিণ পাড়ে থানা হওয়ায় এই এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো আছে। সেতুর কারণে এখানের আশেপাশের চর এলাকার মানুষ আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়েছেন। দ্রুত এই এলাকা আরও উন্নত হবে। সেতু ছাড়াও প্রতিটি গ্রামেই পাকা সড়ক হওয়ায় এখন যোগাযোগব্যবস্থা অনেক সহজ হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৩
এফআর